somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধুর জন্য চিঠি

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমুদ্র শহরের কিনার থেকে আমি নুপা আলম,
আজ আট আশ্বিন চৌদ্দ শ বারো।

প্রিয়, শরৎকালিন প্রশান্তির বিকেলে একজন ডাক দিয়ে বলেছিল “প্রাণের বন্ধু, একটা পত্রও কি হবে না আমার জন্য”। পেছনে ফিরতে তার চোখ জুড়ে আকাশ অথবা মেঘের চিহ্ন দৃশ্যমান হয়। আমি বুঝতে পারিনি ওই চোখে কেবল প্রলোভন; মোহের ব্যস্ততা। আমি তো অনিরাপদ স্রোত, আমি তো চাই নি কেউ আমাকে বন্ধু ডাকুক ? ক্যাকটাসের আবার কি বন্ধু থাকতে পারে? তাই সেইদিন মনে মনে বলেছিলাম “অনিরাপদ বন্ধুর কাছে চিঠি পাওয়ার কি এমন প্রলোভন তোমাকে ব্যস্ত করলো। তাহলে তুমি গিয়ে ফের আটকে যেতে চাও নতুন কোন মোহে। তবে আর কি থাকবে বাকি তোমার কাছে?”

সময়টা পাল্টে গেছে, মুঠোফোন, ফেইস বুক থাকতে পত্র লেখাটা কতটুকু বেমানান ও হাস্যকর। তবু দেরীতে হলেও পত্রটি লেখতে হচ্ছে। এটা অবুঝ সময়ের দাবিও বলতে পারো। এ অসময়ে তুমি পথের সীমারেখায় এঁকে দিতে পারো সকল প্রতিবন্ধকতার প্রত্যয়, নীরব জোসনাকে নিতে পারো প্রেমিক রূপে। সৌরভ রেখে দিয়ে জল ও পাখিদের কাকলি নিতে পারো। ফুলও ভুলে গিয়ে রোদকে আঁকড়ে নিতে পারো তোমার মতো। তবে আর কোন মিছিল আর শ্লোগানে নয় কেবল গানে গানে তোমার সকল প্রতিবাদ ও ভালোসাবার প্রগাঢ় প্রয়াস শুনতে চাই। বিদ্রোহ থাকলে কাঁন্নাকে চোখের খুব কাছা-কাছি দেখতে চাই। যতটুকু আপন হলে আপন মনে হয় না কিছুই। আমি জানি তুমি তার কিছুই পারবে না। এটা মানুষের পক্ষে সম্ভবও নয়। তোমার কাছে কেবল অভিমান- কেবল অনুরাগ। আমার তো পুরিয়েছে সকল অভিমান ও অনুরাগ প্রাপ্তি, আমি তো আর কারো নিরাপদ সহযাত্রী নই।

বন্ধু বলে ডেকেছিলে বলে তুমি আমার প্রিয়। তাই প্রিয় তোমাকে বলি আমি অনেকবার নিরাপদ হতে চেয়েছিলাম। শুধু কেবল নিজের কাছে নিজেই নিরাপদ হতে চাওয়ার ব্যর্থ গল্প জমা হয়েছে। কোন এক বৃষ্টির দুপুরে আমি চেয়েছিলাম বৃষ্টি হবো; কেবল আমি আমাকে ভেজাতে ভেজাতে সৌরভ আঁকড়ে নেবো আমার জন্য। কাঁশবনের উল্টো পথে হেঁটে যাবো প্রিয় বালিকার আঙ্গিনায়, নৌকায় মাঝি হয়ে হারিয়ে যাব দূর কোন সভ্যতার কিনারে-নদীর উৎস মুখে। ওখানে প্রেমিকার সান্নিধ্যে প্রেমিক হবো, ঠোঁট থেকে আবিষ্কার করবো পূর্ণিমার ঢেউ। কিছু হতে পারিনি। একবার সমুদ্রও হতে চেয়েছিলাম গভীর রাতে, রাতের অশ্লীল মোহ ফিরিয়ে দিয়েছিলো, বলেছিলো “বোকার স্বর্গ রাজ্যে বসত করো না, ক্রমাগত জল্লাস হবে”।

আমি আমার কাছে নিরাপদ হতে চেয়ে আরো কি কি যেন হতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম কত কি? কিছুই আর হতে পারিনি বন্ধু। পাথর হতে চেয়েছিলাম, অন্ধকার হতে চেয়েছিলাম, চেয়েছিলাম “সিরাজ” পাগলের মতো বসে থাকতে কোন এক বৃক্ষের কিনারে। প্রতিদিন তোমার পায়ের শব্দ অভিবাদন শুনতাম আর সিরাজের মতো বলতাম “অপদার্থ আমি”। আমি তো আমার কাছে নিরাপদ হতে পারিনি। পারিনি দিগন্তের সেই বিকেলের প্রলোভন এড়াতে।

প্রলোভনের কাছা-কাছি অনিরাপদে আছি বন্ধু। যান্ত্রিক নিয়ম-রুটিন সবটাই মুগ্ধ হওয়ার মতো। তাই বলে নিকটে এসো না আর, দূরত্বের কাছা-কাছি দাঁড়িয়ে তুমি নিরাপদ থাকো। এর চেয়ে বেশি কাছা-কাছি এলে জ্বলে যাবে-পুড়ে যাব, তোমার প্রশান্তির আকাশ জুড়ে কালো মেঘ উড়ে আসবে। সাইক্লোন তাণ্ডবে ছাই হয়ে যাবে মহাবিশ্বের প্রতিটি গ্রহ-উপগ্রহ। তা চেয়ে বরং তুমি নিরাপদ থাকো, দূরে যাও-অনেক দূরে। তুমি হয়ে যাও যা হতে চেয়েছিল। সমতার বিশ্বাসে চাঁদ হও, পূর্ণিমার বল্টন হোক সমান ভাগে। প্রেমিক হও, ভালোবাসা প্রসারিত হোক বিশ্ববাসির কাছে। বিশ্বের সকল মানুষের প্রেমিকার অভিবাদন গ্রহণ করো, নিরাপদ থাকো। তুমি হয়ে যাও, তোমার আকাশ। আমি অভিবাদন জানাবো সেই প্রতারককে যে লুট করেছিল একদিন আমার স্বপ্ন ও সম্ভাবনা। মধ্য রাতে অবিশ্বাসের হাত ধরে তুমি ছুটে গিয়েছিলে দূরে, লুট হয়েছিল তোমার যাপিত অর্জন। ওই দিনও আমি নিরাপদ ছিলাম না তোমার কাছে।

সময়ের ক্রান্তিকাল, পুরিয়েছে সময়। এখন আর কতটুকু নিরাপদ আমি? এমন প্রশ্ন না রাখাই ভালো। বলতে পারো লম্পট্যের ছোবলে নীল হয়ে গেছে মন। নিলামে বিক্রি করে দিয়েছি মানবিক বোধ ও বিশ্বাসের সকল গোপন খতিয়ান। লুকিয়ে নই; অনেকটা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে পারি- সকল প্রাপ্তির চাওয়া পাওয়া মিলে গেছে বন্ধু। গণিত নিয়মে ফলাফল শূন্য হলে যাত্রার পথ কতটুকু বাকি থাকে কি করে বলি। কি করে বলবো আমার কাছে নিরাপদ তুমি, প্রশান্তি পাবে।

বন্ধু তবু তোমার চোখের কোণে দৃশ্যমান মেঘ চাই, তোমার আকাশ জুড়ে হেমন্ত চাই। চাই শব্দহীন বুকের আকুতি, স্বচ্ছল প্রেম। তোমার ঠোঁটের র্নিলোভ হাসি চাই, পুরানো স্বপ্ন-সম্ভাবনা চাই। হাতের কোমলতা ও একটি বিকেল চাই। প্রাপ্তি রেখে দিয়ে নিরাপদ তোমাকে চাই। ঘোষণা চাই ঘোষণা “দূরে যাও দূরে- আরো বেশি দূরে-খুব বেশি দূরে। যতটুকু দূরে গেলে নিরাপদ তোমাকে পাই ততটুকু দূরে।” এর বেশি চাওয়ার অধিকার তোমার বন্ধুটির আছে বলে মনে হয় না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×