somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়(প্রতিষ্ঠার কথা)

২৯ শে এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজশাহী ছিলো প্রাচীন বরেন্দ্রভূমির প্রাণকেন্দ্র৷ ইতিহাসের অনেক রাজশক্তির উত্থান পতনের স্বাক্ষী এই বরেন্দ্র ভূমি৷ এখন থেকে কয়েক হাজার বছর আগে পাল আমলে এই বরেন্দ্র অঞ্চলেরই নওগা জেলার পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ জ্ঞান বিজ্ঞান ও ধর্মশাস্ত্র চর্চার প্রসিদ্ধ স্থান হিসেবে স্বীকৃত ছিলো এই বৌদ্ধবিহার৷ সে সময়ে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পেয়েছিল৷ বিশ্বের নানা দেশ থেকে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার জন্য এখানে আসত শিক্ষর্থীরা৷ কালের গহ্বরে আস্তে আস্তে নিজের গৌরব হারাতে থাকে বরেন্দ্রভূমি৷ পিছিয়ে পড়তে থাকে ক্রমশ৷ এক সময়ের সমৃদ্ধশালী বরেন্দ্র ভূমি পরিনত হয় শিক্ষাদীক্ষা অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে৷

ব্রিটিশ যুগে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষাদীক্ষা উন্নয়নের জন্য ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয রাজশাহী কলেজ৷ রাজশাহী কলেজের অবস্থানও ছিলো বেশ ওপরে৷ কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের পরই রাজশাহী কলেজের স্থান ধরা হতো৷সে সময়ে রাজশাহী কলেজে আইন বিভাগসহ পোস্ট গ্রাজুয়েট শ্রেনী চালু করা হয়৷ কিন্ত এর কিছুদিন পরেই বন্ধ হয়ে যায় এসব কার্যক্রম৷ সে সময়েই রাজশাহীতে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজন অনুভূত হয়৷ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান সরকার দেশের সব কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে৷ রাজশাহীতে এ সময় স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়৷
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মরনে নির্মিত ভাষ্কর্য ’সাবাস বাংলাদেশ’


ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন আগ থেকেই রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বেশ জোরে শোরেই শুরু হয়৷ ১৯৫০ সালের নভেম্বর ১৫ রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের নিয়ে ৬৪সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়৷ ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি ১০ রাজশাহী শহরের ভূবন মোহন পার্কে রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য সর্বপ্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রথম দাবি অবশ্য ওঠে রাজশাহী কলেজেই৷ ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শহরের সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজ প্রাঙ্গনে সমবেত হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাস করার দাবি তোলে৷ এই দাবি পাঠিয়ে দেয়া হয় তত্‍কালীন এমএলএ ও মন্ত্রীদের কাছে৷
কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ভবন

পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারি ১৩ ভূবন মোহন পার্কেই অনুষ্ঠিত হয় আরও একটি জনসভা৷ ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ এমএলএ৷ সভায় বক্তব্য রাখেন ইদ্রিস আহমেদ এমএলএ, প্রভাষ চন্দ্র লাহিড়ী, খোরশেদ আলম, আনসার আলী, আব্দুল জব্বার প্রমূখ৷ ক্রমেই তীব্র হতে থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি৷ এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ ছাত্রনেতা৷ পরে ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে ঢাকায় একটি ডেলিগেশন পাঠানো হয়৷ ওই ডেলিগেশনের সদস্যদের মধ্যে মরহুম আবুল কালাম চৌধুরী ও আব্দুর রহমানের নাম উল্লেখযোগ্য৷ এভাবে একের পর এক আন্দালনের চাপে স্থানীয় আইন পরিষদ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়৷ এই আন্দোলনে একাত্ব হন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখশ৷


১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারি ৬ ভূবন মোহন পার্কে আরও একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাদারবখশ সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, যদি রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না হয় তবে উত্তরবঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে আমরা বাধ্য হব৷ মাদার বখশের এই বক্তব্যে সাড়া পড়ে দেশের সুধী মহলে৷ টনক নড়ে সরকারেরও৷ অবশেষে ১৯৫৩ সালের মার্চ ৩১ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাশ হয়৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন মাদারবখশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকে সঙ্গে নিয়ে৷ এ দুজনকে যুগ্ম সম্পাদক করে মোট ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়৷ এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তত্‍কালীন বিভাগীয় কমিশনার এম এ খুরশীদ৷

আনুষ্ঠানিকভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫৪ সাল থেকে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজে৷ উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দফতর প্রতিষ্ঠা করা হয় পদ্মার তীরের বড়কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক রেশম কুঠির ওপর তলায়৷ বড়কুঠির কাছেই তত্‍কালীন ভোলানাথ বিশ্বেশ্বর হিন্দু একাডেমিতে চিকিত্‍সাকেন্দ্র ও পাঠাগার তেরি করা হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীহ্মা নিয়ন্ত্রকের দফতর স্থাপন করা হয় জমিদার কুঞ্জমোহন মৈত্রের বাড়িতে৷ বড়কুঠিপাড়ার মাতৃধাম এ স্থাপন করা হয় কলেজ পরিদর্শক দফতর৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন ওসমান গনি ও প্রথম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিযুক্ত হন অধ্য আব্দুল করিম৷ শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাড়া করা বাড়িতে গড়ে ওঠে ছাত্রাবাস৷ রাজশাহী কলেজ সংলগ্ন ফুলার হোস্টেলকে রুপান্তরিত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস হিসেবে৷ বড়কুঠি এলাকার লালকুঠি ভবন ও আরেকটি ভাড়া করা ভবনে ছাত্রী নিবাস স্থাপন করা হয়৷

১৯৬১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় মতিহারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে৷ এই ক্যাম্পাসটি গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায়৷ দক্ষিণ দিক দিয়ে ছুটে চলেছে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক, উত্তরের রেললাইনের মাঝে ছায়া ঢাকা সবুজ শ্যামলে ঘেরা এই ক্যাম্পাস৷

++উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×