বেগম জিয়াকে একটি মামলায় ৫ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত ১০ বছরের সাজা হয়েছিল পরে বয়সের কথা বিবেচনা করে ৫ বছর করা হয়েছে। তার বড় ছেলে তারেক জিয়াকে ১০বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে তবে তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে। যে মামলায় বেগম জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে এই মামলা কেন? অন্য কোন মামলা নয় কেন? আসলে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা থেকে এই মামলার এভিডেন্স গুলি শক্ত এবং এই মামলায় সাজা হলে তার জন্য অধিক অপমানজনক হবে। তবে এগুলিও কারন নয়, মূলকথা হচ্ছে তাকে জেলে নেওয়ার উদ্দেশ্য ছিলো তাকে পার্টি থেকে দূরে রাখা, রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করা। আসলে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করা ছাড়া বিকল্প আর ভালো কিছু হাতে নেই। কেননা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতি এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। গণতন্ত্রের নামে কেউ যদি স্বৈরাতন্ত্র কায়েম করতে চায় তাহলে তার পরিণতি শেষ পর্যন্ত ভালো হয় না, আর আওমীলীগও এই ভয়ে ভীত। তাই তারাও চায় দেশে একটা শক্তিশালী বিরোধীদল থাকুক।
কেননা দেশে যদি গনতন্ত্র না থাকে তাহলে পশ্চিমা দেশগুলো সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।
শেখ হাসিনার যেটা সবচেয়ে বড় এডভান্টেজ সেটা হচ্ছে বিএনপির সাথে আছে জামাত আর আওমীলীগের সাথে হেফাজত। তবে হেফাজত কিন্তু তাদের রাজনৈতিক দোসর নয়। হেফাজত সামাজিক ভাবে এত মার খাওয়ার পরেও আওমীলীগকে সাপোর্ট দিবে। তারা যেহেতু কোন রাজনৈতিক দল নয় এবং আওমীলীগের সাথে কোন মোর্চা নেই তাই এদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল চিন্তিত নয়। অপরদিকে জামাতের সাথে বিএনপির রাজনৈতিক মোর্চা আছে এবং এরা ক্ষমতায় আসুক পশ্চিমা বিশ্ব কিছুতেই চায় না, ভারত তো নয়ই।
এখন কথা হচ্ছে এই অবস্থা থেকে কিভাবে জামাতকে সরানো যায়? এটা স্পষ্ট যে বিএনপিতে জামাতের সবচেয়ে বড় শক্তি বেগম জিয়া। এই জামাতের সাথে এলায়েইন্স করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বা ব্যক্তিত্ব বেগম জিয়া।
একটা সময় তারেক জিয়াও জামাতের সাথে এলায়েন্সের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। পরে অবশ্য সেটাকে ক্লেরিফিকশন করে একটা কম্প্রোমাইজিং স্টেজে নিয়ে এনেছে সে। বেগম জিয়ার জন্য জামাতকে কোনভাবে জোট থেকে সরানো যাচ্ছিলো না এবং এই জামাতের কারনে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা দলে মূল্যায়ন পাচ্ছিলো না। বিএনপির ফাউন্ডার সেক্রেটারি বদরুদ্দৌজ চৌধুরী একবার বলেছিলেন "একসময় বিএনপি ছিলো মুক্তিযোদ্ধা নির্ভর দল এখন এটা হয়ে গেছে জামাত নির্ভর খালেদা জিয়ার দল"। এই জামাতের কারনে দলের অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ নেতার আস্থা হারিয়েছেন বেগম জিয়া, এমনকি সেনাবাহিনীর থেকে সুবিধা আদায়ে যেসকল নেতা ভূমিকা রাখতো তারাও নিষ্ক্রয় হয়ে আছে। কর্নেল ওলি তাদেরই একজন। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে এই জামাতের জন্য বিএনপির ইন্টারন্যাশনাল লবিং কাজ করছে না, পশ্চিমা রাজনীতিবিদগন তাদের ভালো চোখে দেখছে না! এইসকল কারনে দলের সিনিয়র নেতারাও চেয়েছেন বেগম জিয়া এমন অবস্থায় পতিত হোক। জামাতের সাথে এলায়েন্স ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য বেগম জিয়াকে নির্বাসিত করা ছাড়া বিকল্প কিছু ছিলো না।
বিশ্ব রাজনীতিতে এমনকি উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ গুলোতেও নতুন রাজনৈতিক দল কিংবা মোর্চা তৈরিতে দেশের সিক্রেট সার্ভিস এজেন্সি গুলি ব্যাপক ভূমিকা রাখে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বেগম জিয়ার জেলে যাওয়া আমাদের সিক্রেট সার্ভিস এনএসআই,ডিজিএফিআই এর একটা পরিকল্পনা। আমরা অচিরেই দেখবো জামাত বিহীন বিএনপির নতুন এক মোর্চা, তারেক জিয়ার কর্তৃত্ব খর্ব এবং বিএনপির সিনিয়র নেতাদের আবার লাইমলাইটে আসা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:১৯