আমাদের এই উপমহাদেশ বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে বারবার হঁচোট খেয়েছে। এই বিশাল আয়তনের সাম্রাজ্য হতে পারতো পুরো বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী এক দেশ!
ধর্মের ভিত্তিতে এই ভারতীয় উপমহাদেশকে টুকরো টুকরো করার কৌশলে আমি ঘোর বিরোধী। কিন্তু ব্রিটিশরা ধর্মের ইস্যুটিকে সামনে দাঁড় করিয়েই এই উপমহাদেশকে ভাগ করে দিয়েছে সেই ১৯৪৭ সালে। জিন্নাহ, নেহেরু, শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী তাদের আলোচনা, লাহোর প্রস্তাব, গোলটেবিল বৈঠক এগুলো থেকে বুঝা যায় আসলে তারা অটোনমাস এরিয়া চেয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের ব্যক্তিগত কোন্দল, সমঝোতার অভাব আর একরোখা মনোভাবের কারনেই সেটা সম্ভবপর হয়নি। আর এই সুযোগটিই নিয়েছে মাউন্ট ব্যাটন! সে ভাগ করে দিয়ে যাওয়ার সময় কাশ্মীর ইস্যু, পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিম পাকিস্তান এমন বিরোধপূর্ন অবস্থা রেখে দিয়েছে যেন তারা একে অপরের সাথে কামড়াকামড়ি করে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে যার ফলে ভারতীয় উপমহাদেশ দুর্বল হয়ে থাকে!ভূ-কৌশলগত দিক থেকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং রাজনৈতিকভাবে সবচাইতে শক্তিশালী বাংলাকে তারা দুই ভাগ করে দুইটি দেশের কাছে দিয়ে দেয়। শুধু তা-ই নয়, এমন এক পদ্ধতি তারা করে দিয়ে যায়, যাতে দু’টি দেশের মাঝে শত বৈরিতা সত্ত্বেও একটি বিষয়ে যেন একাত্বতা থাকে যে, বাংলাকে কখনোই এক হতে দেয়া যাবে না। আর সে পদ্ধতিতা হচ্ছে ধর্মীয় পরিচয় আলাদা করে দিয়ে যাওয়া! পরাশক্তিদের নীতি অনুসরণ করে ১৯৪৭ পরবর্তী উভয় দেশই বাংলার মানুষের শক্তিকে খর্ব করেছিল, যদিও ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রায় পুরো রাজনৈতিক কর্মকান্ডই ছিল বাংলা-কেন্দ্রিক। ১৯০৯ সাল পর্যন্ত কোলকাতাই ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমানের মতো রাজনীতিকদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ে উঠেছিল কোলকাতায়। মাউন্ট ব্যাটেনের সেই উদ্দেশ্য ও ব্রিটিশ নীতি এখনো চরিতার্থ হয়ে যাচ্ছে!
এই উপমহাদেশ বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগুতে গিয়েও পিছিয়ে পড়ছে। নিজেদের অন্তঃকলহ আর ধর্ম নিয়ে অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের কারনে তারা এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সবার চেয়ে পাকিস্তানই বেশি সমস্যাগ্রস্থ হয়ে আছে। পাকিস্তানের মত বাংলাদেশ আর ভারতের মধ্যও মুসলিম মৌলবাদ যথেষ্ট বেড়েছে পাশাপাশি হিন্দু প্যানিটিজমও বাড়ছে! হিন্দুদের এক্সপ্লয়েট করার জন্য মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার ওয়াজীরা যেমন উগ্র কথাবার্তা বলে ঠিক হিন্দু অধ্যুষিত কট্টরবাদীরাও মুসলিম সমাজকে এক্সপ্লয়েট করতে নানা গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই বিষয় গুলি আমাদের এই উপমহাদেশকে টেনে পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ধর্মগুলো আমাদের নিজেদের উন্নতি আর সম্প্রীতিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে!
তারপরেও আশারকথা হচ্ছে শিক্ষার প্রসারের সাথে সাথে অনেক উচ্চ মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ তৈরি হচ্ছে এবং মনে করি এই উপমহাদেশ আবার একত্রীকৃত হবে নিজেদের প্রয়োজনেই।