এই ঈদের আগে আমার এক মালোশিয়া প্রবাসী বন্ধুর সাথে ফোনে অনেকক্ষণ কথা বলেছিলাম। বাল্যবন্ধু, সাত বছর ধরে মালোশিয়ায় আছে, কথা শুরু করলে থামতে চায় না, বলতেই থাকে। বন্ধুর কাজ কামের অবস্থা খুব একটা ভালো না। গত একবছর ধরে বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি হারিয়েছে তারপরেও পালিয়ে,লুকিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাকে বললাম কাজ কাম কেমন চলছে? সে বলল বড় বিপদ বন্ধু। আমি বললাম কাজ নাই বুঝি? বন্ধু বলে কাজ আছে তবে গত পনের দিন আগে সে দুই তিন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেখানের মালিক তাকে বলে এখানে তুই কাজ করতে আসছিস কেনো, তোদের দেশ তো অনেক উন্নতি করেছে, তোদের সরকারও বলতাছে তোদের দেশে নাকি কাজের অভাব নাই। ১০লাখ রোহিঙ্গাদের নাকি খাওয়াতে সমস্যা হচ্ছে না! তোদের কাজ করার জন্য এদেশে আসা লাগে নাকি এখন আর!
তার সাথে কথা বলা শেষ হওয়ার পর ভাবলাম আসলেই সরকার তার উন্নয়নের প্রচার দেশ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে যেভাবে প্রচার করছে তাতে প্রবাসী কর্মজীবীদের এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
সরকার দেশে অনেক বড়বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে, কিছু শেষ করেছে, কিছু শেষ হওয়ার পথে আবার কিছু বন্ধ হয়েও আছে। তবে দেশে টেকসই ও সুষম উন্নয়ন বলতে যা বুঝায় তা কিন্তু হচ্ছে না। সরকারী প্রকল্প গুলিতে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে! মুষ্টিমেয় কিছু লোক এসব বড় বড় কাজ গুলিতে ইনভেস্ট করে মিলিনিয়োর থেকে বিলিনিয়োর হচ্ছে! শুধু দেশে না, বিদেশেও প্রভাবশালী, সম্পদশালী হিসেবে তাদের নাম উঠে এসেছে!
জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বাড়ছে প্রতিবছরই অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে পতিত হচ্ছে। শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে অনেকেই। কেউ পুরোপুরি না পালিয়ে নিজের পরিবার রেখে আসছে গ্রামের বাড়িতে কারণ পরিবার নিয়ে তারা শহরে থাকার সামর্থ্য দিন দিন হারিয়ে ফেলছে। আশেপাশে তাকালে বুঝা যায় এই সংখ্যাটা নেহায়েৎ কম নয়!
বিভিন্ন পণ্য,সেবার উপর সরকার ভ্যাট,টেক্স বাড়িয়েছে। সেগুলি নিয়ে বড় বড় কাজে হাত দিচ্ছে সরকার, কিন্তু এই কাজগুলি ঘুরেফিরে সেসব লোকদের হাতেই যায় যারা সরকারের কাছাকাছি থাকে এবং ইতিমধ্যে সরকারী কাজ করে ডলারে বিলিনিয়োর হয়ে গেছে! এসব মেগা প্রজেক্টে সরকার যদি সাধারণ পাবলিককে বিনিয়োগ করার সুযোগ করে দিতো তাহলে নগদ অর্থের সুষম লেনদেন বাড়তো এবং সাধারণ মানুষের বিনিয়োগের পরিধি বৃদ্ধি পেতো। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন আরো মজবুত হতো।
ছবি:ফেইসবুক।