বিচারপতি এস কে সিনহা যে বইটি লিখেছেন সেই বই সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে তার কিছু অংশ অনলাইন এসেছে। উনি যা লিখেছেন তাতে বলা যায় এর মাধ্যমে তিনি মোটামুটি আওয়ামী লীগ সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন। তবে যেটা সত্যি কথা তা হলো, উনার বইয়ের যে অংশ প্রকাশ হয়েছে বা আলোচিত হচ্ছে তাতে উনি ভুল কিছু লিখেননি। আপনি যদি উনার নিয়োগ, ষোড়শ সংশদনী রায়, উনার ছুটি, দেশ ত্যাগ, পদত্যাগ এবং উনার বই প্রকাশ দেখেন তাহলে বিষয়টি খুবই পরিষ্কার হয়ে ধরা দিবে আপনার মগজে।
উনার রায়ে অনেক মূল্যবান কথা ছিলো, সরকারের পক্ষে যায় এমন বিষয়ও ছিলো তবে সেগুলো নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। উনি চেয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা আবারও জাতীয় সংসদ থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরিয়ে দিতে।
আমাদের সংবিদান প্রণেতা কামাল সাহেবও কিন্তু উনার এই রায়ের পক্ষে ছিলেন। তবে মজার ব্যাপার বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে উনি উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই রেখেছিলেন। ৭৫এ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে সেটা রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারপর অবশ্য জিয়াউর রহমানও ক্ষমতায় গিয়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধন এনে বিচারক অপসারণের বিষয় নিষ্পত্তির ভার দিতে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করেছিলো। তবে সমাধানে আসতে পারেনি। ষোড়শ সংশধনীর রায়ে কিন্তু সংবিধানের এই পঞ্চম সংশোধন ও জিয়াউর রহমানকে অবৈধ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০০৮এ যখন আওমীলীগ ক্ষমতায় আসে তখন তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা। এটা তাদের জন্য জরুরিও ছিলো, কারণ তাদের ইশতেহারে আরেকটি বড় বিষয় ছিলো মানবতাপরাধীদের বিচার। তারা সে বিচার গুলো মোটামুটি সফল ভাবেই শেষ করেছে। তাই বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা আবারো সংসদের হাতে আনার জন্য বিল পাশ করেছে। আর এই বিলটিকেই বিচারপতি এসকে সিনহা অবৈধ ঘোষণা করে একটি সঠিক রায় দেয়েছেন।তার এই যুগান্তকারী রায়টির কারণেই তাকে এতসব হেনস্তার স্বীকার হতে হয়েছে, এখনো হয়ে যাচ্ছেন।
উনি নাকি দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং, নৈতিক স্খলনের মত অপরাধের সাথে জড়িত! এখন কথা হচ্ছে এতসব অপরাধ নিয়ে একজন লোককে প্রধান বিচারপতির পদে যারা বসিয়ে ছিলো তাদের দায়ভার কতটুকু! নাকি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর উনি এসব অপরাধ করেছেন? যদি পরে করে থাকেন তাহলে কি ষোড়শ সংশধনী রায়ের আগে করেছে, নাকি পরে?
আজ যারা উনাকে নিয়ে হাস্যরসাত্মক কথা বলছেন, কাদের সাহেব, আমু, ইনু, তোফায়েল সাহেব, উনারা কি রাষ্ট্রনীতি, বিচারবিভাগ, সুপ্রিম জুডিশিয়াল এগুলি সম্পর্কে উনার থেকে বেশি জ্ঞান রাখেন?
এসকে সিনহার এই রায়টি ছিলো জাতির জন্য অনেক ভালো পদক্ষেপের একটি পদক্ষেপ। দুষ্ঠ রাজনীতিবিদদের কারণে জাতির জন্য নেওয়া একটি ভালো পদক্ষেপ থমকে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৩