somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিংশ শতাব্দীর সুবিখ্যাত স্পেনীয় চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর পাবলো পিকাসোর ১৩৩তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিংশ শতাব্দীর বরেণ্য স্পেনীয় চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর পাবলো পিকাসো। এ শতাব্দীর শিল্পকলার সঙ্গে তার নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। তাকে বিশ শতকের মহত্তম শিল্পী বলে অভিহিত করা হয়। শিল্পের বিচিত্র সব মাধ্যমে তিনি সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে বিশ্বের চারুকলাকে সমৃদ্ধ করেছেন। যদি জানতে চাওয়া হয়, বিশ্বে চিত্রশিল্পের সবচেয়ে আবেদনময়ী সৃষ্টিকর্ম কোনটি? এর জবাবে প্রথমেই যে সৃষ্টির কথা চোখে ভেসে ওঠে, তার নাম গ্যোয়ের্নিকা। জার্মানদের বোমা বর্ষণে স্পেনের বিদ্ধস্ত গ্রাম গ্যার্নিকা’র দুঃখ্-দুর্দশা ও বেদনার এক গভীর প্রতিফলন গ্যোয়ের্নিকা৷ বিংশ শতাব্দীর বিশাল ক্যানভাসে কিউবিক ফর্মে সাদা-কালো ও কোলাজে আঁকা যুদ্ধ বিরোধী এক অসাধারণ ছবি৷ পিকাসোর লা ভি, ওল্ড গিটারিস্ট, থ্রিমিউজিশিয়ানসসহ আরো কয়েকটি ভুবনবিখ্যাত চিত্রকর্ম রয়েছে। তাঁর আরেকটি মহৎ কীর্তি বিশ্বশান্তির প্রতীক শ্বেত কপোত। কিন্তু গ্যোয়ের্নিকা ছাপিয়ে গিয়েছে সবকিছু। মানুষের ওপর অন্যায়, নীপিড়নের এমন আবেদন সৃষ্টিকারী চিত্রকর্ম বুঝি আর একটিও নেই। পাবলো পিকাসো ১৯৭৩ সালের আজকের দিনে ফ্রান্সের সগিন্সে পরলোকগমন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছবি এঁকেছেন, সব সময় বলতেন, ‘চিত্রকলার অনেককিছুই শেখা হলো না৷’ বিখ্যাত স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর পাবলো পিকাসোর আজ ১৩৩তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৮১ সালের আজকের দিনে স্পেনের মালাগায় জন্মগ্রহণ করেন পাবলো পিকাসো। আধুনিক শিল্পকলার মহিরুহ বরেণ্য চিত্রশিল্পী পিকাসোর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।


পাবলো পিকাসো ১৮৮১ সালের ২৫ অক্টোবর স্পেনের মালাগায় জন্মগ্রহণ করেন। পিকাসোর পুরো নাম পাবলো দিয়াগো হোসে ফ্রান্সিসকো ডি পওলা জোয়ান নেপোমেসিনো মারিয়া ডি লস রেমেডিওস সিপ্রিয়ানো ডি লা সান্টিসিমা ত্রিনিদাদ রউস ই পিকাসো। তার বাবার নাম ডন জোসে রুইজি বস্নাসকো এবং মায়ের নাম মারিয়া পিকাসো লোপেজ। তার নামের শেষাংশ তার মায়ের নামের মধ্যাংশ থেকেই নেয়া। পিকাসোর পিতা ছিলেন বার্সেলোনার চারুকলা বিদ্যালয়ের অধ্যাপক। পিকাসোর শিল্পী হওয়ার পেছনে তার বাবার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। কারণ পিকাসোর বাবাও একজন চিত্রকর ছিলেন। অল্প বয়স থেকেই অঙ্কনের প্রতি পিকাসোর এক ধরনের ঝোঁক ছিল। আর ফিগার ড্রইং এবং তৈলচিত্রের আনুষ্ঠানিক হাতেখড়ি তার বাবার কাছেই। ছবি আঁকা শুরুর কয়েক বছরের মধ্যে এমন সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠেন বয়স ১৩ হতে না হতেই বাবাকেও ছাড়িয়ে যান৷ ছেলের প্রতিভায় বিস্মিত হয়ে ছবি আঁকাই ছেড়ে দেন বাবা এবং নিজের সব রং, তুলি দিয়ে দেন ছেলেকে। পিকাসো ১৪ বছর বয়সে ১৮৯৫ সালে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষায় পাস করেন। এর দুই বছর পর তিনি মাদ্রিদে যান রয়াল একাডেমিতে পড়াশোনা করতে।


১৯ বছর বয়সে ছবি এঁকে তিনি প্রথম শিল্প সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন পিকাসো। ১৯০৪ সালে মাদ্রিদের পড়াশোনা শেষে পিকাসো স্থায়ীভাবে প্যারিসে চলে আসেন এবং আমৃত্যু তার শিল্প সাধনার ক্ষেত্র হয়ে ওঠে প্যারিস নগরী। এখানে তিনি বন্ধু ম্যাক্স জ্যাকবের সহায়তায় ভাষা এবং সাহিত্যের ওপর দখল নেন। প্যারিসে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে তিনি বিত্তের মুখ দেখেছিলেন তা নয়। চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধার সঙ্গে অবিরাম লড়াই করে ধাপে ধাপে তিনি শিল্পী হিসেবে খ্যাতি ও সুখের মুখ দেখেছিলেন। চিত্রকর হিসেবে পিকাসোর জীবন বেশ কয়েকটি অধ্যায়ে বিভক্ত। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ব্লু পিরিয়ড’, প্রথম মহাযুদ্ধ ও তার অন্তর্বর্তীকাল ‘রোজ পিরিয়ড’, ‘নিগ্রো পিরিয়ড’, ‘কিউবিস্ট পিরিয়ড’। কিউবিস্ট ধারার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিখ্যাত পিকাসোর শিল্পকর্ম বৈচিত্র্যের জন্যও সমাদৃত। শৈশব এবং কৈশোরে রিয়ালিস্টিক ধারায়ও অতিপ্রাকৃতিক শৈল্পিক মেধার পরিচয় দিয়েছিলেন পিকাসো। তবে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে তিনি বিভিন্ন শিল্প তত্ত্ব, কৌশল এবং ধারণার মুখোমুখি হন। নিয়ত রূপান্তরশীল শিল্পী হিসেবে পিকাসো উল্লিখিত পর্বে বিভক্ত সময়সীমার মধ্যেও তার পরবর্তীকালে আরো বহুবিধ শিল্পনীতি নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যাপৃত থেকেছেন। বাস্তববাদী অঙ্কনরীতি যেমন তার হাতে নতুন মাত্রা পেয়েছে, তেমনি পরাবাস্তববাদী শিল্পরীতিও সমৃদ্ধ হয়েছে তার প্রতিভার স্পর্শে। ১৯১০ সালের মধ্যেই কিউবিষ্ট অঙ্কনশৈলী তার একাগ্র চেষ্টায় পূর্ণতা লাভ করে।


(পিকাসোর বিখ্যাত ছবি গোয়ের্নিকা)
বিখ্যাত ওই শিল্পীর মধ্যে সব সময় কাজ করত একটা স্বত:স্ফূর্ত সৃষ্টিশীলতা, সে শিল্পের মাধ্যমটা যাই হোক না কেন। সাধারণ রঙেও কালজয়ী ছবি আঁকা সম্ভব, অন্যদের মধ্যে এমন ভাবনা না থাকলেও পাবলো পিকাসো তা ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম হলোঃ ল্যা মূল্যাঁ দা ল গালেৎ, দ্য ব্লু রুম, ওল্ড গিটারিস্ট, সালত্যাঁবাঁক, সেল্ফ-পোট্রেট, টু নুডস, আভাগঁর রমণীবৃন্দ, থ্রি মিউজিশিয়ানস, স্কাল্পটর, মডেল অ্যান্ড ফিশবৌল, থ্রি ডান্সার্স, গিটার, গ্লাস অব আবস্যাঁৎ, সিটেড বাথার, পালোমা এবং গোয়ের্নিকা ইত্যাদি। পিকাসো বিলাসবহুল জীবন যাপন করার পাশাপাশি সাঙ্ঘাতিক কাজও করতেন। তিনি একের পর এক ছবি আঁকছেন, ভাস্কর্য গড়ছেন, প্রিন্ট ও খোদাইয়েরও কাজ করছেন! যখন কাজ করতেন না তখন পিকাসো মেতে থাকতেন বুলফাইটিং বা ষাঁড়ের লড়াই নিয়ে। আর্ল বা নিম শহরের রোমান অ্যারিনাগুলোতে যত বড় বড় বুলফাইটিং হত, প্রায় সবগুলোতেই তিনি তখন বন্ধুদের নিয়ে দেখতে যেতেন। পিকাসোর আরো একটি প্রতিভার কথা ঢাকা পড়ে গেছে তাঁর চিত্রশিল্পে খ্যাতির নিচে। তিনি ১৯৩৫ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত তিন শতাধিক কবিতা রচনা করেছেন।


(পিকাসার প্রথম স্ত্রী ডোরা মার, দ্বিতীয় স্ত্রী গিলোট এবং প্রেমিকা মেরি থেরেসে ওয়াল্টার)
রোমান্টিক ধারার কবি হলেও পিকাসোর পারিবারিক জীবনে ছিল অস্থিরতা। পিকাসোর প্রথম স্ত্রী ছিলেন ডোরা মার। তিনি পিকাসোর প্রেমে উন্মত্ত ছিলেন। তাঁর কাছে গ্যোয়ের্নিকা অতিযত্নে সংরক্ষিত ছিল। এরপর পিকাসো আরো দুটি বিয়ে করেছিলেন। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী গিলোট ছিলেন পিকাসোর চেয়ে ৪০ বছরের ছোট। ১৯২৭ সালে পিকাসো ১৭ বছর বয়সী মেরি থেরেসে ওয়াল্টার নামে এক তরুণীর প্রেমে পড়েন। এ সময়গুলোয় পিকাসো স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করতেন। পিকাসোর মৃত্যুর চার বছর পর থেরেসে আত্মহত্যা করেন।


পিকাসো বলেছিলেন, চিত্রশিল্প হলো এমন এক মিথ্যা, যা আমাদের সত্যিকে উপলব্ধি করতে শেখায়। তাঁর এ বাণী যে কতটা বাস্তবসম্মত, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ গ্যোয়ের্নিকা। বিখ্যাত স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর পাবলো পিকাসো ১৯৭৩ সালের ৮ এপ্রিল ফ্রান্সের সগিন্সে পরলোকগমন করেন। মুত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯১ বছর। বরেণ্য চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর ১৩৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। আধুনিক শিল্পকলার মহিরুহ বরেণ্য চিত্রশিল্পী পিকাসোর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×