somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রিটিশ বিরোধী বাঙালি বিপ্লবী বিনয় বসুর ১০৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিনয় বসু নামে পরিচিত ব্রিটিশ বিরোধী বাঙালি বিপ্লবী ও মুক্তিসংগ্রামী বিনয় কৃষ্ণ বসু। শৈশব থেকে বিনয় ছিলেন প্রচন্ড জেদী ও সাহসী। ব্রিটিশবিরোধী অগ্নিবিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের সংস্পর্শে এসে বিপ্লববাদী যুগান্তর দলে যুক্ত হন বিনয় বসু। বিপ্লববাদী দলে যুক্ত হওয়ার পর বিনয় তাঁর অসীম সাহস ও দূরদর্শিতা দিয়ে ব্রিটিশ শাসকদের উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার শপথ নেন। ১৯০৮ সালের আজকের দিনে ঢাকার মুন্সীগঞ্জের রোহিতভোগ গ্রামে জন্ম নেন বিনয় বসু। আজ এই বাঙালী বিপ্লবীর ১০৯তম জন্মবার্ষিকী। মুক্তিসংগ্রামী বিপ্লবী বিনয় বসুর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

বিনয় বসু ১৯০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জের রোহিতভোগ গ্রামে জন্মগ্রণ করেন। তাঁর বাবা রেবতীমোহন বসু ছিলেন একজন প্রকৌশলী। বিনয়ের বাবা পরিবার নিয়ে ঢাকাতে বসবাস করতেন। তাই বিনয় বসু ছোটবেলা থেকে ঢাকায় বড় হয়েছেন। ঢাকা থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর তিনি মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুল (বর্তমানের স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) এ ভর্তি হন। এই মেডিকেল কলেজে পড়াশুনার সময় বিনয় বসু বিপ্লববাদী রাজনীতিতে যুক্ত হন। বিপ্লবী কর্মকান্ডে যুক্ত থাকার জন্য তিনি তাঁর ডাক্তারী লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি। তিনি বিপ্লবী দলে যুক্ত হওয়ার পর সহপাঠীদের অনেককেই বিপ্লবী দলে যুক্ত করেন। ১৯২৮ সালে তিনি ও তাঁর সহপাঠী সহযোদ্ধারা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে' যুক্ত হন। এই বিপ্লবী দলে যুক্ত হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই বিনয় বসু এই দলের ঢাকা শাখা গড়ে তোলেন। এসময় সারা ভারত জুড়ে চলতে থাকে বিপ্লবীদের উপর পুলিশের জুলুম-নির্যাতন। তাঁরা এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।

১৯৩০ সালের ২৯শে আগস্ট পুলিসের ইন্সপেক্টর জেনারেল লোম্যান(Lowman ) গেছেন অসুস্থ্য বৃটিশ অফিসারকে দেখতে মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুল হাসপাতালে। প্রকাশ্য দিবালোকে মেডিকেল ছাত্র বিনয় গুলি করে হত্যা করলেন লোম্যানকে। লোম্যানের সঙ্গী পুলিস সুপারিনটেন্ডেন্ট হডসন গুরুতরভাবে আহত হলেন। পুলিশ ঘিরে ফেলল এলাকা। কে খুন করল? কোথায় সে? একে একে সবাইকে জেরা করল পুলিশ। যে ঝাড়ুদার হাসপাতালের মেঝে ঝাড়ু দিচ্ছিল তাকেও জেরা কর হল। কিন্তু মুহুর্তের মধ্যে ঝাড়ুদার বনে যাওয়া বিনয়কে চিনতে পারল না পুলিশ। পালালেন বিনয়। প্রকাশ্য দিবালোকে বাংলার ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এফ জে লোম্যানকে হত্যা করার পর এক আততায়ীর নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঢাকা পুলিশের অকর্মণ্যতার পরিচায়ক। অকর্মণ্যতার গ্লানি দূর করার জন্য আসামীর সন্ধান করতে পুলিশ হন্যে হয়ে ছোটে শহরের ওলি-গলিতে। জনসাধারণকে মারধর শুরু করে। যুবকদের ধরে থানায় আটক রেখে নির্যাতন চালায়। এসময় ঢাকাবাসী পুলিশের অন্যায় অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠে। পুলিশের অত্যাচারের ভয়ে অনেক স্কুল-কলেজের ছাত্ররা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যায়। লোম্যান হত্যাকারী আততায়ীকে পুলিশ ধরতে সক্ষম না হলেও তাঁর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছিল। আততায়ী যুবকের নামঃ বিনয় বসু। তাঁর বাবার নামঃ রেবতী মোহন বসু। গ্রামঃ রাউথভোগ, বিক্রমপুর। পেশাঃ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বিনয় বসুকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ সারা বাংলা তন্নতন্ন করে খোঁজে। সর্বত্র বিনয় বসুর ছবিযুক্ত পোস্টার লাগিয়ে দেওয়া হয়। ধরিয়ে দেওয়ার জন্য মোটা অংকের টাকা, দশ সহস্র মুদ্রা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কোথাও বিনয় বসুকে পাওয়া গেল না। কেউ ধরিয়েও দিল না।

পরবর্তীতে বিপ্লবীরা 'রাইটার্স বিল্ডিং' আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর আক্রমণের জন্য তিন বিপ্লবী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দিনেশ গুপ্ত সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। খুব সতর্ক অবস্থায় তাঁদের প্রশিক্ষণের কাজও সমাপ্ত হল। ৮ ডিসেম্বর বেলা ১২টার সময় সামরিক পোশাক পরে তিনজন বাঙালী যুবক এসে কর্নেল সিম্পসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাঁরা সিম্পসনের চাপরাশীকে (সহকারী) ঠেলে কামরার ভিতরে প্রবেশ করেন। হঠাৎ পদধ্বনী শুনে কর্নেল তাঁদের দিকে তাকান। বিস্ময়-বিমূঢ় চিত্তে দেখতে পান সম্মুখে মিলিটারী পোশাক পরে তিনজন বাঙালী যুবক রিভলবার হাতে দণ্ডায়মান। মুহূর্তের মধ্যে বিনয়ের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় 'প্রে টু গড কর্নেল। ইওর লাষ্ট আওয়ার ইজ কামিং।' কথাগুলি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে তিনটি রিভলবার হতে ছয়টি গুলি সিম্পসনের দেহ ভেদ করে। সিম্পসন লুটিয়ে পড়ে মেঝের উপর। এরপরই গুলির আঘাতে আহত হন জুডিসিয়েল সেক্রেটারী মি. নেলসন। এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণ করতে করতে আততায়ীরা পরবর্তী লক্ষ্য হোম সেক্রেটারী আলবিয়ান মারের কক্ষের দিকে অগ্রসর হন। ততক্ষণে এই আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ছুটে আসেন পুলিশ-ইন্সপেক্টর জেনারেল মি. ক্র্যাগ ও সহকারী ইন্সপেক্টর জেনারেল মি. জোনস। তাঁরা কয়েক রাউণ্ড গুলিও ছোঁড়েন। কিন্তু বিনয়-বাদল-দীনেশের বেপরোয়া গুলির মুখে তাঁরা দাঁড়াতে পারলেন না। প্রাণ নিয়ে পালালেন। 'রাইটার্স বিল্ডিং' আক্রমণের সংবাদ পেয়ে পুলিশ কমিশনার টেগার্ট আসেন। ডেপুটি কমিশনার গার্ডন আসেন সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে। জুডিসিয়েল সেক্রেটারী মি. নেলসন, মি. টয়নয় প্রমুখ অনেক ইংরেজ রাজপুরুষ আহত হলেন। আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ডেকে আনা হল গুর্খা বাহিনীকেও।

ব্রিটিশদের হাতে ধরা দেবেন না তারা এমন সংকল্প ছিল তাদের। যতক্ষন রিভলভারে গুলি ছিল তারা এই অসম যুদ্ধ করে গেলেন। সামনে যে ব্রিটিশকে পেলেন তাকেই গুলি করলেন তারা। তাদের গুলিতে আহত হলেন অপর দুইজন বৃটিশ সাহেব- নেলসন এবং টিয়ানম্যান। রাইটার্স বিল্ডিং থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব ছিল না তা ভাল ভাবেই জানতেন তিন বিপ্লবী। তারা জানতেন মৃত্যুকেই তারা বরন করতে যাচ্ছেন। ফুরিয়ে এসেছে গুলি। আশ্রয় নিলেন সচিবালয়ের খালি পাসপোর্ট ঘরে। সেখানে চেয়ারে বসেই সায়ানাইডের ক্যাপসুল খেলেন বাদল। আর নিজেদের রিভলভার দিয়ে নিজেদেরকে গুলি করে আত্মহত্যার চেস্টা করলেন বিনয় এবং দীনেশ। বিনয় ছিলেন মেডিকেল স্কুলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি জানতেন মৃত্যুর পথ।১৯৩০ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাতে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় আকাঙ্খিত মৃত্যুকে বরণ করার জন্য মস্তিষ্কের 'ব্যাণ্ডেজে'র ভিতর অঙ্গুল ঢুকিয়ে স্বীয় মস্তিষ্ক বের করে আনেন এবং মৃত্যুকে বরণ করে নেন বিনয় বসু। হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায় বিনয় উচ্চারন করেছিলেন দুর্বোধ্য শব্দ “লেফট রাইট লেফট। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে বিনয়-বাদল-দীনেশের নামানুসারে কলকাতার ডালহৌসি স্কয়ারের নাম পাল্টে রাখা হয় বি-বা-দী বাগ। অর্থাৎ বিনয়-বাদল- দীনেশ বাগ। বাঙালী বিপ্লবী বিনয় বসুর আজ ১০৯তম জন্মবার্ষিকী। মুক্তিসংগ্রামী বিনয় বসুর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নুরু
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×