somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

জনপ্রিয় ভারতীয় চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের ১০২তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভারতের পিকাসো খ্যাত আধুনিক শিল্পকলার সেরা শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন। ভারতের স্বাধীনতা-পরবর্তী শিল্প-সংস্কৃতির জগতের অগ্রপথিক মকবুল ফিদা হোসেন সাধারণ্যে যিনি এম এফ হুসেন নামে বেশি পরিচিত। সমকালীন শিল্পীদের থেকে তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র, কারণ তিনি রঙ-তুলি-ক্যানভাসের ভেতরে নিজেকে আটকে রাখেননি। তাঁর প্রতিভার বর্ণচ্ছটায় আলোকিত হয়ে উঠেছিল শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যম। মকবুল ফিদা হুসেন ছিলেন একাধারে কবি, ভাস্কর, বাড়ির নকশাকার এবং চিত্রনির্মাতা। স্পেনের শিল্পী পাবলো পিকাসোর মতো মকবুল ফিদা হুসেনও ভারতীয় চিত্রকলায় নিয়ে আসেন বৈচিত্র্য। আর এজন্য তিনি আবহমান ভারতীয় শিল্প ঐতিহ্যের সঙ্গে ইউরোপীয় শিল্পশৈলী 'কিউবিজম'-এর মিলন ঘটান। এর মাধ্যমেই আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলা ও মকবুল ফিদা হুসেন হয়ে ওঠেন সমার্থক। কালজয়ী চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন ১৯১৫ সালের আজকের দিনে পরাধীন ভারতের পান্ধারপুরে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ১০২তম জন্মবার্ষিকী। কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

শিল্পের যাদুকর মকবুল ফিদা হুসেন ১৯১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পরাধীন ভারতের তৎকালীন বোম্বে প্রেসিডেন্সি এলাকার পান্ধারপুরের খুব সাধারণ ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন তদানীনত্মন ইন্দর রাজ্যের (বর্তমানে মধ্য প্রদেশ) কাপড়ের কলের কমর্ী। ছেলেবেলা থেকেই ফিদা যা দেখতেন, তা-ই এঁকে ফেলতেন। ছেলের আগ্রহ দেখে বাবা তাঁকে ভর্তি করলেন এক আর্ট স্কুলে। তবে সেখানে মকবুল ফিদা হুসেনের মন টিকেনি। ১৯৩৭ সালে বাবা চলে এলেন মুম্বাইয়ে, শুরু করলেন ঘি'এর ব্যবসায়। তিনি চাইলেন ছেলেও ব্যবসা দেখুক। কিন্তু ফিদা রাজি হলেন না। ভর্তি হলেন জে জে আর্ট স্কুলে। এ স্কুল থেকেই শুরু হলো তাঁর শিল্পী জীবন। তবে তাঁর জন্য সহজলোভ্য ছিল না ছবি অাঁকার সরঞ্জাম। এ সবের জোগাড়ের জন্য তিনি সিনেমার পোস্টার এঁকেছেন, লিখেছেন সাইনবোর্ড পর্যন্ত। অনেক দিন পর্যন্ত শহরের গ্রান্ট রোডের একটি গ্যারেজ ছিল তাঁর স্টুডিও। শত প্রতিকূলতাতেও থেমে থাকেননি ফিদা। থামিয়ে দেননি ছবি অাঁকা। মাতৃস্নেহ বঞ্চিত ছিলেন ফিদা। হয়ত এ কারণেই তাঁর চিত্রকর্মে খুঁজে পাওয়া যায় মাতৃরূপ। অসংখ্য নারীর চিত্রকর্মের মাধ্যমে মাতৃরূপের কল্পিত মুখখানি খুঁজে দেখার ছাপ পাওয়া যায়। মকবুল ফিদা হুসেনের অসংখ্য চিত্রকলার ভেতর উলেস্নখযোগ্য হলো 'বিটুইন দ্য স্পাইডার এ্যান্ড দ্য ল্যাম্প', 'বীণা পেস্নয়ার', 'গণেশ', 'মাদার তেরেসা', 'মাদার ইন্ডিয়া', 'দ্য ওরামা' ইত্যাদি।

প্রথম জীবনে অভাব থাকলেও পরবর্তীতে লক্ষ্মী তাঁকে দূরে রাখেননি। বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছিলেন তিনি। অর্থ তাঁর ব্যক্তিজীবনে পরিবর্তন আনতে পারেনি। তিনি খুব সাদাসিধা জীবনেই অভ্যস্ত ছিলেন। পাতলা ঢেউ তোলা শুভ্র চুল আর সুভ্র শ্মশ্রুমন্ডি এ মানুষটি যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে হাজির হতেন খালি পায়ে। আর স্টুডিও কিংবা ফুটপাথ যে পরিবেশই হোক না কেন তাঁর ছিল ছবি অাঁকার দুর্লভ ক্ষমতা। মকবুল ফিদা হুসেন বলিউডের নায়িকাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। সুন্দরী তারকারা ছিলেন তাঁর কাছে কলালক্ষ্মী। তাঁর প্রিয় নায়িকার তালিকায় ছিল আনুশকা শর্মা ও অমৃতা রাও, মাধুরী দীক্ষিত, টাবু, বিদ্যা বালান ও উর্মিলা মার্ত-করের মতো তারকারা। চলচ্চিত্র নির্মাণও করেছেন এম ফি হুসেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে ফিদার প্রথম ছবি মাধুরী দীক্ষিতকে নিয়ে 'গজগামিনী'। টাবুকে নিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন নিজের দ্বিতীয় ছবি 'মিনাক্ষী'।

শিল্পীর অতৃপ্তি চিরকালের। আর এই অতৃপ্তি সারা জীবন বহন করেছেন মকবুল ফিদা হুসেন। জীবদ্দশায় বহু ছবি এঁকেছেন তিনি। মিলিয়ন ডলারে বিক্রিও হয়েছে সেসব। কিন্তু তাঁর সব অর্জনের ওপর ছায়া ফেলে একটি বিতর্ক। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি দেবী দুর্গা ও সরস্বতীকে নগ্নভাবে চিত্রকর্মে উপস্থাপন করেছেন। এতে তাঁদের অসম্মান করা হয়েছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হৃদয়ে তিনি আঘাত করেছেন। হিন্দু ধর্মের যে সব দেবদেবীর নগ্নচিত্র নিয়ে বিতর্ক সেগুলো ফিদা এঁকেছিলেন '৭০-এর দশকে। তবে এগুলো প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে একটি হিন্দী পত্রিকায়। এরপরই শুরু হয় বিতর্ক। এরপর তাঁর চিত্রকর্ম নিয়ে দ্বিতীয় যে বিতর্কটি ওঠে, তা শুরু হয় ২০০৬ সালে। এ সময় তিনি 'ব্রহ্মপুত্র' বা 'মাদার ইন্ডিয়া' নামের একটি চিত্রকর্ম অাঁকেন। এটি ছিল ভারতের মানচিত্র, যা অাঁকা হয়েছিল এক নগ্ন নারীর আদলে। এই নগ্ন নারীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভারতের রাজ্যগুলোকে চিহ্নিত করা হয়। প্রতিক্রিয়ায় ফেটে পড়ে কট্টর হিন্দুরা। তাদের আক্রোশের মুখে পড়েন ফিদা। তাঁর বাড়িতে হামলা চালায় হিন্দু মৌলবাদীরা। ভাংচুর করে তাঁর চিত্রকর্ম। আদালতে মামলাও হয়। প্রায় ৮ কোটি টাকা মূল্য ঘোষণা করা হয় ফিদার মাথার। ক্রমাগত বিরোধিতার মুখে তাঁর শিল্পী জীবন ও ব্যক্তিগত জীবন যন্ত্রণাদায়ক হয়ে পড়ে। ভারত সরকারের দেয়া সরকারী নিরাপত্তার প্রতি তিনি আস্থা রাখতে পারেননি। তাই ২০০৬ সালে দেশ ছাড়েন। এদেশ-ওদেশ ঘুরে অবশেষে ২০১০ সালে তিনি কাতারের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। কাতারের নাগরিকত্ব নেয়ার আগে দুবাই ও লন্ডনেই বেশিভাগ সময় থাকতেন তিনি।

শিল্পী হিসেবে মকবুল ফিদা হুসেন স্বীকৃতি পেয়েছেন অনেক। ১৯৫৫ সালে তিনি 'পদ্মশ্রী' পদক লাভ করেন । ১৯৭১ সালে পাবলো পিকাসোর সঙ্গে সাওপাওলো সম্মেলনে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালে লাভ করেন 'পদ্মভূষণ' আর ১৯৯১ সালে তাঁকে সম্মানিত করা হয় 'পদ্মবিভূষণ' দিয়ে। মকবুল ফিদা হুসেনের শিল্পকর্ম সময়কে জয় করেছে, আর সেই সময়ের নিয়ম মেনেই ২০১১ সালের ৯ জুন লন্ডনে তাঁর ৯৫ বছরের নশ্বর জীবনের যতি পড়ে। যে দেশপ্রেমিক শিল্পী আধুনিক শিল্পকলার জগতে ভারতের নাম চিরস্থায়ী করেছেন, তাকেই মৃত্যুবরণ করতে হলো স্বদেশ ছেড়ে বহু দূরে প্রবাসে, শিল্পী হিসেবে এটা তাঁর যতটা দূর্ভাগ্য তার চেয়ে বেশী লজ্জা ভারতের। তবে মকবুল ফিদা হুসেনরা মরেন না, মরতে পারেন না। কারণ তাঁদের মৃত্যু হলে থেমে যাবে সভ্যতার চাকা। একদিন যে চাকার যাত্রা শুরু করেছিলো মাতৃরুপ সন্ধানে পৃথিবীর প্রান্তে সমস্ত নারীদের মাঝে, সেই যাত্রাকে তিনি র্পূনতা দিয়েছিলেন দু:সাহসিক অভিযানে! সেই চিরতরুন প্রেমিক ফিদা হুসেনকে কি পৃথিবী মনে রাখবে? অবশ্যই… মনে রাখার মত জীবন আর শিল্পের অর্ঘ্য তিনি রেখে গেছেন আমাদের মাঝে। শিল্পকলার সেরা শিল্পীর ১০২তম জন্মবার্ষিকী আজ। কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৪
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×