somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৫ মার্চ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবসঃ “ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণ”

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ ১৫ মার্চ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো দিবসটির লক্ষ্য। একজন ক্রেতার মৌলিক অধিকারের উন্নতি সাধন, বাজার ব্যবস্থার অপব্যবহার দূর করা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা দিবসটির উদ্দেশ্য। ১৯৬০ সালে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী হেগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভোক্তা সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব কনজিউমার্স ইউনিয়ন। যার বর্তমান নাম হচ্ছে কনজিউমারস ইন্টারন্যাশনাল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি প্রথমবারের মতো ভোক্তা অধিকারকে সংজ্ঞায়িত করেন এবং ভোক্তা আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেন। ১৯৬২ সালের ১৫ মার্চ কংগ্রেসে মিঃ কেনেডি তাঁর বক্তৃতায় ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে ১। নিরাপত্তার অধিকার, ২। তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার, ৩। পছন্দের অধিকার এবং ৪। অভিযোগ প্রদানের অধিকার, ভোক্তাদের এ চারটি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে আলোকপাত করেন যা পরবর্তীতে ভোক্তা অধিকার আইন নামে পরিচিতি পায়। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের ১৫ মার্চ তারিখে বিশিষ্ট পরিবেশবাদী ও ভোক্তাদের অধিকার বিষয়ে আন্দোলনে সোচ্চার কর্মী মালয়েশিয়ার আনোয়ার ফজল ভোক্তা সংগঠনগুলোর মাধ্যমে ভোক্তাদের মৌলিক অধিকার সম্বন্ধে সচেতনতার উদ্দেশ্য বৈশ্বিকভাবে উদযাপনের আহ্বান জানান। এ কারণে আনোয়ার ফজল এ দিবস পালনের রূপকার হিসেবে পরিচিতি হয়েছেন। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের মাধ্যমে জাতিসংঘ ভোক্তা অধিকার রক্ষার নীতিমালায় কেনেডি বর্ণিত চারটি মৌলিক অধিকারকে আরো বিস্তৃত করে অতিরিক্ত আরো আটটি মৌলিক অধিকার সংযুক্ত করা হয়। এরপর থেকেই কনজুমার্স ইন্টারন্যাশনাল এ সকল অধিকারকে সনদে অন্তর্ভূক্ত করে। কেনেডি'র ভাষণের দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৫ মার্চকে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস হিসেবে বৈশ্বিকভাবে উদযাপন করে আসছে। ১৫ মার্চকে উপজীব্য করে আজ বৈশ্বিকভাবে উদযাপিত হবে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণ”।


কেনেডির “সংজ্ঞা অনুযায়ী আমরা সকলেই ভোক্তা। অর্থনীতিতে ভোক্তাগণই সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী যারা একই সাথে প্রভাবক এবং প্রভাবিত। সকল ব্যয়ের দুই-তৃতীয়াংশ সংঘটিত হয় ভোক্তাদের দ্বারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ভোক্তারা অসংগঠিত এবং প্রায়শঃই তাঁদের কথায় কেউ পাত্তা দেয় না। ভোক্তা হিসেবে পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানাটা আমাদের অধিকার। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদেরকে অসত্য তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়।.. ভোক্তাদের পছন্দ এখন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে অতি উন্নত বিজ্ঞাপনের দ্বারা। ভোক্তারা বিজ্ঞাপনের চাতুর্যতায় হারিয়ে যান। সাধারণভাবে একজন ভোক্তা জানেন না যে তিনি যে ওষুধ কেনেন তা কতখানি নিরাপদ, মানসম্পন্ন এবং কার্যকর। নকল-ভেজালের স্বর্গ রাজ্য দেশের সর্বত্রই নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যের সংকট প্রকট। ভোক্তাদের গ্রহণকৃত পণ্যের মান সুরক্ষিত বা সুনিশ্চিত নয়। ভোক্তা জানে না যে খাবার সে খাচ্ছে তা কতখানি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত।” আমাদের দেশে সামাজিক ন্যায়বিচার এখনও সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই ভোক্তারা বাজারে প্রতিনিয়ত প্রতারিত ও প্রবঞ্চিত হন। দেশে সু-সংগঠিত ভোক্তা আন্দোলন গড়ে না উঠায় এই প্রতারণা-প্রবঞ্চনার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে উঠছে না। ভোক্তাদের নিরবতা ও নির্লিপ্ততার কারণে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্যে পণ্যে বিষাক্ত ক্যামিকেল দিয়ে খাবারকে বিষে পরিণত করে জনগণের পকেট কেটে টাকার পাহাড় গড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ বুলেটিন অনুযায়ী, দেশে খাদ্যে ভেজালের মাত্রা এখনো ৪০ শতাংশের বেশি।স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রকাশিত জাতীয় হেলথ বুলেটিনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্য ল্যাবরেটরিতে ২০০৯ সালে খাদ্যে ভেজালের মাত্রা পাওয়া যায় ৪৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, ২০১০ সালে বেড়ে হয় ৫২ শতাংশ, ২০১১ সালে আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কারণে এ মাত্রা কিছুটা কমে আসে। ২০১২ সালে দেশে ভেজাল খাদ্যের পরিমাণ ছিল ৪৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং ২০১৩ সালে তা আরো কমে দাঁড়ায় ৪৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে।


বাংলাদেশে ‘ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯’ নামে একটি আইন হয়েছে। গঠিত হয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আইনের আওতায় সারাদেশে ভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষায় জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠিত হওয়ার কথা। এই আইনে কৃত অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব এক থেকে তিন বৎসর কারাদন্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার-তিন লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। আইনে উল্লেখিত কোন অপরাধের জন্য দন্ডিত ব্যক্তি যদি পুনরায় একই অপরাধ করেন তবে তিনি উক্ত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ যে দন্ড দেয়া হয়েছে তার দ্বিগুণ দন্ডে দন্ডিত হবেন। বলাই বাহুল্য যে, আইন থাকলেও ভোক্তারা আজও তাঁদের অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ। অথবা জানলেও কোন লাভ নেই। একথা অনস্বীকার্য যে প্রতিটি মানুষই কোন না কোন ভাবে ভোক্তা। সে হিসেবে ভোক্তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। অথচ ভোক্তারাই সবচেয়ে বঞ্চিত। ভেজালের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিশুখাদ্যও। বিজ্ঞাপনের বিপজ্জনক জালে পুরোপুরি বন্দি আমাদের শিশুরা। এই বন্দিত্ব অবসানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত করতে এবং ভোক্তা হিসাবে নিজেদের অধিকার সমুন্নত রাখতে সকল শ্রেণী, পেশার নাগরিক আমরা ক্রেতা-ভোক্তা হিসাবে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সংগঠিত হয়ে নকল ভেজালমুক্ত, নিরাপদ খাদ্য অধিকার আন্দোলন জোরদার করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিক সেবা ও অধিকার সংরক্ষণে এবং সেবা সার্ভিস সমূহের অব্যবস্থাপনা নিরসন ও ভোক্তাদের কার্যকরী সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। ভোক্তা হিসাবে নিজেদের অধিকার সমুন্নত রাখতে জানতে হবে ভোক্তা আইন এবং প্রয়োজনে অভিযোগ জানাতে হবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কাছে।


পরিবেশবাদী সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) এক জরিপে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১-১০ জুন রাজধানীর বাজার থেকে আম, লিচু, জাম, আপেল, আঙ্গুর ও মালটায় ফরমালিনের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়। এ কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা মহানগরীর ৩৫টি এলাকা থেকে আমের ১২৮টি, লিচুর ২১, জামের ১৪, আপেলের ৩৯, আঙ্গুরের ৮ এবং মালটার ১৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এতে আমে ৬৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ ফরমালিন, লিচুতে ৯৫ দশমিক ২৪ শতাংশ, জামে শতভাগ, আপেলে ৫৮ দশমিক ৯৭, আঙ্গুরে ৮৭ দশমিক ৫ ও মালটায় ৬৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ ফরমালিনের অস্তিত্ব খুঁজে পায় সংস্থাটি। বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস খুব পুরোনো কোন দিবস নয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সপক্ষে দেশে একাধিক সহায়ক আইন রয়েছে। নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এবং ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনসহ অন্যান্য আইনগুলো পর্যালোচনা করে ভোক্তার নিরাপদ খাবার এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু আইন নয় এর সঠিক বাস্তবায়ন হলেই কেবল নিশ্চিত হবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যে ভোক্তার অধিকার। বিশ্ব ভোক্তা দিবসে ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:৩০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×