somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সু-সাহিত্যিক খান বাহাদুর কাজী ইমমাদুল হকের ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

২০ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিংশ শতাব্দীর সূচনা লগ্নের মুসলমান লেখকদের মধ্যে অগ্রসর, আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক মননশীল গদ্য লেখক কাজী ইমদাদুল হক। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, প্রবন্ধকার, উপন্যাসিক, ছোট গল্পকার ও শিশু সাহিত্যিক। শুধু সাহিত্য নয়, তিনি ছিলেন একজন সমাজসংস্কারক। স্বসমাজের মঙ্গলকামী ছিলেন বলেই তিনি বঙ্গীয় মুসলিম সমাজে বিদ্যমান রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। অন্ধভক্তির মূলোৎপাটনের জন্য তিনি সাহিত্যিক সক্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েছেন। সমাজের অনগ্রসরতার পাশাপাশি অভূতপূর্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথাও তিনি তুলে ধরেছেন। তার অন্য কিছু রচনা থাকলেও একটি মাত্র অসমাপ্ত উপন্যাস আব্দুল্লাহ রচনা করে তিনি যে, কৃতিত্বের নিদর্শন রেখে গেছেন তাই তাকে বাংলা সাহিত্য স্মরণীয় করে রেখেছে। শিক্ষা বিভাগে বিভিন্ন কাজে অসামান্য দক্ষতা, গভীর দায়িত্ববোধ ও উদ্ভাবনী শক্তির স্বীকৃতি স্বরূপ তৎকালীন বৃটিশ সরকার তাকে ১৯১৯ সালে খান সাহেব এবং ১৯২৬ সালে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করে তাকে সম্মানিত করা হয়। বরেণ্য এই কথাসাহিত্যিক ১৯২৬ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন। প্রায় বিস্মৃত মনিষী কাজী ইমদাদুল হকের ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। খান সাহেব ও খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত সু-সাহিত্যিক কাজী ইমমাদুল হকের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সু-সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ কাজী ইমদাদুল হক ১৮৮২ সালের ৪ ঠা নভেম্বর খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাজী আতাউল হক। কাজী ইমদাদুল হক ছিলেন পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান। কাজী ইমদাদুল হকের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় গ্রামের স্কুলে ও পারিবারিক পরিবেশে। জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সঙ্গে ছিল তাঁর পিতার বন্ধুত্ব। প্রফুল্য চন্দ্র রায়ের উৎসাহ ও পরামর্শে কাজী ইমদাদুল হকের পিতা তাকে ১৮৯০ সালে খুলনা জেলা স্কুলে ৫ম শ্রেনীতে ভর্তি করেন। ১৮৯৬ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন। ১৮৯৮ সালে কলকাতা মাদ্রাসা থেকে এফ, এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি, এ পাশ করেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন তিনি পদার্থ বিদ্যা ও রসায়ন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে ডিগ্রী ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু পরীক্ষার আগে অসুস্থতার কারণে অনার্স পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিষয়ে এম, এ ক্লাসে ভর্তি হন।

কাজী ইমদাদুল হকের প্রায় সমগ্র কর্ম জীবনই কেটেছে সরকারী চাকুরীতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯০৩ সালে তিনি কলকাতা মাদ্রাসার অস্থায়ী শিক্ষক পদে নিয়োগ লাভ করেন। এরপর পূর্ববঙ্গ ও আসান প্রদেশ গঠিত হওয়ায় ১৯০৬ সালে আসামে শিলংয়ে শিক্ষা বিভাগে ডিরেক্টরের অফিসে উচ্চমান সহকারী পদে চাকুরী গ্রহণ করেন এবং ১৯০৭ সালে ঢাকা মাদ্রাসার শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন। ১৯১১ সালে তিনি ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং সেন্টারে ভূগোলের অধ্যাক্ষ নিযুক্ত হন। এ সময় তিনি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যাক্ষ মিঃ বিন এর আগ্রহে বি, টি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে বি, টি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯১৪ সালে তিনি প্রাদেশিক এডুকেশন সার্ভিসে উন্নতি হয়ে ঢাকা বিভাগের মুসলিম শিক্ষার সহকারী স্কুল ইসপ্টেরের পদে ময়মনসিংহে অবস্থিত কার্যালয়ে নিযুক্ত হন। ১৯১৭ সালে কলকাতা টিচার্স ট্রেনিং স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি প্রথম কর্মদক্ষ পদে নিযুক্ত হন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। 

ছাত্রজীবন থেকেই কাজী ইমদাদুল হক সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। তার সাহিত্য জীবনের সূত্রপাত ঘটে কবিতা রচনার মধ্যে দিয়ে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্রাবস্থায় তার প্রথম সাহিত্য কর্ম ৯টি, কবিতা সংগ্রহ আঁখি জল ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯০১ সালে মাসিক প্রচারক পত্রিকায় তার সনেট ‘কবির প্রতি’ ছাপা হয়। ১৯০৩ সালের সূচনা লগ্ন থেকে নবনূর প্রবাসী ও ভারতী পত্রিকাসহ প্রভৃতি প্রতিকায় তার কবিতা ও প্রবন্ধ নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। তার প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত বিভিন্ন কবিতা নিয়ে দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ লতিকার পান্ডুলিপি রচিত হলেও তা অপ্রকাশিত থেকে যায়। পরে কাজী ইমদাদুল হক রচনাবলীতে কবিতা গুলো স্থান পায়। সরল দেবী চৌধুরানী, সম্পাদিত ভারতী পত্রিকায় কাজী ইমদাদুল হকের মোসলেম জগতের বিজ্ঞান চর্চা শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। পরে নব নূর সম্পাদক সৈয়দ ইমদাদ আলী পরামর্শক্রমে কাজী ইমদাদুল হক নাম রাখেন মোসলেম জগতের বিজ্ঞান চর্চা। ১৯০৪ সালে মোসলেম জগতের বিজ্ঞান চর্চা পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়। এছাড়াও ১৯২০ সালে তিনি শিক্ষকতা বিষয়ক পত্রিকা ‘শিক্ষা’ প্রকাশ করেন।

কাজী ইমদাদুল হকের কতিপয় পাঠ্য পুস্তক ও উল্লেখযোগ্য রচনাবলীঃ
কবিতাঃ ১।আঁখিজল (১৯৯০) ২। লতিকা (১৯০৩-অপ্রকাশিত),
উপন্যাসঃ ১। আব্দুল্লাহ (১৯৩৩), ২। প্রবন্ধ-মোসলেম জগতের বিজ্ঞান চর্চা (১৯০৪),
প্রবন্ধঃ ১। প্রবন্ধমালা প্রথম খণ্ড (১৯১৮), ২।। প্রবন্ধমালা দ্বিতীয় খণ্ড (১৯১৬)
শিশু সাহিত্যঃ ১। নবী কাহিনী, ২। কামারের কান্ড (১৯১৯)
পাঠ্য পুস্তকঃ ১। ভূগোল শিক্ষা প্রনালী (প্রথম ও ২য় ভাগ ১৯১০), ২। সরল সাহিত্য। 

বাংলা সাহিত্যে ইমদাদুল হকের সবচেয়ে বড় অবদান উপন্যাস ‘আব্দুল্লাহ’। কাজী ইমদাদুল হক এ উপন্যাসটি অসম্পূর্ণ রেখেই মারা যান। পরবর্তীকালে তার লেখা গল্পের ছক অনুসারে তার সমসাময়িক লেখকরা উপন্যাসটি শেষ করেন। কাজী ইমদাদুল হকের মৃত্যুর পর ১৯৩৩ সালে ‘‘আব্দুল্লাহ’’ উপন্যাস প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। বিংশ শতাব্দীর গোঁড়ার দিকে বাঙ্গালী মুসলমান সমাজে যে অবস্থা ছিল তার একটি নিখুঁত চিত্র ‘‘আব্দুল্লাহ’’ উপন্যাসে বিধৃত হয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর আব্দুল্লাহ বইটির মন্তব্যে লিখেছিলেনঃ আমি খুশি হয়েছি বিশেষ কারণে, এই বই থেকে মুসলমানদের ঘরের কথা জানা গেল। 


অসুস্থ্যতার কারণে ১৯১৮ সালে কাজী ইমদাদুল হক কলকাতা মেডিকেল কলেজে মলদ্বারের অস্ত্রোপচার করান। পরবর্তীতে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকলে ১৯২৬ সালের ২০ মার্চ কলকাতা থেকে চিকিৎসার্থে দিল্লি যাওয়ার পথে তিনি মারা যান। আজ কাজী ইমদাদুল হকের ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী। সু-সাহিত্যিক খান বাহাদুর কাজী ইমমাদুল হকের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৪২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×