somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘পানির জন্য প্রকৃতি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস

২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস। পানির অপর নাম জীবন। জীবন বাঁচাতে পানির কোন বিকল্প নাই। এক চুমুক পানির জন্য জীবন বাজি রাখতেও প্রস্তুত। এ প্রতিযোগিতা এখন বর্তমান বিশ্বের দৈনন্দিন দৃশ্য। পানি সমস্যার সমাধান কল্পে ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে রাষ্ট্রসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনের (ইউএনসিইডি) এজেন্ডা ২১-এ প্রথম বিশ্ব জল দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয় এবং ১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব জল দিবস পালিত হয়। এর পর থেকে এই দিবস পালনের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশগুলি এই দিনটিকে নিজ নিজ রাষ্ট্রসীমার মধ্যে রাষ্ট্রসংঘের জলসম্পদ সংক্রান্ত সুপারিশ ও উন্নয়নপ্রস্তাবগুলির প্রতি মনোনিবেশের দিন হিসেবে উৎসর্গ করেন। প্রতি বছর বিশ্ব জল দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন সংস্থার যে কোনো একটি বিশেষ কর্মসূচি পালন করে থাকে। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাষ্ট্রসংঘ-জল বিশ্ব জল দিবসের থিম, বার্তা ও প্রধান সংস্থা নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে সাড়ে নয় কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে পারছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এ তথ্য জানিয়ে বলছে, বাংলাদেশের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে বাস করছে। কারণ ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ৯৭ ভাগ মানুষের পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হলেও বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং মৌসুম ভেদে পানি সঙ্কটের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে। শিল্পোন্নয়ন ও কৃষিকাজও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই বাস্তবতায় প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ বৃহস্পতিবাে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব পানি দিবস’। বিশ্বব্যাপী পানির অপরিহার্যতা বিবেচনা করে এবছর পানি দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ণয় করা হয়েছে, ‘পানির জন্য প্রকৃতি’ । এই প্রতিপাদের আলোকে প্রকৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পানির গুরুত্ব সম্পর্কে সবাই সম্যক ধারণা লাভ করতে সক্ষম হবেন।। পরিসংখ্যানে প্রকাশ, পৃথিবীতে মোট শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেক জনশক্তিই পানি সংক্রান্ত এবং পানিকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সারা বিশ্বে বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত সে সংখ্যা প্রায় দেড় বিলিয়ন। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ কাজ করছে এবং এই কাজ করতে অন্যদেরও প্রভাবিত করা হচ্ছে।


জীবন ধারণের অতি জরুরী উপকরণ পানি বিশ্বের সর্বত্রই একটি স্পর্শকাতর বিষয়। অথচ বিশ্বের ৭৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ দূষিত উৎসের পানি ব্যবহার করে। এর অর্ধেক হচ্ছে সাব-সাহারান আফ্রিকার মানুষ ও অবশিষ্ট অর্ধেকের বেশির ভাগের বাস এশিয়ায় এবং তাদের অধিকাংশই পল্লী অঞ্চলে বাস করে। পৃথিবীর শতকরা ৭১% পানি হিসেবে থাকলেও এর মাত্র ৩% খাবার যোগ্য যার বিরাট অংশই এন্টার্কটিকা ও গ্রীনল্যান্ডে বরফ হিসেবে জমা আছে অথবা মাটির নীচে। হিসেব করলে দেখা যায় যে, পৃথিবীর মোট পানির মাত্র ০.০১ শতাংশ মানুষের ব্যবহারোপযোগী। তাও আবার পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের নাগালের বাইরে। আধুনিক বিশ্বে যখন বিজ্ঞানের জয় জয়কার সেখানে প্রায় ১৫০ কোটিরও বেশী মানুষের জন্য নাই নিরপদ পানির ব্যবস্থা, আর প্রতি বছর শুধু পানি বাহিত রোগে ভুগে মারা যাচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ। আমাদের দেশে পানযোগ্য পানির প্রধান উৎস নদী-খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, পুকুর ও জলাশয়। এক সময় এ দেশে ১ হাজারের বেশি নদী থাকলেও সেগুলোর বেশিরভাগই এখন মরে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ হিসাবে বর্তমানে দেশে নদীর সংখ্যা ৩১০ এ নেমে এসেছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমানে নদ-নদীতে পানির চেয়ে বর্জ্যই বেশী। আবার নদীর পানি শুকিয়ে যাবার ফলে কৃষিখাতেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। সবমিলে ঝুঁকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য। ফলে বাড়ছে নানাধরনের রোগ। এদিকে তিস্তা নদীর পানি যে পরিমাণ কমেছে তাতে প্রবাহ শূন্যতে নেমে এসেছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে আসন্ন বোরো উৎপাদন কমবে তিনশ কোটি টাকার। এছাড়া রাজধানীর চারদিকে শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু ও বুড়িগঙ্গা নদীতে পানির চেয়ে বর্জ্যই বেশি। এক শ্রেণীর অসচেতন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কারণে গৃহস্থালি বর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য, শিল্প বর্জ্য, নগরবাসীর পয়ঃবর্জ্য, ট্যানারি শিল্পের বর্জ্য, নৌ-যানের তেল, ময়লাসহ নানা ধরনের বর্জ্যে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে নদীগুলো। বর্জ্যের সংমিশ্রণে নদীগুলোর পানি কালো, নীল বা লাল রঙ ধারণ করছে। দূষিত ওই নদীর পানি ব্যবহারে হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এ চার নদীকে সরকার আগেই ‘প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন’ ঘোষণা করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরীক্ষিত বর্জ্য ১৩টি নদীর মধ্যে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালুর পানির মান খুবই খারাপ। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) হিসাবে, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ এই চার নদীতে আছে প্রায় চারশ’র মতো বর্জ্যমুখ।


নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন হচ্ছে কলেরা, ডায়রিয়া, ডিসেন্ট্রি, হেপাটাইটিস-এ, টাইফয়েডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মোক্ষম হাতিয়ার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়াটার ও স্যানিটেশন শাখার সমন্বয়ক গর্ডন বলেন, মলমূত্র ইত্যাদি অনেক রোগের প্রধান উৎস এবং এক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। তিনি বলেন, দূষিত পানি, স্যানিটেশনের অভাব ও স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে অসচেতনতার কারণে সৃষ্ট ডায়রিয়াজনিত রোগে প্রতি বছর ৮ লাখ ৪২ হাজার মানুষ মারা যায়। জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে বিশ্বব্যাপী বিগত দু’দশকে সুপেয় পানি ও পরিচ্ছন্ন স্যানিটেশন ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের শেষে বিশ্বের ৮৯ শতাংশ মানুষ উন্নত পানি সরবরাহের আওতায় এসেছে, যা বিগত দু’দশকের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। তবে এই অগ্রগতি সত্ত্বেও ৭৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ দূষিত উৎস থেকে পানি ব্যবহার করে। জারে ভর্তি মিনারেল ওয়াটারের নামে খাওয়ানো হচ্ছে দূষিত পানি। রাজধানী ঢাকা ও তার আশে পাশে বৈধ ও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা প্রায় তিনশত কারখানায়ই উৎপাদন হচ্ছে দূষিত খাবার পানি। দু-একটি বাদে অধিকাংশ মিনারেল ওয়াটারের কারখানা স্থাপন করা হয়েছে অপরিচ্ছন্ন স্থানে। রাজধানীর অনেক এলাকাতেই বর্তমানে পানির সংকট চলছে। অনেক এলাকায় পানি পাওয়া গেলেও তাদে দূগন্ধ ও ময়লা। সরাসরি ওয়াসার সাপ্লাই পানি পান করলে পেটের পীড়াসহ নানা অসুখ-বিসুখে ভুগতে হয়। আর এ সব কারণেই সামর্থ্যবান মানুষ এখন বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য বেসরকারী খাতের মিনারেল ওয়াটারের ওপর নির্ভরশীল।


পৃথিবীর সকল প্রাণেরই উৎস পানি এবং সকলেই পানির ওপর নির্ভরশীল। পৃথিবীর ৭০০কোটি মানুষ কোটি মানুষ আজ খাদ্য ও জ্বালানির মতো মৌলিক বিষয়ের পাশাপাশি যে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তা হচ্ছে সবার জন্য বিশুদ্ধ ও পর্যাপ্ত নিরাপদ খাবার পানি। আর যেসব অ্যঞ্চলে পানি স্বল্পতা সেসব অঞ্চলে সৃষ্টি হচ্ছে পানি যুদ্ধের সম্ভাবনা। যেমন লেবানন-ইসরায়েল এর মধ্যে হাসবানি নদীর পানি নিয়ে বিরোধ, তেমনি তুরস্ক-সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে ইউফেটিস নিয়ে, সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে গ্যালিলি সাগর নিয়ে। ইসরায়েল-ফিলিস্তান ও জর্দানের মধ্যে জর্দান নদী নিয়ে সুদান, মিশর, ইথিওপিয়া ও আরো কিছু দেশের মধ্যে নীলনদ নিয়ে, সেনেগাল ও মৌরিতানিয়ার মধ্যে সেনেগাল নদী নিয়ে, ইরান ও আফগানিস্থানের মধ্যে হেলম্যান্ড নদী নিয়ে আর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিবাদতো আছেই। তাই পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের নুতন করে ভাবতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই পানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পানি নিয়ে উদ্ভুত সকল সমস্যার সমাধানে বাস্তবশুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে তা না হলে অচিরেই বিশ্ব সোনা-রূপা হিরা জহরত নয়, যুদ্ধে লিপ্ত হবে পানি নিয়ে। বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা আর পানির উৎসের কার্যকর ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া হবে বিশ্ব পানি দিবসে এই প্রত্যাশা আমাদের।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:২৬
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×