somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে আজীবন নিবেদিত অমর কবি কাজী নজরুল ইসলামের১১৯তম জন্ম জয়ন্তীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২৫ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাম্য, দ্রোহ আর প্রেমের কবি, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাণ পুরুষ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯ তম জন্ম জয়ন্তী আজ। কাজী নজরুল ইসলাম বাঙ্গালি মনীষার এক মহত্তম বিকাশ। বাঙালির সৃষ্টিশীলতার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন। এক হাতে বাঁশের বাঁশরী, আরেক হাতে রণতূর্য নিয়ে ধুমকেতুর মতোই বাংলা সাহিত্যে আবির্ভাব হয়েছিলেন কবি নজরুল। সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রায় সর্বক্ষেত্রে তাঁর দৃপ্ত পদাচারণা। নজরুল তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভার স্পর্শে বাংলা সাহিত্য-সঙ্গীতে যুক্ত করেছেন যুগ-মাত্রা। তিনি একাধারে কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, সুরকার, শিল্পী, অভিনেতা, এবং পরিচালক। সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতিটি ধারায় তিনি ছিলেন সমুজ্জল। মানবতার অগ্রদূত কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা ১৩০৬ সালের আজকের দিনে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন । আজ কবির ১১৯তম জন্মবার্ষিকী। প্রেম ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৫ মে, বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন । তবে বাংলাদেশের সঙ্গে বালক বয়স থেকে তাঁর মৃত্যুকাল পর্যন্ত ছিল কবির গভীর সম্পর্ক। কৈশোরে পিতৃবিয়োগের পর থেকেই স্থান থেকে স্থানান্তরে নজরুলের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। কখনো শিক্ষালাভের আশায়, কখনো জীবনধারণের বেপরোয়া চাপে সেই অস্থির কিশোরের ছুটে বেড়ানোর প্রবণতা কারো নজর এড়ায় না। ১৯০৮ সালে পিতা কাজী ফকির আহমদের প্রয়াণের সময়ে নজরুলের বয়স আট বছর দশ মাস। এরপর বছরখানেক কবি জন্মভূমি চুরুলিয়ায় গ্রামের মক্তবে পড়াবার কাজ ও মসজিদে ইমামদারির কাজ অর্থের আশায় করেছিলেন। পিতৃহীন, সহায়-সম্বলহীন বালক নজরুলকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে তাকে মানুষ করে গড়ে তোলার অভিপ্রায়ে, কবিকে মৈমনসিংহের এক পল্লীগ্রামে নিয়ে এসেছিলেন বর্ধমানে কর্মরত ওই গ্রামের এক পুলিশ অফিসার। এখানে-ওখানে কাজ এবং পাঁচটি স্কুলে প্রায় বছর দশেক লেখাপড়ার টানে তিনি ছুটে বেড়িয়েছিলেন। কখনো মঙ্গলকোট, কখনো ময়মনসিংহ এবং কখনো ফের শিয়ারসোল স্কুলে। স্কুলের ফার্স্টবয় হয়েও ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রি-টেস্ট পরীক্ষার পর তাঁর ফাইনালে আর বসা হয়ে ওঠেনি।

কবি কাজী নজরুল স্বভাবে ছিলেন আজীবন কিঞ্চিৎ অস্থির, কিঞ্চিৎ চঞ্চল। কিন্তু প্রতিভার এই বরপুত্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে ছিলেন আজীবন গভীর নিমগ্ন এক স্রষ্টা। অস্থিরতা তাঁর বৈচিত্র্য ভাবনার সহচর। আর চাঞ্চল্য তাঁর অদমিত প্রাণশক্তির প্রকাশ। সাহিত্যকর্মে অসামান্য অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ‘জগত্তারিণী স্বর্ণ-পদক, ভারত সরকার ‘পদ্মভূষণ’, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডি. লিট ডিগ্রী এবং বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘একুশে পদক প্রদান করেন। তাঁর লেখা গানের সংখ্যা প্রায় তিন হাজারের মত। ব্রিটিশশাসিত ভারতের অখন্ড বঙ্গভূমির বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নিলেও নন্দিত কবিপুরুষ কাজী নজরুল ইসলাম আজ আমাদের জাতীয় কবি। রাজনৈতিক উত্থান-পতনে নানা ভৌগোলিক বিভাজনের সূত্রে এক অর্থে ভিনদেশি হয়েও যে-কারণে তিনি আজ আমাদের জাতীয় কবির মর্যাদায় অভিষিক্ত, এর পেছনে রয়েছে তাঁর প্রতি ও তাঁর সৃষ্টিকর্মের প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এবং একই সঙ্গে এদেশের মানুষের সঙ্গে তাঁর নিজের সম্পৃক্ততা, সম্প্রীতি ও আক্ষরিক অর্থেই প্রেমের বন্ধন। অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক বাংলার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনাবসান ঘটে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার পিজি হাসপাতালে। কিন্তু আমাদের হৃদয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যু নেই; এদেশের শিল্প-সংস্কৃতির মূলধারায় নজরুলের সৃষ্টিকর্ম হারাবে না তার চিরন্তন প্রবহমানতাকে। আজও তিনি বেঁচে আছেন বেঁচে থাকবেন বহুকাল তাঁর কবিতায়, আর গানে গানে।


বাংলা ভাষা ও সাহিত্রের চির ভাস্বর ও চির অম্লান জাতীয় কবির আজ ১১৯তম জন্মবার্ষিকী। সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে আজীবন নিবেদিত এই অমর কবির জন্মদিনে তাঁকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবসায়।

(বিঃদ্রঃ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ, যুগস্রষ্টাম বিদ্রোহী কবি এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নাজরুল ইসলামের জন্ম-মৃত্যু ও সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশী ওয়াকিবহাল। তাই অধিক লিখে পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটানো থেকে বিরত থেকে স্বল্পপরিসরে তাঁর জন্ম দিনে আমার এই স্মৃতিচারণ, শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা নিবেদন)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:৩৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×