রক্ত দিন জীবন বাঁচান। কথাটার সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। অথচ রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মানসিকতা এখনও আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি সে ভাবে। প্রতি দিন বিশ্বে রক্তের অভাবে বহু মানুষের প্রাণ গেলেও সুস্থ মানুষেরা অনেকেই রক্তদান সম্পর্কে ভুল ধারণা, ইতস্তত ভাব কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন এবং ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’-এই থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয়েছিল বিশ্ব রক্তদান দিবস। ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ দিবস পালনের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে। রক্তদান সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে ২০০৪ সাল থেকে সারা বিশ্বে প্রতি বছর ১৪ জুন ওয়ার্ল্ড ব্লাড ডোনর ডে (রক্তদাতা দিবস) পালিত হয়। যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন তাদেরসহ সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য। ১৪ জুন দিবসটি পালনের আরও একটি তাৎপর্য রয়েছে। এদিন জন্ম হয়েছিল বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টিনারের। এই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছিলেন রক্তের গ্রুপ ‘এ, বি, ও,এবি’। স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদানকারী আড়ালে থাকা সেসব মানুষের উদ্দেশে, এসব অজানা বীরের উদ্দেশে, উৎসর্গীকৃত ১৪ জুনের বিশ্ব রক্তদান দিবস। বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘রক্ত আমাদের সাথে সংযুক্ত করে সব’।
দেশে সরকারিভাবে প্রথম নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচি শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। গত ১৮ বছরে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এই সময়ে শুধু স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যাই বাড়েনি কমেছে পেশাদার রক্ত ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যও। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দেশে প্রত্যক্ষ রক্তদাতা রয়েছেন ৭০ শতাংশ, আর বিভিন্ন সংস্থা ও ব্লাড ব্যাংকের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৩০ শতাংশ। রক্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রদান সব প্রক্রিয়াই নিরাপদ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে বলেও জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
প্রতিবছর ৮ কোটি ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান হয়, অথচ এর মাত্র ৩৮ শতাংশ সংগ্রহ হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে, যেখানে বাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া এখনো বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের রক্তের চাহিদা হলে নির্ভর করতে হয় নিজের পরিবারের সদস্য বা নিজের বন্ধুদের রক্তদানের ওপর, আর অনেক দেশে পেশাদারি রক্তদাতা অর্থের বিনিময়ে রক্ত দান করে আসছে রোগীদের। অথচ বিশ্বের নানা দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জানা যায়, ‘নিরাপদ রক্ত সরবরাহের’ মূল ভিত্তি হলো স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে দান করা রক্ত। কারণ তাদের রক্ত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং এসব রক্তের মধ্য দিয়ে গ্রহীতার মধ্যে জীবনসংশয়ী সংক্রমণ, যেমন এইচআইভি ও হেপাটাইটিস সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম। রক্তদানের ভয় কাটাতে জেনে নিন কী ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন।
রক্তদানের আগেঃ
বেশি করে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান। যেমন রেড মিট, মাছ, ডিম, বিনস, পালং শাক, সিরিয়াল, কিসমিস।
রক্ত দেওয়ার আগের রাতে ভাল করে ঘুমোন।
রক্তদানের আগে অন্তত ৫০০ মিলিলিটার জল খান।
রক্তদানের আগে স্বাস্থ্যকর খাবার খান। ফ্যাটি খাবার যেমন ভাজা বা তৈলাক্ত খাবার, আইসক্রিম এড়িয়ে চলুন।
যদি আপনি শুধু অনুচক্রিকা দান করেন তা হলে মনে রাখবেন রক্তদানের অন্তত দু’দিন আগে থেকে আপনার শরীর সম্পূর্ণ অ্যাসপিরিন ফ্রি রাখতে হবে।
অবশ্যই নিজের ডোনার কার্ড, আইডেন্টিটি কার্ড সঙ্গে রাখুন।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ফেসবুক লিংকঃ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৮ রাত ৮:১৭