somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেরবীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ। দুঃসাহসিক অভিযানের এক দলনেতা মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডো দলের একটি উপদলের দলনেতা আহসান উল্লাহ। স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট রাতে (তখন ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ১৬ আগস্ট)। মোংলা বন্দরে পৃথিবীর বিখ্যাত যুদ্ধের ইতিহাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নৌকমান্ডো অপারেশনের গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায়। দুঃসাহসিকতাপূর্ণ এই অভিযান তখন গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। মোংলা বন্দরে আহসান উল্লাহর নেতৃত্বে ৪০ জন নৌকমান্ডো অংশ নেন। ২০০৭ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন এই অকুতভয় মুক্তি যোদ্ধা। আজ তার ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ ১৯৪২ সালের ২ ডিসেম্বর ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার আহমেদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আমিন উল্লাহ এবং মায়ের নাম জরিফা খাতুন। আহসান উল্লাহ চাকরি করতেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে ফ্রান্সের তুলন নৌঘাঁটিতে প্রশিক্ষণে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে ফ্রান্সের তুলন নৌঘাঁটিতে প্রশিক্ষণে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট আহসান উল্লাহ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিজের কাছে থাকা ছোট রেডিও অন করলেন। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রটি অন করে কান পেতে থাকলেন। এই কেন্দ্রে একটি গান বাজার কথা। সেটা শুধু তিনিই জানেন। টিক টিক করে সময় এগোতে থাকল। সময় যেন কাটতেই চায় না। উৎকণ্ঠা নিয়ে বসে আছেন। ঠিক যখন সাড়ে সাতটা, তখন তিনি শুনতে পেলেন তাঁর সেই কাঙ্ক্ষিত গান: ‘আমার পুতুল আজকে যাবে প্রথম শ্বশুরবাড়ি।’
গানটি শুনে আহসান উল্লাহ আর দেরি করলেন না। দ্রুত সহযোদ্ধা নৌকমান্ডোদের একত্র করে জানালেন, আজ রাতেই হবে তাঁদের প্রতীক্ষিত অপারেশন। তারপর আবেগময় কণ্ঠে সবাই শপথবাক্য পাঠ করলেন। এরপর সারা দিন গোপন শিবিরে উৎকণ্ঠায় কাটল। সন্ধ্যায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাতে রওনা হলেন লক্ষ্যস্থলে। গোপন শিবির থেকে লক্ষ্যস্থল পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে। তাঁরা লক্ষ্যস্থলে যখন পৌঁছালেন, তখন ভোর সাড়ে চারটা। তাঁর সহযোদ্ধারা দ্রুত বুকে মাইন বেঁধে নিলেন। তারপর পায়ে ফিনস পরে নিঃশব্দে নেমে পড়লেন পানিতে। পশুর নদীতে জাহাজ ছড়িয়ে আছে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে। পানিতে নেমে নৌকমান্ডোরা ছড়িয়ে পড়লেন জাহাজগুলো লক্ষ্য করে। কোনো জাহাজের জন্য দুজন, কোনো জাহাজের জন্য একজন। নদীতে বড় বড় ঢেউ। বিশাল একেকটা ঢেউ শোঁ শোঁ শব্দে গড়িয়ে যাচ্ছে নৌকমান্ডোদের নাক-মুখের ওপর দিয়ে। অন্যদিকে বন্দরের সার্চলাইটের আলো সমানে ঘুরছে নদীর ওপর। কোনো কোনো জাহাজেরও সার্চলাইট জ্বালানো। আলোর ঝলকানির মধ্যে এগিয়ে যেতে থাকেন তাঁরা। নৌকমান্ডোরা সফলতার সঙ্গে বেশির ভাগ জাহাজে লিমপেট মাইন লাগালেন। তারপর সময়ক্ষেপণ না করে সাঁতার কেটে চলে গেলেন নিরাপদ স্থানে। তখন ভোর আনুমানিক সাড়ে পাঁচটা বা পৌনে ছয়টা। মাঝনদীতে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটল বিকট শব্দে। দু-তিন মিনিট পর আরেকটি। তারপর নদীতে শুরু হলো লঙ্কাকাণ্ড। একনাগাড়ে সাত-আট মিনিট ধরে একটির পর একটি মাইন বিস্ফোরণ। ৩৫-৪০টি মাইনের কান ফাটানো শব্দে বন্দরে অবস্থানরত আতঙ্কিত পাকিস্তানি সেনারা ছোটাছুটি করতে থাকল। এ ঘটনা মংলা বন্দরে। পৃথিবীর বিখ্যাত যুদ্ধের ইতিহাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নৌকমান্ডো অপারেশনের গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায়। দুঃসাহসিকতাপূর্ণ এই অভিযান তখন গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। মংলা বন্দরে আহসান উল্লাহর নেতৃত্বে ৪০ জন নৌকমান্ডো অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য আহসান উল্লাহকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২৭৮। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী নূরজাহান বেগম ও দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে যান। তাঁর স্ত্রী ও ছেলেরা বর্তমানে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বসবাস করেন। আজ বীর মুুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ'র ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৩১
৫টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×