somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশু সাহিত্যিক ও সমাজসেবী সুখলতা রাও (রায়) এর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৯ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিস্মৃতির আড়ালে এক আলোকিত নারী সুখলতা রাও (রায়)। ছড়াকার সুকুমার রায়ের সহোদরা ও চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পিসি হলেন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও সমাজসেবক সুখলতা রায়। পদ্য ও গদ্য উভয় প্রকার রচনাতেই দক্ষ ছিলেন সুখলতা। উঁচুমানের ছবি আঁকতেন জল ও তেলরঙে। পড়াশোনা যখন করতেন, সেটাও গভীর মনোযোগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে। তনি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় সাহিত্যচর্চা করেন এবং কুড়িটির মতো গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর শিশুতোষ গ্রন্থগুলি বিপুল প্রশংসা লাভ করে। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলোঃ লালিভুলির দেশে, নিজে পড়, নিজে শেখ, গল্প আর গল্প (১৯১২), খোকা এলো বেড়িয়ে (১৯১৬), নতুন পড়া (১৯২২), সোনার ময়ূর, নতুন ছড়া (১৯৫২), বিদেশী ছড়া (১৯৬২), নানান দেশের রূপকথা, পথের আলো, ঈশপের গল্প, হিতোপদেশের গল্প, New Steps, Living Lights প্রভৃতি।রবীন্দ্ররচনার বহু অনুবাদকের তালিকায় সুখলতারও একটি সম্মানযোগ্য স্থান আছে। রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা ও রানী’ নাটক ও ‘জাপান যাত্রী’ ভ্রমণ পত্রাবলির অনুবাদ করেছিলেন তিনি যথাক্রমে ‘Devouring Love’ ও ‘A Visit to japan’ নামে। নিউইয়র্ক থেকে অনুবাদ দুটি প্রকাশ হয়েছিল রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকীর (১৯৬১) লগ্নে ও ‘East -West Institute Series’-এর বই হিসেবে। সুখলতা রায়ের ‘নিজে পড়’ গ্রন্থটি শিশুসাহিত্য সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত হয় এবং এর জন্য তিনি ‘লেখিকা’ পুরস্কার ও ভারত সরকারের ‘সাহিত্য পুরস্কার’ (১৯৫৬) লাভ করেন। এছাড়া তার আরও কয়েকটি গ্রন্থ পুরস্কৃত হয়। সমাজসেবায় অবদান রাখার জন্য তিনি স্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে ‘কাইজার-ই-হিন্দ’ পদক লাভ করেন। আজ এই গুণী সাহিত্যিকের মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৬৯ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। শিশু সাহিত্যিক ও সমাজসেবী সুখলতা রায় এর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি


(রায় পরিবারঃ ছয় সন্তানসহ সস্ত্রীক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। (বাঁ দিক থেকে) শান্তিলতা, বিধুমুখী (স্ত্রী), পুণ্যলতা, সুকুমার, উপেন্দ্রকিশোর, (পিছনে) সুবিনয়, সুবিমল ও (একেবারে ডান দিকে) সুখলতা)
সুখলতা রায়, ডাক নাম হাসি। ১৮৮৬ সালের ১০শে অক্টোবর, কলকাতার ১৩ নং কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন হাসি ওরফে সুখলতা। তাদের আদি বাড়ি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহের মসুয়ায়। সুখলতার পিতা বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী ও যন্ত্রকুশলী উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। তার মা বিধুমুখী দেবী ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক, ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম প্রধান নেতা দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা। শিশুসাহিত্যিক, ছড়াকার, বাংলা সাহিত্যে ননসেন্স রাইমের প্রবর্তক সুকুমার রায় তার সহদর ভ্রাতা। এ ছাড়াও তার আরও দুই ভাই ছিলেন, যাদের নাম সুবিনয় রায় ও সুকোমল রায়। তার দুই বোন প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও শান্তিলতা রায়। প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক লীলা মজুমদার তার খুড়তুতো বোন এবং অস্কারবিজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় ছিলেন তার ভ্রাতুষ্পুত্র। পিতা উপেন্দ্রকিশোর সুখলতাকে ভর্তি করে দিলেন ব্রাহ্মবালিকা বিদ্যালয়ে। এখান থেকেই এন্ট্রান্স পাস করলেন তিনি। তারপর ভর্তি হলেন বিএ ক্লাসে বেথুন কলেজে। কলেজের পড়া শেষ করে কিছুদিন শিক্ষকতাও করেন সুখলতা। তারপর ২১ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেল ওড়িশার ‘ভক্তকবি’ মধুসূদন রাওয়ের প্রথম সন্তান ড. জয়ন্ত রাওয়ের সঙ্গে। জয়ন্ত রাও ওড়িশা চিকিৎসা বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে প্রখ্যাত সিভিল সার্জন হিসেবে সুপরিচিত হন। সুখলতা রায় তখন হাসি থেকে হয়ে গেলেন সুখলতা রাও। কলকাতা থেকে কিছুকালের জন্য উঠে এলেন ওড়িশার কটকে, স্বামীর গৃহে। সেখানে স্বামীর সহযোগিতায় সুখলতা সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন এবং কটকে ‘শিশু ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র’, ‘উড়িষ্যা নারী সেবা সংঘ’ প্রভৃতি সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সমাজসেবার পাশাপাশি তিনি বাংলা ও ইংরেজিতে আলোক নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন।


বিশ্ব কবি রবি ঠাকুরের সঙ্গে একটা স্নেহ ও সংস্কৃতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে সুখলতার। মনসামঙ্গলের বিখ্যাত বেহুলা-লখিন্দর উপাখ্যান নিয়ে ইংরেজিতে ১২টি গল্প লিখে ১২টা রঙিন ছবি নিজে হাতে এঁকে সুখলতা ‘BEHULA’ নাম দিয়ে একটা বই প্রকাশ করেছিলেন। এ বইয়ের জন্য রবীন্দ্রনাথ এক চমৎকার ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। আসলে রবীন্দ্রনাথের ভালো লেগেছিল বেহুলার ছবি। সুখলতা রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে লিখেছেন, “তিনি ইচ্ছা করাতে ‘সন্দেশ’ কাগজে প্রকাশিত তার একটি কবিতার ছবি এঁকে দিয়েছিলাম।” মডার্ন রিভিউয়ে সাবিত্রী-সত্যবানের গল্পকে ভিত্তি করে আঁকা সুখলতার একটি ছবি ‘In Quest of the Beloved’ ছাপা হয়েছিল। সেটি দেখে জনৈক উচ্চপদস্থ ইংরেজ কর্মচারী রবীন্দ্রনাথকে ছবিটি তার কাছে ভালোলাগার ও সেটি কেনার ইচ্ছার কথা জানান। রবীন্দ্রনাথ চিঠি লিখে সুখলতাকে একথা জানান এবং ছবিখানি তাকে পাঠিয়ে দেন। ১৯৬৯ সালের ৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন সুখলতা রাও। রায় পরিবারের এ গুণী মেয়েটিকে সবাই তেমন করে মনে রাখেননি। আজ তাঁর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। শিশু সাহিত্যিক ও সমাজসেবী সুখলতা রাও (রায়) এর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
পাঠকের জন্য সুখলতা রাও এর একটি তাঁর লেখা একটা খুব জনপ্রিয় ছড়া !

দিগনগরের বুড়ি এল,
তিনটি মেয়ে মুঠোয় ধরে;
একটি সেঁকে, একটি বাড়ে,
একটি ভাল রান্না করে,
মিহি সুতো কাটতে পারে,
ঘরের কাজও করতে পারে;
ও গিন্নীমা, কিনবে নাকি
একটি মেয়ে, আদর করে?


নূর মোহাম্মদ নূরু
গনমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:১৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×