somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যশোহরের নির্ভীক সাংবাদিক শামসুর রহমান ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যশোহরের সাংবাদিক দৈনিক জনকণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি শামছুর রহমানের আজ ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিগত ২০০০ সালের ১৬ জুলাই জনকন্ঠের যশোর অফিসে ঢুকে কর্মরত অবস্থায় দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থি চোরাচালান সিন্ডিকেট এবং কোটচাঁদপুরের হুন্ডি ব্যবসার খবর নিয়ে তার কলম ছিল সোচ্ছার। এসব প্রতিবেদনের কারণে অনেকের তোপের মুখে পড়েন তিনি। অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তরা তাঁকে বারবার জীবননাশের হুমকিও দিয়েছে বহুবার। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ১৭বছর পার হলেও আজ অবধি বিচার হয়নি; বরং গত ১০ বছর ধরে আইনের মারপ্যাঁচে আটকে রয়েছে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া। প্রসঙ্গতঃ ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামসুর রহমান খুন হবার পর ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এ মামলার বাদি শহীদ শামসুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আক্তার লাকী। এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছে। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‌্যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হার্টস্ট্রোকে এবং যশোর সদরের চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন। আজ সাংবাদিক শামসুর রহমানের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। অকুতভয় নির্ভিক সাংবাদি শামসুর রহমানের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।


(কন্যার সাথে সাংবাদিক শামসুর রহমান)
সাংবাদিক শামসুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৫ মে শার্শা থানার শালকোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম সোহরাব উদ্দিন, মাতা মোছাঃ খাইরুন্নেছা বেগম। শামসুর রহমান কেবল ১৯৭২ সালে এস. এস. সি ও ১৯৭৪ সালে এইচ. এস. সি পাশ করেন। ১৯৭৭ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বি. এ অনার্স এবং ১৯৭৮ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. পাশ করেন। সাংবাদিকতা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি দৈনিক ঠিকানা, দৈনিক বাংলা, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, দৈনিক গণশক্তি পত্রিকায় কাজ করেছেন। এছাড়া তাঁর বিভিন্ন উপ-সম্পাদকীয় ও রাজনৈতিক বিষয়ক লেখা দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮০-১৯৮১ সালে দৈনিক ঠিকানার (যশোর) স্টাফ রিপোর্টার, ১৯৮২-১৯৮৩ সালে দৈনিক বাংলার নওয়াপাড়া নিজস্ব সাংবাদিকতা, ১৯৮৪-১৯৮৬ সালে তিনি দৈনিক বাংলার যশোর এর নিজস্ব সংবাদদাতা, ১৯৮৬ (নভেম্বর) ১৯৯৩ সালে দৈনিক বাংলার স্টাফ রিপোর্টার ও সিনিয়ার রিপোর্টার, ১৯৯৩ (নভেম্বর) দৈনিক বাংলার জেলা ব্যুরো প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। জানুয়ারী ১৯৯৭ ইং সাল থেকে তিনি জনকন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলায় নিয়মিত রাজনীতি, সমাজ অর্থনীতি, ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে উপ-সম্পাদকীয় লিখতেন। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় নিয়মিত রিপোর্ট ও বিভিন্ন বিষয়ে নিবন্ধ লিখতেন। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় আন্তর্জাতিক বিভাগে ভারতীয় রাজনীতির উপর তাঁর প্রায় পাঁচ শতাধিক লেখা প্রকাশিত হয়। কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক গণশক্তি পত্রিকায় বিভিন্ন বিভাগে তিনি নিয়মিত লিখতেন।


তথাকথিত সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে এ অঞ্চলের মানুষের ওপর যে অবর্ণনীয় জুলুম অত্যাচার চালিয়ে আসছে শামছুর রহমানের কলম তার বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্ছার ছিল। সে কারনে শামছুর রহমানের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গোপন চরমপন্থি দলগুলো। চোরাচালান ও চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতে যেয়েই তিনি তাদের রোষানলে পড়েন। অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তরা তাঁকে জীবননাশের হুমকিও দিয়েছে বহুবার। অন্যায়, অনাচার, দূর্নীতি ও সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে যাঁর কলম ছিল সর্বদা সোচ্ছার। সেই কলম আর চলবে না, চিরদিনের জন্য তার কলম থেমে গেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচার কাজ বন্ধ হয়ে আছে উল্লেখ করে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম পিটু জানান, তাদেরও প্রত্যাশা আপিলের দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হবে। দীর্ঘদিনেও চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির বিচার না হওয়ায় নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয় পুরনো বিতর্কিত তদন্ত বাতিলপূর্বক মামলাটি পুনঃতদন্তের। ২০০০ সালের ১৬ জুলাই ঘাতকের তপ্ত বুলেট অকুতভয় সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবলের কলম স্তব্ধ করে দেয়। আজ তার ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। অকুতভয় নির্ভিক সাংবাদি শামসুর রহমানের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:২৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×