somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামী রেনেসাঁর কবি ও ঔপন্যাসিক সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আধুনিক বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রথম দিকের মুসলমান সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী। বাংলার ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস, বাঙালির ইতিহাস, বাংলাদেশের মুসলমানদের ইতিহাস, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস, উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক জাজ্বল্যমান তারকার নাম সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী। রাজনৈতিক চেতনা, শিক্ষা, সর্বোপরি স্বাধিকার আদায়ের চেতনা বিকাশে যারা রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সমভাবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন তাদের মধ্যে ইসমাইল হোসেন সিরাজীর স্থান অন্যতম। তবে ব্রিটিশ আমলেই জন্ম, আর ব্রিটিশ আমলেই মৃত্যু বলে স্বাধীনতার স্বাদ নিতে পারেননি। পারেননি মুক্ত বিহঙ্গের মতো মুক্ত আকাশে ডানা মেলতে। কিন্তু মুক্তচিন্তার অধিকারী এ স্বাপ্নিক মানুষটি মুক্তির চেতনায় ছিলেন সদা বিভোর। স্বাধীনতার প্রত্যাশায় জেল-জুলুম, টর্চার সেল, নির্যাতন, নিপীড়ন কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করেননি। মানবতার মুক্তি এবং মানবাধিকার রক্ষার জন্য দেশব্যাপী চষে বেড়িয়েছেন এই হৃদয়বান মানুষটি। সরকারের হুমকি কিংবা পুলিশের ডান্ডাবেরী তাঁর কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে পারেনি। মুসলিম জাতির হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে তাঁর কলম চালিত হয়েছিলো অপ্রতিহত গতিতে। তাঁর কলমের তুলিতে উজ্জ্বল হয়ে ফুটে ওঠেছে ইসলামের ইতিহাস ঐতিহ্য আর শান শওকত। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, আনলবর্ষী বক্তা, কবি ও বাগ্মী ইসমাইল হোসেন সিরাজীর আজ ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৩১ সালের আজকের দিনে তিনি ই্ন্তেকাল করেন। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে নবযুগের নতুন জীবন চেতনা ও সাংস্কৃতিক বোধ জাগ্রতকারী কবি ও ঔপন্যাসিক সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।


জাতীয় জাগরণের অগ্রদূত সৈয়দ ইসমাইল হোসেন ১৮৮০ সালের ১৩ জুলাই সিরাজগঞ্জের বাণীকুঞ্জ গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক ও ধর্মীয় কারণে তিনি নামের শেষে 'সিরাজী' গ্রহণ করেন। লেখাপড়া করেন জ্ঞানদায়িনী মাইনর স্কুল এবং বিএল হাইস্কুলে। তার পরিবার এতই দরিদ্র ছিল যে তার পড়াশুনার খরচ চালাতে পারত না। তবে নিজের অদম্য প্রচেষ্টায় লেখা পড়া চালিয়ে যান তিনি। মাত্র ১৯ বছর বয়সে মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহর সহযোগিতায় ১৮৯৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অনল প্রবাহ'। ১৯০৮ সালে কাব্যগ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হলে কাব্যে রাজদ্রোহ প্রচার এবং মুসলমান সমাজের মধ্যে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে ১৯১০ সালের মার্চে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। একই বছরের ০৯ সেপ্টেম্বর সশ্রম কারাদন্ড প্রদান। ১৯১২ সালের ১৪ মে হাজারীবাগ জেল থেকে মুক্তি পান সিরাজী। একই বছর বলকান যুদ্ধের সময় তিনি একদল চিকিৎসকের সাথে তুরস্কে যান। পরবর্তীতে প্রথমে তিনি কংগ্রেস ও পরে মুসলিম লীগে যোগ দেন। সিরাজীই উপমহাদেশের প্রথম কবি যিনি স্বাধীনতার জন্য, জাতীয় জাগরণের জন্য কবিতা লিখে জেলের ঘানি টানেন। শুধু তাই নয় তাঁর কণ্ঠ রোধ করার জন্য তাঁর বক্তৃতা ও সভাস্থলে ব্রিটিশ সরকার ৮২ বার ১৪৪ ধারা জারি করেছিলো।


বাংলার পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের নবজাগরণের অন্যতম জাতীয় বীর, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী রচিত কাব্য, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী ও সঙ্গীত বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থের সংখ্যা ৩২টি। এগুলো হলো- কাব্যগ্রন্থঃ ১। উচ্ছ্বাস (১৯০৭), ২। নব উদ্দীপনা (১৯০৭), ৩। উদ্বোধন (১৯০৮), ৪। স্পেন বিজয় কাব্য (১৯৮৪), ৫। মহাশিক্ষা কাব্য প্রথম খন্ড (১৯৬৯),৬। মহাশিক্ষা কাব্য দ্বিতীয় খন্ড (১৯৭১)। উপন্যাসঃ ১। রায়নন্দিনী (১৯১৫), ২। তারাবাঈ (১৯১৬), ৩। নূরউদ্দীন (১৯১৯)। প্রবন্ধ গ্রন্থঃ ১। মহানগরী কর্ডোভা (১৯০৭), ২। স্ত্রীশিক্ষা (১৯০৭), ৩। আদব কায়দা শিক্ষা (১৯১৪), ৪। সুচিন্তা প্রথম খন্ড (১৯১৬), ৫। তুর্কি নারী জীবন (১৯১৩), ভ্রমণ কাহিনীঃ ১। তুরস্ক ভ্রমণ (১৯১৩)। সঙ্গীত গ্রন্থঃ ১। সঙ্গীত সঞ্জীবনী (১৯১৬), ২। প্রেমাঞ্জলী (১৯১৬) প্রভৃতি। তাঁর অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থসমূহঃ ১। সুধাঞ্জলী, ২। গৌরব কাহিনী, ৩। কুসুমাঞ্জলী, ৪। আবে হায়াৎ, ৫। কাব্য, ৬। কুসুমোদ্যান, ৭। পুস্পাঞ্জলী এবং অসমাপ্ত উপন্যাসঃ ১। বঙ্গ ও বিহার বিজয় এবং ২। জাহানারা।


১৯৩১ সালের ১৭ জুলাই অগ্নিপুরুষ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ইন্তেকাল করেন। মাত্র বায়ান্ন বছর দুই দিন বেঁচে ছিলেন এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। এই স্বল্পকালীন সময়ে এশিয়া-ইউরোপ ভ্রমণ করেছেন তিনি। বলকান যুদ্ধে তাঁর সেবার খ্যাতি এতই বিশাল ছিলো, যার কারণে লন্ডন থেকে প্রকাশিত 'ডেইলি নিউজ' পত্রিকায় ১৯১৩ সালের ২৩ জানুয়ারি ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ওপর একটি বড় প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিলো। প্রবন্ধের পরতে পরতে ছিলো ইসমাইল হোসেনের প্রশংসা আর প্রশস্তি। এই বিরল সৌভাগ্য ভারতীয় মুসলিমের জন্যে তখন ছিলো অকল্পনীয়। তাঁর জীবনাবসানে ব্রিটিশ সরকার হারায় তাদের শক্তিশালী প্রতিদ্বনদ্বীকে, অন্যদিকে বাঙালিরা হারায় তাদের শ্রেষ্ঠ সুহৃদকে। অগ্নিপুরুষ সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী কেবল ভারতের গৌরব ছিলেন তাই নয়, তিনি ইসলাম জগতের নেতা ছিলেন। আজ তাঁর ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। মহাকবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, পর্যটক, সাংবাদিক, সাধক ও বাগ্মী সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×