somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের মুক্তির অগ্রদূত, বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার শততম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৮ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্বের বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনের প্রবাদপ্রতিম চরিত্র নেলসন রোলিহালালা ম্যান্ডেলাঃ
নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকার গণতন্ত্রের জনক বলে বর্ণনা করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যালঘিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গ শাসক গোষ্ঠী যে অমানবিক বর্ণবাদীনীতির মাধ্যমে রাস্ট্র শাসন করেছে, তারই বিরুদ্ধে অবিশ্রান্তভাবে দীর্ঘকাল দুঃসাহসিক সংগ্রাম করেছেন নেলসন ম্যান্ডেলা। তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিযওয়ের নেতা হিসাবে এই বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতন্ত্রের জনক, কিংবদন্তী নেলসন ম্যান্ডেলা বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনকে নতুন গতি দিয়েছিলেন। দীর্ঘ ২৭ বছর ভয়ঙ্কর রবেন আইল্যান্ডের কাল কুঠরিতে বন্দী দশা কাটান তিনি। তা সত্বেও দমে যায়নি তাঁর আন্দোলন। তাঁর আন্দোলনের জেরেই দক্ষিণ আফ্রিকা আজ একটি রামধনুর দেশ। যেখানে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বেঁচে আছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের মুক্তির অগ্রদূত নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী মিঃ ম্যান্ডেলার আজ শততম জন্মবার্ষিকী। বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।


নেলসন রোলিহালালা ম্যান্ডেলা ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রান্সকিতে জন্মগ্রহণ করেন। ম্যান্ডেলার বাবা গাদলা হেনরি মপাকানইসা ম্‌ভেজো থেম্বু গ্রামের মোড়ল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ম্যান্ডেলার পিতার ছিলো চারজন স্ত্রী, ও সর্বমোট ১৩টি সন্তান (৪ পুত্র, ৯ কন্যা)। ম্যান্ডেলার মা নোসেকেনি ফ্যানি ছিলেন হেনরি ম্‌পাকানইসার ৩য় স্ত্রী। ফ্যানি ছিলেন ম্‌পেম্ভু হোসা গোত্রের ন্‌কেদামার কন্যা। নানার বাড়িতেই ম্যান্ডেলার শৈশব কাটে। তাঁর ডাক নাম "রোলিহালালা"র অর্থ হলো "গাছের ডাল ভাঙে যে", অর্থাৎ দুষ্ট ছেলে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা তাঁর গোত্রের দেয়া মাদিবা নামে পরিচিত। ম্যান্ডেলা তাঁর পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলে পড়ার সময়ে তাঁর শিক্ষিকা ম্‌দিঙ্গানে তাঁর ইংরেজি নাম রাখেন "নেলসন"। মেন্ডেলা প্রথমে ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও পরে উইট ওয়াটারসরেন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। ১৯৪২ সালে তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রি নেন।১৯৪৪ সাল পর্যন্ত তিনি ন্যাশনাল পার্টির দমন-পীড়ন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন এবং ১৯৫৬-৬১ সাল পর্যন্ত কারাবরণ করেন। ১৯৬২ সালে তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার গ্রেপ্তার করে ও অন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাবাস করেন।


দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের মুক্তির পথ নিয়ে রচিত তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘নো ইজি ওয়াক টু ফ্রীডম’ ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৯০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি তিনি কারামুক্ত হন। এর পর তিনি তাঁর দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের সাথে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। এর ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে এবং সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে ১৯৯৪ সালেগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর ১৯৯৪ হতে ১৯৯৯ পর্যন্ত তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি। পৃথিবীর অনুপ্রেরণা নেলসন ম্যান্ডেলা সারা জীবন যে সংগ্রাম ও ত্যাগ করেছেন তা অতুলনীয়। তাঁর সারাজীবনের ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সংগ্রামের ফলেই গণতন্ত্র ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ত্যাগ করে তিনি অনুকরনীয় দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের সাথে শান্তি আলোচনায় অবদান রাখার জন্য ম্যান্ডেলা এবং রাষ্ট্রপতি এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্ককে ১৯৯৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়। গত চার দশকে ম্যান্ডলা ২৫০টিরও অধিক পুরস্কার পেয়েছেন। তাছাড়াও তিনি ১৯৮৮ সালে শাখারভ পুরস্কারের অভিষেকে পুরস্কারটি যৌথভাবে অর্জন করেন।


ব্যক্তিগত জীবনে ম্যান্ডেলা ৩ বার বিয়ে করেন। তাঁর ৬টি সন্তান, ২০জন নাতি-নাতনি এবং অনেক প্রপৌত্র রয়েছে। থেম্বুর উপজাতীয় নেতা মান্দলা ম্যান্ডেলা হলেন নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি। ৯৫ বছর বয়স্ক বিশ্বের বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনের প্রবাদপ্রতিম চরিত্র নেলসন ম্যান্ডেলা ফুসফুসের জটিল সংক্রমণের শিকার হয়ে ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৫ বছর।


দক্ষিণ আফ্রিকার গণতন্ত্রের জনক, শান্তি প্রতিষ্ঠায় নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আজীবন সংগ্রামী শ্রদ্ধাভাজন প্রবীন নেতা নেলসন ম্যাণ্ডেলার আজ শততম জন্মবার্ষিকী, দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের মুক্তির অগ্রদূত নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।


এক নজরে নেলসন ম্যাণ্ডেলার সংগ্রামী জীবনঃ
জন্মঃ ১৮ জুলাই ১৯১৮, দক্ষিণ আফ্রিকা।
পারিবারিক নামঃ রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা। ‘রোলিহ্লাহ্লা’ অর্থ হল ‘গাছের ডাল ভাঙে যে’ অর্থাৎ দুষ্ট ছেলে।
যে নামে পরিচিতঃ নেলসন ম্যান্ডেলা। ‘নেলসন’ নামটি রেখেছিলেন তার স্কুল শিক্ষিকা।
বিশেষ নামঃ মাদিবা। দক্ষিণ আফ্রিকায় মাদিবা নামে পরিচিত নেলসন ম্যান্ডেলা।
জাতীয়তাঃ দক্ষিণ আফ্রিকা।
ধর্মঃ খ্রিস্টান।
রাজনৈতিক দলঃ আফ্রিকার জাতীয় কংগ্রেস।
যে জন্য পরিচিতঃ দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা ও প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট।
পুরস্কারঃ জীবদ্দশায় নোবেল শান্তি পুরস্কারসহ ২৫০টিরও বেশি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।
দাম্পত্য সঙ্গীঃ ইভিলিন ন্তকো মাসে (১৯৪৪-১৯৫৭), উইনি মাদিকিজেলা ম্যান্ডেলা (১৯৫৭-১৯৯৬), গ্রাসা মাচেল (১৯৯৮–বর্তমান)।
সন্তানঃ মাদিবা থেম্বেকিল, মাগগাথো লিওয়ানিকা, মাকাজিউই, মাকি, জিনানি, জিঞ্জিসোয়া।
অধ্যয়নকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ ইউনিভার্সিটি অব ফোর্ট হ্যায়ার, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এক্সটার্নাল সিস্টেম,
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা, ইউনিভার্সিটি অব দ্য উইটওয়াটারস্র্যান্ড।

মৃত্যুঃ ৫ ডিসেম্বর ২০১৩ (৯৫ বছর বয়সে)।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৯
১১টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×