somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৬ আগস্ট ২০১৮ ইং, ৭৩তম হিরোশিমা দিবসে আমাদের প্রত্যাশা পৃথিবী থেকে পরমাণু বোমা নিঃশেষ হোক, মানুষের জন্য নিরাপদ হোক পৃথিবী

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ ৬ আগস্ট ২০১৮ ইং সোমবার, মানবেতিহাসের কলঙ্কের ৭৩তম হিরোশিমা দিবস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা শহরে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৪৫ সালের ৫ আগস্ট 'মেজর জেমস আবি হপকিং' স্বাক্ষরিত নির্দেশনার মধ্য দিয়ে চুড়ান্ত হয় হিরোশিমা মিশন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের আত্মসমর্পণের আহ্বানে জাপান সাড়া না দেয়ায় তার নির্দেশেই ঠাণ্ডা মাথায় হিরোশিমায় চালানো হয় নারকীয় এই হামলা। এর উদ্দেশ্য ছিলো দুইটি। জাপানিদের জব্দ করা আর জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। এই মিশলে অংশ নেয় মোট ৭ টি বিমান। যুক্তরাষ্ট্রের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানের নির্দেশে হিরোশিমার স্থানীয় সময় সকাল ৭:০০ মিনিটে পর পর তিন বার সর্তক সাইরেন এজে উঠে। ভীত সন্ত্রস্ত হিরোশিমা বাসী আকাশে অনেক উচুতে কয়েকটি যুদ্ধ বিমান চক্কর দিতে দেখে। একটু পরে এদের সাথে যুক্ত হয় আরেকটি বিমান । অল্প পরেই বিমানগুলো দৃ্ষ্টির বাইরে মিলিয়ে যায়। ৭:৩০ মিনিটে বিপদমুক্ত সাইরেন বেজে উঠে হিরোশিমা বাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। কিন্তু, ৮:০০ টায় আবার ৩ টি বিমান আকাশে আবির্ভূত হয়। এবার এটা কে মামুলি বিমান বিবেচনা করে আর কোন সাইরেন বাজানো হয় নি। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই ঘটে গেল বিভিষিকা। হঠাৎই দানবের মতো হিরোশিমার আকাশের নিলিমায় উদয় হলো মার্কিন বি-টুয়েন্টি নাইন বোমারু বিমান এনোলা গে।


তিনিয়ান থেকে যাত্র পথে ক্যাপটেণ পর্সন্স ও ইলেকট্রনিক বিশেষঞ্জ লেফটেন্যান্ট জেপসন ' লিটল বয়ে'র সংযোজনের কার্য চুড়ান্ত সম্পন্ন করেন। লক্ষ্য থেকে ৩০ মাইল দূরে অঅবস্থান কালে সকাল ৭:৩০ মিনিটে ক্যাপটেন পর্সন্স কর্তৃক লিটল বয়ের গায়ে লাল প্লাগ সংযোজনের মাধ্যমে প্রস্তুতি পর্ব শেষ হয়। ৮:১৫ মিনিটে হিরোশিমার আকাশ হতে প্রায় ৬ মাইল (৩১,৬০০ ফুট) উপরে অবস্থান কালে ২৬ বছর বয়সী মেজর ফেরেবী (Ferebee) চুড়ান্ত নিক্ষেপেকর কাজ টি সম্পন্ন করেন। ৪৩ সেকেন্ড পর ভুপৃষ্টের ১৮৯০ ফুট উপরে বিস্ফোরিত হয় 'লিটল বয়'। বিমান থেকে ফেলা বোমাটি প্রায় ৫শ মিটার উচুঁতে হিরোশিমায় বিস্ফোরিত হয়। ঘুমের মধ্যেই মারা যায় নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও যুবা। বিস্ফোরণ কেন্দ্রের তিন মাইলের মধ্যে ১৩ কিলোটন টিএনটি সমপরিমাণ ক্ষমতাসম্পন্ন ধ্বংসলীলা ঘটায়। বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে এক বর্গমাইল, মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যায় হিরোশিমার ৯০ ভাগ স্থাপনা। এর ঠিক তিন দিন পর নাগাসাকি শহরে ‘ফ্যাটম্যান’ নামে সাড়ে চার হাজার কেজির আরেকটি বোমা ৪০ হাজার মানুষকে তাত্ক্ষণিক লাশে পরিণত করে। মাটির সঙ্গে মিশে যায় বেশিরভাগ দালান-কোঠা। লিটল বয় নামের এই পারমাণবিক বোমা হামলায় কমপক্ষে এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়। হিরোশিমায় হামলার তিন দিন পর নাগাসাকিতে আরেকটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে প্রায় ৭৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। তবে জাপানের আসাহি শিমবুনের এক হিসাবে বলা হয়েছে, বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের কারণে দুই শহরে চার লাখের মতো মানুষ মারা যায়। যাদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম পরমাণু বোমা হামলা। এই হামলার মধ্য দিয়ে মোড় ঘুরতে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। মূলতঃ এই হামলার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে হামলার কিছুদিনের মধ্যে আত্মসমপর্ণ করে জাপান।


(হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্ক)
হিরেশিমা হামলার সাত দশক পার হয়ে গেলেও ভয়াল সেই দিনের কথা এখনো ভোলেনি জাপানের মানুষ। কারণ এখনো সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে হিরোশিমার ও নাগাসাকির মানুষ। আণবিক বোমা হামলার এতো বছর পরও শহর দুটোতে জন্ম নিচ্ছে বিকলাঙ্গ শিশু, ক্যানসারসহ দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে বহু মানুষ। জাপানের দাবি, যুদ্ধের সময় ও এর প্রভাবে নানা রোগে ভুগে প্রায় ৪ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে। শুধু হিরোশিমায় মারা গেছে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। ‘পারমাণবিক বোমার আঘাতে শুধু হাজারো মানুষের মৃত্যুই হয়নি, অবর্ণনীয় কষ্ট ও যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে লাখো মানুষকে। তবে হিরোশিমা আজ সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এটি এখন সংস্কৃতি ও সমৃদ্ধির শহরে পরিণত হয়েছে। দিবসটি পালনে দেশটির সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশেও হিরোশিমা দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার জোরালো আহ্বান আসবে এসব কর্মসূচি থেকে। প্রাণঘাতী পারমাণবিক বোমা হামলার ৭৩তম দিবসে সেই সময়ে নিহতদের স্মরণে হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে।


শিরোশিমার মোটোইয়াসু নদীতে হাজারো প্রদীপ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেন হারানো মানুষগুলো আজও সময়ের ঢেউয়ে আলোর মতো জ্বলছে। প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে ও হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতুসির সঙ্গে স্মরণানুষ্ঠানে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যারোলিন কেনেডি। শান্তি কামনায় তারা কবুতর ও শান্তির বার্তা লেখা কাগজ উড়িয়ে দেন। তারা পরমাণু বোমামুক্ত একটি শান্তিময় পৃথিবীর প্রত্যাশা করেন। আজ যখন হিরোশিমার ভয়াবহতা নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা, প্রত্যাশা, তখন কি আমারা পরমাণু বোমামুক্ত একটি পৃথিবীর প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে পেরেছি? নতুন করে কোনো দেশকে পরমাণু বোমা তৈরির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না হয়তো, কিন্তু যাদের কাছে পরমাণু বোমার বিশাল ভা-ার রয়েছে, তারা কি করছে? তারা কি তাদের বোমাগুলো ধ্বংস করবে? এই মুহূর্তে চোখ বুঝে বলে দেওয়া যায়, না, না এবং না। তাহলে শান্তির জন্য আমরা কাজ করছি কোথায়? শক্তির জোরেই তো শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হচ্ছে। অন্তত বিশ্বের দিকে তাকালে এখন তাই দেখা যাবে। এক হাতে পরমাণু বোমা, অন্য হাতে শান্তির বাণী- এভাবে চলতে পারে না। আমরা চাই, পরমাণু বোমা নিঃশেষ হোক, মানুষের জন্য নিরাপদ হোক পৃথিবী।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৬
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×