somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতীয় নাট্যকার, নাট্য পরিচালক এবং অভিনেতা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভারতীয় বাঙালি নাট্যকার, নাট্য পরিচালক এবং অভিনেতা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। সুদূর শিল্পাঞ্চল থেকে কলকাতায় আসার পর অল্প দিনের মধ্যেই বাংলা থিয়েটারে তাঁর নাম জুড়ে গিয়েছিল শম্ভু মিত্র এবং উৎপল দত্তের সঙ্গে। একের পর এক মঞ্চসফল প্রযোজনার পাশাপাশি চলচ্চিত্র, যাত্রা, রেডিও— অভিনয় শিল্পের প্রতিটি মাধ্যমেই নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। নাট্যকার হিসেবেও তিনি খ্যাত। বাংলা নাট্যমঞ্চে তিনি, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও মিথ। ছাত্রজীবন থেকে তিনি নাটক রচনা ও অভিনয়ে আগ্রহী ছিলেন। ১৯৫০ থেকে ৫৪-এই পাঁচ বছরে ৯টি নাটকে নির্দেশনা ও অভিনয় সূত্রে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৪ তে লিখেছেন মৌলিক পূর্ণাঙ্গ নাটক 'সংঘাত'। ২ বছর পরে ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগ দেন। এই সংঘে ১৫টি নাটকে অংশ নেন তিনি। ১৯৬০ সালে ২৯ শে জুন প্রতিষ্ঠা করেন 'নান্দীকার'। প্রায় ৪০টি নাটকে নির্দেশক বা অভিনয় অথবা উভয় ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করেন। তিন পয়সার পালা নাটকে নির্দেশনা ওসঙ্গীত পরিচালনার জন্য তিনি সুনাম অর্জন করেন। সেতু বন্ধন, সওদাগরের নৌকা তার রচিত নাটক। ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ এ নান্দীমুখ নামে নামে এক নতুন নাট্যগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন। এদের বিখ্যাত নাটক পাপপুণ্য। আজ এই গুণী অভিনেতার ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৩ সালের আজকের দিনে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবারণ করেন। নাট্যকার, নাট্য পরিচালক এবং অভিনেতা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।


অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৩৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভারতের মানভূম জেলার রোপো গ্রামে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। বেশ কয়েক বছর পরে কলকাতায় পা রেখে যে নাম পরিবর্তিত হবে অজিতেশে। নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত মজা করে বললেন, “সে সময় বাংলা রঙ্গমঞ্চে বেশ কয়েক জন অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় কাজ করছেন। আমার মনে হয়, অজিত বুঝতে পেরেছিল, ওর খুব নাম হবে। ভবিষ্যতে যাতে দর্শক বাকি অজিতদের সঙ্গে গুলিয়ে না ফেলে তাই ও অজিতেশ হয়েছিল। তার পিতার নাম ভুবনমোহন ও মায়ের নাম লক্ষ্মীরানির। বাবা কোলিয়ারিতে কাজ করেন। আসানসোল শিল্পাঞ্চলের রামনগরে। একটু বড় হতেই অজিত দেখলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেটা ১৯৪২, তখন তার বয়স বছর নয়েক। জাপানি বোমার ভয়ে ভুবনমোহন তাঁকে পুরুলিয়ার ঝালদায় এক আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। সেখানে অজিত তিনটি বিষয়ের প্রেমে পড়ে গেলেন ফুটবল, রাজনীতি এবং থিয়েটার। প্রথমটির ঘোর অল্প দিনের মধ্যেই কেটে যায়। দ্বিতীয়টিতে প্রভাবিত করে গাঁধীজির লেখা। কিন্তু পরের দিকে কমিউনিজমের দিকে ঝুঁকেছিলেন। বেশ কিছু কাল সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিলেন। তবে থিয়েটারের মগ্নতা আমৃত্যু কাটাতে পারেননি অজিত। ঝালদা থেকে বছরখানেকের মধ্যেই ফিরে এলেন রামনগর। কুলটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হলেন। অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পর ভুবনমোহন বদলি হয়ে গেলেন ঝরিয়ার কাছে চাসনালায়। সেখানেই নাট্যগুরুর দেখা পেলেন অজিত। নাম প্রবোধবিকাশ চৌধুরী। তাঁর সঙ্গেই পাথরডি রেলওয়ে ইনস্টিটিউটে ‘টিপু সুলতান’-এ জীবনের প্রথম অভিনয় করেন অজিত। হস্টেলে থেকে চলতে থাকে পড়াশোনা এবং নাটক। স্কুল শেষে অজিত ভর্তি হলেন আসানসোলের বিবি কলেজে। সেখান থেকে আইএ পাশ করে কলকাতা এলেন ১৯৫৩ সালে। ভর্তি হলেন মণীন্দ্র কলেজে। ১৯৫৭ সালে কলকাতার মনীন্দ্রনাথ কলেজ থেকে ইংরেজি ভাষায় অনার্স সহ পাশ করেছিলেন। ঐ বছরেই তিনি ভারতীয় গননাট্য সংঘে যোগ দিয়েছিলেন।


(তিন পয়সার পালা’য় অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কেয়া চক্রবর্তী)
ইংরেজির স্নাতক অজিত শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দিলেন। পাশাপাশি তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। বাগুইআটির হিন্দু বিদ্যাপীঠের ইংরেজির শিক্ষক, পার্টি কর্মী, তথা গণনাট্য সঙ্ঘ পাতিপুকুর শাখার শিল্পী অজিতকে তখন সবাই এক ডাকে চেনে। দমদম আঞ্চলিক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর দায়িত্ব পড়ে গণনাট্য সঙ্ঘের চারটি শাখাকে মিলিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনা তৈরি করার। মঞ্চস্থ হল ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’। তার পর ধারাবাহিক ভাবে সঙ্ঘের কাজ করেছেন তিনি, মূলত থিয়েটারকে আঁকড়ে। প্রথম দিকে তারই শাখা হিসেবে কাজ করত ‘নান্দীকার’। কিন্তু সঙ্ঘের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব আর বিচ্ছিন্নতা বাড়তে থাকে। তাই গণনাট্য সঙ্ঘ থেকে সরে এসে ১৯৬০-এর ২৯ জুন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে, দীপেন্দ্র সেনগুপ্ত এবং অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহায়তায় স্বতন্ত্র সত্তায় আত্মপ্রকাশ করল ‘নান্দীকার’। এর পর প্রায় ১৭ বছর এই সংগঠনের সঙ্গে থিয়েটারকে নিয়ে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছিলেন অজিতেশ। অজিতেশ ১৯৬৫ সালে ছুটি চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে মোট ৬৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তপন সিংহ পরিচালিত হাটে বাজারে সিনেমায় অভিনয় করে সকলের নজর কাড়েন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।


১৯৮৩ সালের ১৩ অক্টোবর মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাংলা অভিনয় জগতের প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পী। সেটা ছিল সপ্তমীর রাত। ওই সন্ধেতেই দক্ষিণ কলকাতার ‘সুজাতা সদন’-এ ‘সেই অরণ্যে’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। নাটক শেষে বাড়ি ফিরে একটু রাত করেই খেয়েছিলেন খাবার। তার পর হঠাৎ বুকে ব্যথা। ডাক্তার ডেকে আনার আগেই সব শেষ। সে বছরের অষ্টমীর দিন নিমতলা শ্মশানে পুড়ে শেষ হয়ে যায় বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নটের দেহ। আজ এই গুণী অভিনেতার ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। নাট্যকার, নাট্য পরিচালক এবং অভিনেতা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×