somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

প্রতিবাদী রোমান্টিক কবি হিসাবে খ্যাত গীতিকার রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ'র ৬২তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কবিতা আর বিদ্রোহ ছিলো যার রক্তে তিনি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। কবিতা, গল্প, কাব্যনাট্য, প্রবন্ধ, গান যেখানেই শিল্প সাহিত্য সেখানেই রুদ্র। ৭৫ থেকে ৯০ পর্যন্ত দেশে এমন কোনো আন্দোলন নাই যাতে রুদ্রর সশরীর অংশগ্রহণ ছিলো না। তিনি ছিলেন এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অংশীদার। আর এই আন্দোলনের খাতিরেই গড়ে তোলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। নির্ভেজাল এই মানুষটি ভণ্ডামি এবং ভণ্ডদের পছন্দ করতেন না। তাই কবি এরশাদ ও তার ভাড়াটে কবিরা যখন তাদের বাহাদুরি দেখাতে ঢাকায় এশীয় কবিতা উত্সব করে তখন এর বিপরীতে রুদ্র দাড়িয়ে যান “জাতীয় কবিতা উত্সব”নিয়ে। মাটি ও মানুষের প্রতি আমূল দায়বদ্ধ এই কবির শিল্পমগ্ন উচ্চারণ তাঁকে দিয়েছে সত্তরের অন্যতম কবি-স্বীকৃতি। অকালপ্রয়াত এই কবি তাঁর কাব্যযাত্রায় যুগপত্ ধারণ করেছেন দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্য। “ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো” "আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে"র মতো অসম্ভব সুন্দর আর জনপ্রিয় গানের গীতিকার কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৫৬ সালের আজকের দিনে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার ৬২তম জন্মবার্ষিকী। কবি ও গীতিকার রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ'র জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।


১৯৫৬ সালের ১৬ই অক্টোবর তাঁর পিতার কর্মস্থল জীবনানন্দের রূপসী বাংলার বরিশালের আমানতগঞ্জ রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন কবি মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। পিতা ডাঃ শেখ ওয়ালীউল্লাহ এবং মাতা শিরিয়া বেগম। তাঁর মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার অন্তর্গত সাহেবের মেঠ গ্রামে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া রুদ্রের শৈশবের অধিকাংশ সময় তাঁর কেটেছে নানাবাড়ি মিঠেখালি গ্রামে (বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার অন্তর্গত)। সুন্দরবনের কাছাকাছি থাকলেও সবাই বাঘ হয় না, কিন্তু রুদ্র বাঘের চেয়ে শক্তিমান ছিলেন। এখানকার পাঠশালাতেই তাঁর পড়াশুনা শুরু। ১৯৬৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন সাহেবের মেঠ গ্রামে তাঁর নানার নামে প্রতিষ্ঠিত “ইসমাইল মেমোরিয়াল স্কুলে। এর পর ৯৬৬ সালে মোংলা থানার “সেন্টপলস উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু। শহিদুল্লাহ তখন মাত্র নবম শ্রেণীর ছাত্র। ১৯৭২ সালে ঢাকায় এসে ওয়েস্ট এ্যান্ড হাইস্কুল ভর্তি হয়ে ১৯৭৪ সালে এস.এস.সি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনে মুহম্মদ শহিদুল্লাহ নামের সঙ্গে যুক্ত করেন ‘রুদ্র’। নাম হয় রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। চার বিষয়ে লেটার মার্কস-সহ এস.এস.সি-তে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ। এর পর ১৯৭৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। অতঃপর ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বি এ এবং ১৯৮৩ সালে এম এ ডিগ্রি লাভ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সক্রিয়ভাবে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন সাথে যুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বচনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মনোনীত পরিষদে সাহিত্য সম্পাদক পদপ্রার্থী হন। অবশ্য নির্বাচনে বন্ধু আলী রীয়াজের কাছে পরাজয় বরণ করেন।


ব্যক্তিগত জীবনে চূড়ান্ত বাউন্ডুলে এই কবি জীবন নিয়ে যতো হেলা ফেলাই করুক, কবিতা নিয়ে কখনো তা করেননি। কবিতায় তিনি সুস্থ ছিলেন, নিষ্ঠ ছিলেন, স্বপ্নময় ছিলেন। ১৯৭৯ সালে বের হয় তার প্রথম বই “উপদ্রুত উপকূলে” প্রথম বইতেই “বাতাসে লাশের গন্ধ” লিখে সব মনোযোগ, পাঠক আর কবিশত্রু কেড়ে নেন। বলেন- “আমি কবি নই- শব্দশ্রমিক/শব্দের লাল হাতুড়ি পেটাই ভুল বোধে ভুল চেতনায়।” তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মাত্র ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ভালো আছি ভালো থেকো সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ সমুহঃ
১। উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯), ২। ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম ১৯৮২, ৩। মানুষের মানচিত্র (১৯৮৪), ৪। ছোবল (১৯৮৬), ৫। গল্প (১৯৮৭), ৬। দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮), ৭। মৌলিক মুখোশ (১৯৯০), ৮। ছোটগল্প- সোনালি শিশির এবং তার মৃত্যুর পর বের হয় নাট্যকাব্য “বিষ বিরিক্ষের বীজ”।


প্রতিবাদী কবি হিসেবে খ্যাত কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৭৫ সালের পরের সবকটি সরকারবিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, ও অসাম্প্রদায়িকতা তাঁর কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত। এছাড়া স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত। কবিকন্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি কবিতাকে শ্রোতাপ্রিয় করে তোলেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। ১৯৮৯ সালে গান রচনা ও সুরারোপে আত্ম নিয়োগ করেন রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তাঁর বিখ্যাত ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ গানটি এসময়ে লেখা। উল্লেখ্য, পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরনোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন।


ভীষণ এক খামখেয়ালীর জীবন ছিলো তাঁর। অনেক ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে তবে সে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ৯০’র শেষদিকে তসলিমার সঙ্গে আবার প্রেম শুরু হয়েছিলো। কিন্তু সেটা ছিলো তসলিমার দ্বিতীয় বিবাহ থেকে তৃতীয় বিবাহে উত্তরণের মধ্য সময়ে। ফলে সে প্রেমও টিকলো না।এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিমুল নামের এক তরুণীর সঙ্গে প্রেম হলেও তার অভিভাবক রাজী না হওয়ায় সে সম্পর্কও চুকে যায়। সেই থেকে রুদ্র আরো বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে যেতে থাকেন। পারিবারিক স্বচ্ছলতা ছিলো, সেপথে যাননি। চাকরির প্রাতিষ্ঠানিকতায় নিজেকে বাঁধেননি । কয়েকটা রিক্সা ছিলো, তা থেকে যা আয় হতো তাতেই চলতেন। ঠিকাদারী করেছেন, চিংড়ির খামার করেছেন। আর দুহাতে টাকা উড়িয়েছেন। জল বিনা তার চলে না। প্রতিসন্ধ্যায় মদের দোকানে হাজিরা দিতেই হতো। তিনি হুইস্কির বাংলাকরণ করেছিলেন “সোনালী শিশির”। এই নামে একটা গল্পও লিখেছিলেন।


অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা ফল সরুপ আলসারে পেয়ে বসেছিল তাঁকে। পায়ের আঙ্গুলে রোগ বাসা বেধেছিল। ডাক্তার বলেছিলো পা বাঁচাতে হলে সিগারেট ছাড়তে হবে। তিনি পা ছেড়ে সিগারেট নিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। ফলসরুপ স্থান হল হলি ফ্যামিলির ২৩১ নম্বর কেবিনে। ১৯৯১ সালের ২০ জুন ভালো হয়ে পশ্চিম রাজাবাজারের বাড়িতে ফিরেও গেলেন। কিন্তু পরদিন ২১ জুন ভোরে দাঁত ব্রাশ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে নিজ বাসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ১৯৮০ সালে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রাপ্ত বাংলা ভাষায় অসামান্য কবি রুদ্র। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৩৪ বছর। আজ তার ৬২তম জন্মবার্ষিকী। কবি ও গীতিকার রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ'র জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×