আমি তখন জাপানে থাকি। বেশ কয়েকমাস হয়ে গেছে। মুটামুটি নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। চারপাশে জাপানের নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। তেমনই এক অভিজ্ঞতা।
প্রতিদিনের মতো সেদিনও সাপ্পরো দাইমারু সুপার শপে গিয়েছিলাম। নিজের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কেনার জন্য। হঠাৎ গ্রিন কোর্ট নামের একটি ভেজিটেবল শপে চোখ স্থির হল। বিশাল এক তরমুজ। তরমুজটা দেখে যতোটা না অবাক হলাম তার চেয়ে বেশি অবাক হলাম এর দাম দেখে। পঞ্চাশ হাজার ইয়েন। এতো দাম দিয়ে কে এই তরমুজটা কে খাবে।
আমি অবাক হয়ে বিক্রেতা মেয়েটি কে জিজ্ঞেস করলাম। তোমার তরমুজ তো অনেক দাম। কে কিনবে? সে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল,অলরেডি সোলড আউট”। আমি বোকা হয়ে গেলাম। কিভাবে সম্ভব। কে কিনলো। বার বার জিজ্ঞেস করলে হয়তো বিরক্ত হতে পারে। তাই গ্রীন কোর্টের মাছ, মাংস, সবজি ফলের কর্নার গুলো ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলাম। জাপানটা সত্যিই কতোটা ব্যয়বহুল তা হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করতে পারবে না। তাই চুপ করে একটা ছবি তুলে নিলাম। তারপর কৃত্রিম একটা হাসি নিয়ে বিক্রেতা মেয়েটির কাছে আবারও গেলাম।
এবার মেয়েটি আমার ব্যাপারে কৌতুহল দেখালো। আমি কোন দেশ থেকে এসেছি। সাপ্পরোতে কি করছি। কবে ফিরে যাবো। এবার তার সাথে একটা হাসি খুশি আন্তরিক সম্পরক তৈরী হলো। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম তরমুজটি কে কিনে নিয়েছে। সে জানালো একজন জাপানি ব্যবসায়ী ওল্ড হোমে তার মায়ের জন্মদিনে পাঠিয়েছে। বিষয়টা ভালো লাগলো। মেশিন যন্ত্রের দেশেও হৃদয়ের চর্চা হয়।পুরো আইডিয়াটা ভালো লাগলো।
আসলে জাপানিরা ভীষন ব্যবসায়ী মানসিকতার জাতি। এই ধরনের দ্রব্য পন্য খাদ্য গুলো রাখা হয় দোকানে ভীর বাড়ানোর জন্য। ক্রেতা আকর্ষনের জন্য। তার মধ্যে যদি দুই একজন এমন ধনী ক্রেতা পেয়ে যায় তাহলে এক সপ্তাহের আয় একদিনেই হয়ে যায়।
তবে এটা শিখলাম ক্রেতা কে আকর্ষন করতে হলে ব্যতিক্রম কিছু করতেই হবে। মানুষের কাছে চিরন্তন সত্য একঘেয়েমী জীবন সব সময় ধূসর।
শুধু তা নয় মানুষের কাছে সবজি আর ফলকে জনপ্রিয় তারা নানা রকম গবেষনা আর আইডিয়া প্রয়োগ করে থাকে। তাই তাদের দেশে উৎপাদিত পন্য এবং দ্রব্য সামগ্রীর সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়।
দেশের অর্থনীতিকে প্রগতিশীল রাখা আর বাজার কে নিরাপদ, সুন্দর আর ক্রেতার মানসিকতা বুঝে বাজার নীতি গ্রহন করলে দেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অত্যাবশ্য।।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩