somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকায় হোমলেস অভাবে নয় স্বভাবে ।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গ রাজ্যের লস এঞ্জেলস শহরে যখন নামলাম খুব সকাল । বিশাল শরীরের কাল কাল মহিলা পুলিশদের দেখে আমি কিছুটা বিস্মিত ।সাথে তাদের প্রশিক্ষিত কুকুর । কুকুর গুলো আমেরিকান মনে হলেও মহিলা পুলিশদের মনে হয়েছে আফ্রিকান । ট্রলি নিয়ে হেঁটে যেতে যেতে বার বার খেই হারিয়ে ফেল ছিলাম । আহা হলিউড । আমার মুভি প্রেমিক মন কতো বার ছুটে গেছে চোখ ধাঁধানো শহর লস এঞ্জেলসের হলিউডে ।আনন্দ বিনোদন আভিজাত্য আর চলচিত্রের প্রান হলিউড । বাস্তবে এ আমি কি দেখছি ।
না দিনের হলিউড আর রাতের হলিউড অনেক তফাৎ । যাইহোক ট্রেনে উঠেই দেখি বিশ্রী সব মেয়ের দল । হাতের নখে নানা রকম নেইল পলিসে আঁকা থাকলেও মনে হচ্ছে গত এক মাসেও গোসল করেনি । ট্রেনে উঠার আগে বেশ কয়েকটা পথ অতিক্রম করতে হয়েছিল । সেই সাথে নিরব নিস্তব্ধ লস এঞ্জেলসের বাতাসটা যেন আজও গায়ে কাঁটা দেয় । মনে হয়েছিল সত্যি বাস্তবতা থেকে কোন হরর মুভির দৃশ্যে চলে গিয়েছিলাম । বাতাসের শব্দে যেন অন্য রকম সুর । সব কিছুই ঠিক ঠাক আমারই মনে নানা শঙ্কা । নতুন জায়গায় গেলে যা হয় । সব কিছুই নিয়ম মতো করে পথে এগিয়ে যাচ্ছিলাম । বাংলাদেশের স্কুল কলেজের সামনে চানাচুর মুড়ি ওয়ালারা যেমন চানাচুর বিক্রি করে তেমন কয়েকজন কে দেখলাম ।



তাদের আচরন আর প্রকাশ ভঙ্গি খুব একটা ভদ্র ছিল বলে মনে হয় না । খুব মনোযোগ দিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম । হঠাৎ একটা ব্লাক ম্যান এসে বলে গিভ এ ডলার ,আই এম হোমলেস ।
আমি অবাক বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, আই এম টুরিস্ট , হাও ক্যান আই হেল্প ইউ .।।।
সে কাঁপতে কাঁপতে খিঁচ খিঁচ করতে করতে বলল ,প্লিজ গিভ মি এ ডলার .।
আমি জায়গা সরে দাঁড়ালাম ।



ট্রেন চলছিল নিজের নিয়মে ।আমি ট্রেনে বিজ্ঞাপন গুলো দেখছিলাম । অনেক জায়গায় লেখা জব দেওয়া হবে । আবার কেউ আত্ম হত্যা করতে চাইলে তাকে মানসিক সহযোগিতা এই সব । হঠাৎ দেখলাম খুবই নোংরা গেট আপের এক দল মেয়ে । আমার সামনে বসা দুটো বৃদ্ধ চোখ দিয়ে ভাল করে তাদের দেখে নিচ্ছে । কেউ কেউ খুব মনোযোগ দিয়ে বই কিংবা ম্যাগাজিন পড়ছে । তবে বিচিত্রতা দেখতে দেখতে মনে একটা ভাল লাগাও তৈরি হচ্ছিল । পৃথিবীর পথে পথে কতো রকমের মানুষ । কতো রকমের বিচিত্রতা । জীবনের ধরন কতো আলাদা । হঠাৎ আবার সেই হোমলেসদের কবলে পড়লাম । একটা পিছন থেকে এসে বলে , ডু ইউ নিড এক্সচেঞ্জ .।।আমি বললাম , সরি ,আই ডোন্ট নিড । প্লীজ গো ..।




সারাটা পথ অনেক ভাল কিছু ও ছিল । সেই সাথে যে বিষয়টা মনে বার বার দাগ কাটছিল তা হল হোমলেসদের কথা। এর মধ্যে আমরা পৌঁছে গেছি হলিউড এলাকায় । আহা । আমার সেই স্বপ্নের হলিউড । টিনসেল টাউনের সেই হলিউড লেখা সাইন ।
কতো রকমের ভিসিটর ।চারিদিকে রমরমা পরিবেশ । সেই সাথে স্ট্রিট গুলো জুড়ে ছিল হোমলেসদের আনা গোনা । দুজন তো প্রায় পা চেপে ধরলো .। গিভ মি এ ডলার অর ইভেন সিঙ্গেল এ স্মাইল .।।।
আমি স্মাইল দিলাম । হায়রে ডলার । চাইলেই কি পাওয়া যায় । রেস্তরাঁয় বসে এক স্প্যানিশের সাথে কথা হল । আসলে হোমলেস অনেকটা ইচ্ছাকৃত । ধারনা করা হয় ৮৪০০০ বিভিন্ন ধরনের হোমলেস আছে । কেউ কেউ জুয়া আর মাদকে হারিয়েছে সব ।কাজে আর মন বসে না । আবার কেউ কেউ তরুন যারা অনেক দূর থেকে এসেছে সিনেমার তারকা হতে । কিন্তু বাড়ি ওয়ালারা সাইন বোর্ডে ঝুলিয়ে দিয়েছে .।নো ডগ .।।নো একটর .।
কুকুর সহ কেউ কিংবা অভিনেতা ভাড়া দেওয়া হয়না । কোথায় যাবে । রাস্তাই তাদের ঠিকানা । আরও যে কতো কারনে । বছর শেষে তাদের পর্যাপ্ত ভাতা আছে । কাজের ক্ষেত্র ও যে কম তা কিন্তু নয় । স্বভাব যাদের মদ ,জুয়া আর দেওলিয়া হওয়া । তাদের দিকে তাকিয়ে আমেরিকা বিচার করা যায়না ।


তবে সব কিছুর পরেও হলিউডের ম্যাক্স মিউজিয়াম , হলিউড সাইন , সমুদ্র ,পাহাড় , চার্চ ,বড় বড় ঐতিহাসিক ব্লিল্ডিং , জমজমাট বিলাস বহুল রেস্তরাঁ সবই ছুঁয়ে গেছে মন । কোন একদিন সময় হলে স্মৃতি চারন হবে হলিউডের যে স্মৃতি গুলো মনে দোলা দিয়ে গেছে তা নিয়ে ।



বিদেশে দুই ধরনের প্রবাসী বাংলাদেশিরা থাকে ।

১ । যারা সারাক্ষন বিদেশের বদনাম করতে থাকে যেন কেউ বিদেশের প্রতি আগ্রহী না হয় । গাল গল্প তারা একলাই করবে। অথচ দিব্বি সিটিজেনশীপ নিয়ে বসে আছে । মনে মনে বলে ডিসগাস্টিং বাংলাদেশিরা যেন তাদের জায়গা দখল না করে । নিজের আগামী প্রজন্মকে আমেরিকান হতেই শেখায় । তাই কেউ আর বাংলাদেশী বলে না । প্রাউড টু বি আমেরিকান বলে নিজেদের জাহির করে ।
২ । আরেক শ্রেণী আছে। কেন যে মানুষ বিদেশে যায় .।।। দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হতে । দেখা যাবে তাকে একবার সুযোগ দেওয়া হোক সে চতুর্থ শ্রেণির নাগরিক হয়ে হলেও যাবে । এক সময়ে এমন ভাব দেখাবে কেন যে গরীব বাংলাদেশে তাদের জন্ম হয়েছিল ।বাংলাদেশে মানুষ ছাড়া আর কি আছে .।।।দূর ওই দেশে ফিরে কে যায় .।।।এই হল প্রবাসী বাংলাদেশিদের মনোবৃত্তি ।
সবাই এক হয়না । এর মধ্যে অনেক ভাল ভাল বাংলাদেশী আছে । যারা নিজের দেশ কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । নিজেদের মেধা দিয়ে প্রমান করছে বাংলাদেশকে ।
আমেরিকায় যতোই সমস্যাই থাকুক । আমেরিকার সব দিক থেকে আজও এগিয়ে । সম্পদ কিংবা কুটবুদ্ধি সবই আছে ।
নিজের দেশের এবং নিজের ব্যক্তিগত মান উন্নয়নের জন্য সব মানুষের পৃথিবী দেখা উচিত ।
অনেক দিক থেকে আমরা যেমন ভাল নেই । আবার অনেক দিক থেকে আমরা অনেক ভাল আছি ।



সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৪৮
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×