somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেখকের জীবনে পাঠকের ভালোবাসা।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফটো ক্রেডিট ; সুনায়না ইসলাম

একজন লেখকের জীবনে পাঠকের ভালোবাসা হলো মহা মুল্যবান গুপ্ত সম্পদের মতো ।একটা বিল্ডিংয়ের শক্ত পিলার গুলোর মতো ।যে কোন দুর্যোগে লেখক কে বাঁচিয়ে রাখে । পৃথিবীতে হাজার হাজার লেখক আছেন নানা ভাষায় । প্রতিটি লেখক তার সময় এবং অভিজ্ঞতাকে নিজের অনুভূতিতে কলমে কিংবা কি বোর্ডে তুলে ধরে । কেউ কেউ হয়তো লেখক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে লিখে ,কেউ মনের আনন্দের জন্য অথবা কেউ কেউ অজানা কারনে । যে হয়তো নিজেও এর ব্যাখ্যা দিতে পারবে না ।
কবে থেকে আমি গল্প উপন্যাসের পাঠক আমার মনে নেই । তবে মনে আছে আমি বড় বোনের কাছে থাকা সমরেশ মজুমদার , শরৎ চন্দ্র , সমাসেট কিংবা টলস্টয় এর সব বই লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তাম । অদম্য কৌতূহল যা এখনও আছে । এমন করে কৌতূহলী হতে গিয়েই একদিন ভাবলাম এই যে যেমন গল্প আমি পড়ি ঠিক তেমন অনেক কাহিনী আমার অভিজ্ঞতায় । নিজের লেখা ডায়রি থেকে কিছু কিছু নিয়ে একটা গল্প লিখে ইত্তেফাকে দিয়েছিলাম । একদিন সকালে দেখি লেখকের নামের জায়গায় আমার নাম । বার বার নামটা দেখছিলাম ।
এরপর পড়াশুনার ব্যস্ততা । কিন্তু অভ্যাস বলে কথা । ফাঁকে ফাঁকে প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখেই যাই । লেখা চলতে থাকে তিন বেলার খাবারের মতো নিয়ম করে ।
তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী অবস্থায় বান্ধবিদের অনুরোধে একটা পান্ডুলিপি জমা দিয়েছিলাম আগামী প্রকাশনীতে । আহা । কোনদিন ভুলবোনা । ধ্রুব দা আমার প্রচ্ছদকারক হয়েছেন । যেমন করে আমি বলেছি ঠিক তেমন করেই করেছেন । আমি একটি সুন্দর বইয়ের মালিক হয়ে গেলাম । এরপর কয়েক মাস পর একদিন দুপুরে শিখা প্রকাশনীর থেকে কল এলো । পান্ডুলিপি জমা দিলাম । একজন নতুন এবং নামহীন লেখক কে ডেকে নিয়ে বই প্রকাশ অনেক ভাগ্যের ব্যাপার ।
পর পর আরও তিনটি বই আমার হয়ে গেল । এরপর অনেক বড় বিরতি ।প্রায় ৯ বছর । অনেক অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জীবন এগিয়ে যেতে লাগলো । পাখির মত উড়ে উড়ে চলা জীবনে স্থিরতা পেলাম না । কিন্তু সব কিছুর পর মানুষকে কোথাও থামতে হয় । নতুন করে পুরোনো কে ফিরে পেতে । এর মধ্যে সময়ের ইতিহাসে তথ্য প্রযুক্তি লেখার জগতকে অনেক সহজ করেছে । ফেসবুকে বাংলা চলে এল । বাংলায় নিজের মনের অনুভূতি প্রকাশের শান্তি বুঝাবার নয় । আবার মনে হল একটা পান্ডুলিপি যা আমার সাথে সাথে গ্রাম শহর আর দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে সেটা কে কাগজে রূপ দেই ।
সব কিছু ঠিকঠাক । পনেরদিন পার হয়ে গেল । বই নেই শিখা প্রকাশনীর স্টলে । কারন একটা রহস্য হয়ে গেছে । মজার সব নাটকীয়তা । আমি ব্লগে সবার মতো শেয়ার করি আমার উপন্যাস অরোরা টাউন আসছে । সবাই স্টল থেকে ফিরে যায় । তারপর বাতাসের কাছে জানলাম । প্রেস থেকে ফাইনাল কপি হারিয়ে গিয়েছিল । তারপর অনেক ঘটনার পর এই বই মেলায় ২৫ তারিখে আসে ।
আমার ও এমন ধৈর্যশীল পাঠক আছে জানা ছিল না । ফেসবুকে সাহিত্য গ্রুপে পাওয়া কিছু আপু । প্রতিদিন বার বার ফিরে গিয়েও শেষে বইটি কিনে আমাকে জানায় । এর মধ্যে প্রথম পাঠক যাকে কোনদিন দেখিনি । তার নাম সুনায়না ইসলাম ।আমার ফেসবুক বন্ধু ।মেয়েটি প্রচুর পড়াশুনা করে । সে সাহিত্য প্রেমী । আমার বইটি কিনে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করে ইনবক্সে আমাকে প্রথম সারপ্রাইজ দেয় । অনেক ধরনের প্রতিক্রিয়া । নানা রকমের মানুষ।নানা রকমের ভাবনা । ক্যান্টনমেন্ট নিবাসী সুনায়নার মতো পুরনো ঢাকার মুক্তা খাগড়া ছড়ির তানিয়া , জাপান প্রবাসী সাকিলা , আমেরিকা প্রবাসী নুসরাত যারা সবাই অপরিচিত । মানুষের আবেগ অনুভূতি গুলোর কাছে সত্যি আমার হৃদয় আপ্লুত হয় ।সব ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা । যা যা নতুন নতুন অভিজ্ঞতা দিয়ে যায় । নতুন কিছু ভাবতে শেখায় ।

একজন লেখকের জীবনে পাঠকের ভালবাসা আর বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি প্রাপ্তি কিছু হতে পারে না ।যদিও আজকাল লেখা বিষয়টা আর শিল্প সাধনা নয় ।শিল্প বানিজ্যে রূপ নিয়েছে । জানি না এই ধারা অব্যাহত থাকবে কিনা । তবে অনুভব করলাম এত দীর্ঘ সময় দূরে থাকার পরও কেউ কেউ আগের মতোই আছে । আসলে মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা নিজ মহিমায় টিকে থাকে । নিয়মিত নিজ উদ্যোগে যখন কেউ বইটির খোঁজ নেয় আমি সত্যি অবাক হই । মনেহয় কি হবে অন্য ক্যারিয়ারের । অন্ন আহার একভাবে হবেই । পুরোটা সময় দেই পান্ডুলিপির কাছে । যদি কোন দিন নিজেকে হারিয়ে ফেলি ।যদি কোন একদিন নিজেকে অজানা কারনে খুঁজে না পাই । হয়তো এই যে পাঠকের ভালোবাসা তা আমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবে । একশত জন পাঠক হয়তো একদিন হাজার হবে । একদিন লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে । আজকাল লেখক হওয়ার একটা ভূত আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় । যে ভূত টা কেবলই পাঠকের ভালবাসা চায় । চাওয়ার এই পথটায় লেখা এক ওষুধ যা হৃদয় কে সুস্থ রাখে । তাই আজকাল সব অসুস্থতার মাঝে আমি হয়তো সুস্থ আছি । সুস্থতা আছে বলেই বেঁচে থাকাটা আছে । নিদারুন পাঠকের ভালোবাসা আছে বলে । নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা আছে বলে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:২৩
৪টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×