রাজধানী ঢাকা শহরে সায়েন্সল্যাব বাস স্ট্যান্ড খুব পরিচিত একটা নাম । কিন্তু অনেক সাধারন জনগনই জানে না কেন এই রাস্তার নাম সায়েন্সল্যাব মোড় । বাটা সিগন্যাল থেকে একটু সামনে গেলেই চারটা রাস্তা চারদিকে গেছে । দুটো রাস্তা একই দিকে শাহবাগ এবং এলিফেন্ট রোডের দিকে । আর বিপরীত মুখে থাকা এই রাস্তা দুটো নিউ মার্কেট এবং মিরপুর রোডের দিকে । প্রতিদিন এই রাস্তায় হাজারও মানুষের আনাগোনা । নিউমার্কেট , ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় , পপুলার হাসপাতাল , সিটি কলেজ , ঢাকা কলেজ , আলিয়স ফ্রসেস ,আড়ং শপিং সেন্টার , বাটা সিগন্যালের মার্কেট , ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং মল , গাউছিয়া ,সায়েন্সল্যাব মোড়ের পাঞ্জাবি মার্কেট অনেক অনেক ব্যস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কাছাকাছি হওয়াতে নিয়মিতই এই পথে মানুষ থাকে । কিন্তু মানুষের জন্য এই পথ কতো টুকু নিরাপদ । কতোটুকুই স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ । সেটা নিয়ে আছে অনেক বিতর্ক । তার চেয়ে বড় বিষয় হল যে কারনে এই রাস্তার নাম সায়েন্সল্যাব হয়েছে । বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের অধীনে পরিচালিত বিসিএস আই আর গবেষণাগার এখানেই অবস্থিত । এই গবেষণাগারের নামের সাথে মিল রেখেই এই রোডের নাম সায়েন্সল্যাব । বর্তমান প্রজন্ম এবং আগের প্রজন্মের অনেকেই এই সায়েন্সল্যাব সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানে না । এখানে অনেক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয় । দেশি বিদেশী অনেক গবেষক এবং সরকারী দফতরের অনেক উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন গুণী ব্যক্তি বর্গ এই গবেষণাগারে নিয়মিত যাতায়াত করেন । কিন্তু খুব দুঃখের বিষয় এই গবেষণাগারের ভিতরটা অসাধারন সুন্দর হলেও বাইরের চারপাশে দুর্গন্ধ আর ময়লার স্তুপ ঘিরে আছে ।
কিন্তু কারও কোন দেখ ভাল নেই । জানিনা এই শহরে বসবাস করে এই শহরের মানুষের কতোটুকু ভালোবাসা আছে । যখন আমরা এই দেশ কে সত্যি ভালোবাসবো তখন সব কিছুকে সুন্দর রাখার চেষ্টা করবো । এই দেশের রাস্তা ঘাট আলো বাতাস সব তো আমার আর আমাদের জন্য । জানি না কেন কেন সবাই দেখেও না দেখার ভান করে । এই গবেষণাগারের মেইন গেট থেকে একটু সামনে এলেই উড়াল সেতু । অপর পাশে আড়ং শপিং সেন্টার । বিপরীত পাশে উড়াল সেতু থেকে নামার পর যে কি পরিমান ভয়াবহ দুর্গন্ধ আর বাজে ময়লার স্তুপ তা দেখলে যে কোন সুস্থ্য মানুষ বমি করে ফেলবে । তারপর ও চোখ অর্ধেক বন্ধ করে আর নাকে হাত চেপে পথচারিরা পার হচ্ছে প্রতিদিন । জীবনের প্রয়োজনে সবাইকে ঘর থেকে বের হতে হয় । ঘরের বাইরের পরিবেশ অনেক ভাবেই আমাদের ঘর কেও প্রভাবিত করে । আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে এবং চলার পথ কে সুন্দর করা আমাদের দায়িত্ব । শুধু তা নয় এই রাস্তাটায় অনেক ধরনের ভিক্ষুক এবং প্রতিবন্ধী নানা ভাবে ভয় দেখায় । ভিক্ষা চেয়ে পথচারিদের বিবেচনাহীন বিরক্ত করে । অথচ সাথেই পূবালী ব্যাংক । এই রাস্তা থেকে আরও একটু কাছে গেলে ময়লার ড্রেন । সেই ড্রেনের উপর ছোট ছোট খাবারের দোকান । সেই দুর্গন্ধের মধ্যেই দাড়িয়ে মানুষ সিঙ্গারা ,পুড়ি আর নানা রকম খাবার খাচ্ছে । এখান থেকে একটু সামনে গেলে গবেষণাগারের পিছনের দিকে ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজ । সেই কলেজের সামনে এবং গবেষণাগারের দেয়াল ঘেঁষে আরও একটা ময়লার স্তুপ । যদিও সেখানে ময়লা না ফেলার একটা সাইন বোর্ড দেওয়া আছে এবং নিয়মিত পুলিশ পাহাড়া দেয় । সবার সামনেই আইন অমান্য হচ্ছে । সবার সম্মুখেই প্রস্রাব করে দেয়াল আর ড্রেনে নিজেদের ভদ্রতার অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে ।
গবেষণাগারের মেইন গেট থেকে বাটা সিগন্যালের দিকে যে পথটা গেছে সেদিকেই আবাসিক এলাকা । কয়েকশ পরিবার বসবাস করে এই আবাসিক এলাকায় । এই দিকেও আছে আরও কয়েকটি ময়লার স্তুপ । এই পথ দিয়ে স্কুলের বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সবাই যাতায়াত করে । কিন্তু কারও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই । বলা যায় এই সায়েন্সল্যাবের চারদিকেই ময়লার মেলা । দুর্গন্ধ এবং ময়লার মধ্যেই আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান গুলো পরিচালিত হচ্ছে । একটু কি চিন্তা করলেই বলা যায় সেখান থেকে কতো টুকু ভাল কিছু আশা করা যায় । সায়েন্সল্যাবের চারপাশের এই দুর্গন্ধ আর ময়লার স্তুপ গুলো নিয়ে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা ব্যবস্থা গ্রহন করবেন ।
আমাদের জীবন মানে দামি জামা কাপড় , বিউটি পার্লার ,দামি রেস্তরাঁ , গাড়ি বাড়ি সবই যোগ হচ্ছে কিন্তু আমাদের বোধ বুদ্ধি আর সচেতনতা সে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না । একটি দেশ কে সবার কাছে উপস্থাপনই নয় । নিজেদের স্বাস্থ্যসম্মত জীবন মানের জন্য আসুন আমাদের চারপাশের ময়লার স্তুপ গুলো যথাযথ জায়গায় সরিয়ে দেই । আমাদের জীবন কে আরও সুন্দর করি । নিজেদের উন্নত করি । নিজের দেশকে আরও বেশি ভালবাসতে উজ্জীবিত হই ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:০৯