জাপানি আইনুদের কথা অনেক জাপানিরাই জানে না । অবাক করার মতো হলেও এটাই সত্যি । পৃথিবীতে কতো রকমের জাতি আছে । কতো রকমের মানুষ আছে । কতো রকমের সংস্কৃতি আর জীবনাচরন আছে । সব তো আর সবার জানার কথা নয় । জাপানি সিনিয়ররা আইনুদের সম্পর্কে জানলেও নতুন প্রজন্মের কাছে এই জাতি নিয়ে তেমন কোন গুরুত্ব নেই । ধারনা করা হয় জাপানের পুরনো সময়ের অনেক ভাষা এবং সংস্কৃতির অনেক কিছুই আইনুদের কাছে থেকে পাওয়া ।
কিন্তু কেন জানি জাপানিরা এখন তেমন কোন আগ্রহ দেখায় না এই জাতি সম্পর্কে ।
তখন শীতের সময় । এমন একদিন আমি এবং আমার স্বামী সব কাজ দ্রুত শেষ করে ঘুমিয়ে গেলাম । কারন পরের দিন সকাল পাঁচটায় আমাদের জাপানি দাদা দাদি আমাদেরকে জাপানি আইনুদের গ্রাম দেখাতে নিয়ে যাবে।ঘুরাঘুরির ব্যাপারে আমার তীব্র আগ্রহ । আমার ক্লান্তিহীন আগ্রহ দেখতে জাপানি দাদা দাদি ভীষণ আনন্দ পায় । তাই তারাও তাদের দেশ দেখানোর জন্য একের পর এক ভ্রমন পরিকল্পনা করেন । যতো পরিশ্রমই করি না কেন ।যতো ক্লান্ত থাকি না কেন । যখন তারা পরিকল্পনা করেন আমরা না করি না ।
পাঁচটা বাজার দশ মিনিট আগেই দেখি তাদের গাড়ি নিচে অপেক্ষা করছে । বাড়তি শীতের পোশাক এবং খাবার দাবার সব গুছিয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম । আমরা তখন জাপানের হোক্কাইডো আইল্যান্ডের সাপ্পরো সিটিতে থাকি । আমাদের বাসার নাম সানিসাইড হাউজ । সেই সানি সাইড হাউজের পাশেই একটা টানেল । টানেলে ভিতর দিয়ে গাড়ি চলতে লাগলো ।
শীতের সকাল । কিছুতেই ঘুমের ঘোর কাটেনা ।কিছু দূর যেতেই এর মধ্যে শুরু হয়ে গেল চা পর্ব । জাপানি দাদা রিউহে সাইতো রান্না করতে ভালবাসে । তিনি ফ্রেঞ্চ খাদ্য এবং সংস্কৃতি খুব ভালবাসে । নতুন নতুন ড্রিঙ্ক , ফ্লেভার ভাল লাগার বিষয় । সেদিন সে আপেল ফ্লেভারের চা তৈরি করেছে । ঘুমের ঘোরে আপেল চা পান করতে ভালই লাগছিল।
চা এর সাথে শুরু হল আইনুদের গল্প ।আমাদের দাদি চিয় সাইতো খুব সহানুভূতিশীল আইনুদের ব্যাপারে । তিনি নিজেদের দেশ এবং পুরো ব্যবস্থাপনার উপর কিছুটা সমালোচনাও করলেন ।এই দিকে সাই সাই করে দাদা রিউহে সাইতো তুষাড়ে ঢাকা পথে ড্রাইভ করে যাচ্ছে ।
দাদির হাতে মানচিত্র এবং বেশ কিছু বই । বই গুলোতে দেখলাম ইংরেজিতে জাপানি আইনুদের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিষয়ক অনেক কিছু আছে ।
The Ainu জাপানিজরা লিখে The Aynu আবার Russian ভাষায় যা Ajny লিখা হয় । ইন্ডিজেনাস পিপল হিসেবে আইনুদের মনে করা হয় । জাপানিদের আদি মানুষ । এক সময়ে এই জাতি কে জাপানের উত্তর পশ্চিমের হনশু দ্বীপে এবং রাশিয়ার সাখালিন , কুরিল দ্বীপ এবং কামছা্টকা পেনিনসুলাতে বসবাস করতো ।
ধারনা করা হয় জাপানের মেইজির সময়ে বা তার পরবর্তী সময়ে ১৮ শতকে ৮০০০০ হাজার আইনু জাতি ছিল । এর মধ্যে ১৮৬৮ সালে ১৫০০০ হাজার হোক্কাইডোতে , ২০০০ হাজার রাশিয়ার সাখালিনে, ১০০ কুরিল দ্বীপে ছিল । সময়ের সাথে সাথে তারা ছড়িয়ে পড়ে । এবং জাপানিদের সাথে মিশে যায় ।এদের অনেকেই তাদের পূর্ব ইতিহাস বা পূর্ব পুরুষ সম্পর্কে কিছু জানে না । ধারনা করা হয় আইনুরা মাছ ধরত এবং শিকারীকরে জীবিকা নির্বাহ করতো । শ্যামন মাছ আর হরিণ শিকার ছিল তাদের প্রিয় কাজ ।
কিন্তু তখন জাপানের মেইজি সরকারের পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক পালা বদলের পর আইনুদের ভাগ্যে ও অনেক পরিবর্তন হয় । অনেকেই আইনুদের দাস দাসি করতে বাধ্য করতো । যা ছিল আইনুদের প্রতি জাপানিদের করা খুব অন্যায় কাজ ।
চলবে .।।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৩৯