somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কর্মস্থলে সহকর্মীর অসহযোগীতা।

১৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(ছবি: ইন্টারনেট)

কর্মহীন মনুষ্য জীবন নিছক অর্থহীন। জীবন এবং জীবীকার প্রয়োজনে সকলকে কাজ করতে হয়।
নিত্যদিনের হাজারও প্রয়োজন। পেট না মানে ধর্মের কাহিনী। বেঁচে থাকতে হলে কাজ করতেই হবে ।আজকাল তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আর্থ সামাজিক অবস্থায় নানা পরিবর্তনে ব্যক্তিগত জীবন এবং পরিবারের মূল্যায়নের চেয়ে কর্ম জীবন ভীষণ গুরুত্ববহন করে । যাইহোক এখন শিক্ষিত বেশির ভাগ মানুষের জীবন তার কর্মক্ষেত্র কে নিয়ে । দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে সহ কর্মীদের সাথে । তাই প্রতিটি কর্মজীবী মানুষের জীবনে সহকর্মী এবং তাদের ভাল মন্দের উপর নির্ভর করে ব্যক্তির ভাল বা খারাপ থাকা । প্রিয় সহকর্মীর ভাল কোন খবর যেমন সুখি করে ।তেমনি খারাপ খবর ও অসুখি করে । তাই সহকর্মী মানুষ হিসেবে কেমন হয় তা নিয়েও অনেক চিন্তার বিষয় । সহকর্মী যদি স্বার্থপর কিংবা হিংসুট হয় তাহলে জীবনের বারটা বেজে যাওয়ার খবর ও শোনা যায় । কখন ও কখন ও খুনের মতো খবর ও শোনা যায় ।

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ ও এগিয়ে যাচ্ছে ।অনেক মানুষ বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছে । কেমন আছে তাদের সেই সব কর্মজীবী মানুষেরা তাদের প্রিয় কিংবা অপ্রিয় সহকর্মীদের নিয়ে । এই বিষয়টা নিয়ে বাংলাদেশের কর্মজীবী মানুষগুলোর কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপর কিছু তথ্য সংগ্রহ করলাম । পরিচিত এবং অল্প পরিচিত সরকারী কিংবা বেসরকারি সেক্টরে কাজ করা কিছু মানুষের অভিজ্ঞতা ছদ্মনামে তুলে ধরা হল ।

কেস স্টাডি ১ ;

নবনিতা (ছদ্মনাম) । বয়স ২৫ বছর । কাজ করছিলেন একটি প্রাইভেট ব্যাংকে । প্রথম কয়েক মাস কর্ম জীবন বেশ ভাল লাগছিল । ভাল পরিবেশ এবং ভাল বেতন । সহকর্মীরা বেশ চটপটে মিশুক । কিছুদিন ব্রাঞ্চে ডিপার্টমেন্ট ইন চার্জ হয়ে ৪৯ পঞ্চাশ বয়সী দিলরুবা আসে । দিলরুবা কিছুটা আত্ম প্রেমিক হিংসুট মহিলা । সে চায় পুরো অফিস তাকে মনোযোগ দিয়ে থাকুক । কিন্তু না সবাই নবনিতাকেই পছন্দ করে । তা সে মনে মনে আবিস্কার করল । শুরু হল অর্থহীন শত্রুতা । নবনিতা যেহেতু তার অধিনে কাজ করে । তাই অনেক ভাউচার এবং ফাইল দিলরুবার কাছে নিয়ে আসে । নবনিতাকে সে বিনা কারনে নানা ভাবে নাজেহাল করতে থাকে ।কখনও কেন বিয়ে করছে না । কখনও প্রেম , ড্রেস বা সাজসজ্জা নানা বিষয়ে খামাখা মানসিক নির্যাতন করতে থাকে । নবনিতা ধৈর্য ধরে চাকরি রাখার ভয়ে অনেক অন্যায় সহ্য করে যায় নিরবে ।তবুও যেন দিলরুবার নিরব অত্যাচার থেকে রেহাই নেই । ইচ্ছে করে ফাইলে সাইন করতে দেরি করে । ভাউচারে সাইন করতে চায় না । নবনিতা যেহেতু নতুন চাকরিতে জয়েন করেছিল অনেক জটিলতা সে বুঝতনা । ব্যাংকারদের ভাউচারে সাইন বা ইনিশিয়াল দিতে হয় । সেটা ছিল তার নামের প্রথম অক্ষর । দিলরুবা কৌশলে নবনিতার পাসওয়ার্ড চুরি এবং ইনিশিয়াল নকল করে বড় অংকের টাকার হিসাব গড়মিল করে । দিলরুবা নবনিতার পাসওয়ার্ড দিয়ে ঢুকে এক গ্রাহকের টাকা অন্য একজনের একাউন্টে পাঠিয়ে ইনিশিয়াল দিয়ে ভাউচার ছেড়ে দেয় ।
এইদিকে দিন শেষে ক্লিয়ারেন্স হিসাবে ভুল ধরা পড়ে । নবনিতা নিজেই হতবাক কখন সে এই কাজ করেছে । কোনভাবেই মনে করতে পারছে না । ডিএমডি এর রুমে তাকে ডাকা হল । অপরাধের শাস্তি হল চাকরি থেকে অব্যাহতি । তাই ব্যাঙ্কে নিজের পাসওয়ার্ড আর সাইন সম্পর্কে সবার সচেতন থাকা উচিত ।

কেস স্টাডি ২

মোঃ আলম (ছদ্মনাম)। বয়স ৩৭ বছর। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করছিলেন । তিনি দেশের বাইরে থেকে দুই বার পোস্ট ডক্টরাল করা । তিনি পিএইচডি ও করেছেন আমেরিকার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । কিন্তু দেশে ফিরেছেন পারিবারিক প্রয়োজনে । নিজের বাবা মা ভিটে মাটি দেখাশুনা এবং দেশে স্থায়ী একটা চাকরির কারনে । যোগদানের সময় বিশ্ববিদ্যালয় করতিপক্ষ যে ফ্যাসিলিটি, চাকরির পদ মর্যাদা এবং বেতন নিয়ে চুক্তি করেছিল তা অনেকাংশে দুই বছর এর মধ্যে দেখা গেল গড়মিল । এতো পড়াশুনা করে সে লেকচারার আর তার আরেক সহকর্মী শুধু সাধারন মাস্টার্স পাস করে সেও লেকচারার । কারন ডিরেক্টর বোর্ডে তার আত্মীয় আছে । ধিরে ধিরে সহকর্মীরা তাকে হীনমন্যতা থেকে তাকে অসহযোগিতা করতে থাকে । তারপর বাধ্য হয়ে সে আবার বিদেশে গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি নিয়ে চলে যায় । দেশে মেধাবিরা ফিরে আসে এবং কাজ ও করতে চায় । কিন্তু দেশের কিছু মানুষের অসহযোগিতা আর সামগ্রিক পরিস্থিতির কারনে তাকে ফিরে যেতে হয় বিদেশে । অনেকের ভিতরেই প্রবনতা থাকে আমি যেহেতু উন্নত হতে পারিনি । অন্যকেও হতে দিব না । এক গভীর মানসিক জটিলতা যেন বাংলাদেশের মানুষের মনে । তবে সবাই না । সব ক্ষেত্রে ও না ।

কেস স্টাডি ৩ ;

ডঃ নুরুল ইসলাম (ছদ্মনাম) ।বয়স ৩৬ বছর। দীর্ঘদিন জাপানে ক্যামিকেল নিয়ে গবেষণা করেন । সেখানেই মাস্টার্স এবং পিএইচডি করেন । তার গবেষণার ফলাফল ভাল হওয়ায় বিশ্বের অনেক দেশ থেকে এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন । নিয়মিত নানা দেশ থেকে কনফারেন্সে যোগদানের আমন্ত্রন পান । এক সময় দেশে ফিরেন । নিজের দেশের কিছু সমস্যা সমাধানে এবং মুক্তিযোদ্ধা বাবার অনুরোধে দেশের জন্য কাজ করতে চান । কিন্তু নিজের কর্মক্ষেত্রের সহকর্মীদের কাছে যেমন জনপ্রিয় তেমনি যেন কেউ কেউ তাকে অজানা কারনে সহ্য করতে পারেন না । নানা ভাবে তাকে নাজেহাল করতে থাকে । তবে এটা ও সত্য বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান আর গবেষণা পেশার চেয়ে বিসিএস ক্যাডারের প্রতি আকর্ষণ বেশি । গবেষণা পেশা সম্পর্কে অনেকেরই সম্যক ধারনা নেই । দুঃখজনক হলেও বিজ্ঞান মন্ত্রনালয়ের অধিনে থাকা সকল বৈজ্ঞানিকদের বিদেশে কনফারেন্সে যেতে হলে জিও বা গভ অর্ডার নিতে হয় । এই জিও পারমিসান দেয় মন্ত্রনালয়ের কোন সচিব । এই সচিবরা অনেকেই বাংলা ,ইংরেজি বা সমাজকল্যান বিষয় থেকে আসা । অনেকের ভিতরেই বিজ্ঞান গবেষণা নিয়ে যথাযথ জ্ঞান নেই । অথচ বৈজ্ঞানিকদের নিয়ন্ত্রনে তারা আছেন । শুধু মাত্র দেশের কিছু ভুল সিস্টেম এর কারনে । ডঃ নুরুল ইসলাম কে তার প্রফেসর তাকে ইনভাইট করে গবেষণা বিষয়ক এক সেমিনারে । সমস্ত খরচ জাপান বহন করবে । তার পর ও বিনা কারনে তাকে যথাসময়ে জিও দেওয়া হয়নি ।হাস্যকর ভাবে কারনে দেখায় কোন প্রয়োজন নেই ।অথচ সেই সচিব ও কয়েকদিন পর বদলি হয়ে যায় । শুধু শুধু একজনের একটা বড় ক্ষতি করে গেল । সেই সচিবের বিরুদ্ধে অনেকেরই অনেক অভিযোগ ছিল ।
বাংলাদেশের সরকারি দফতরের এই অযৌক্তিক সিস্টেম এর প্রতি জাপানের প্রফেসর ভীষণ ভাবে আহত হন । কারন ডঃ নুরুল ইসলাম সেমিনারে জয়েন করতে না পারায় তার প্রফেসর কে অনেক জায়গায় জবাবদিহি এবং অর্থ খরচ হয় । সচিবের ক্ষমতার অপব্যবহারে ডঃ নুরুল ইসলাম প্রফেসরের কাছে ছোট হলেন । সব দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হলেন ।

এমন অনেক অনেক মানুষ এর অনেক ধরনের অন্যায়ের ঘটনা শোনা যাবে । ।শত শত নিরব হাহাকারের অভিজ্ঞতা । হাজার হাজার কেস স্টাডি পাওয়া যাবে । সব জায়গায় অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা । আর ক্ষমতার অপব্যবহার ।

ব্যক্তিগত হীনমন্যতা কিংবা হিংস্রতায় দেশে এক শ্রেণী আরেক শ্রেণীকে উঠতে দেয় না । বিকশিত হতে দেয় না । তাই মানুষ ও দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না । সব সময় সব পরিস্থিতিতে প্রতিবাদ ও করা যায়না । যারা সুযোগ পায় তারা বিদেশে চলে যায় । আর যারা পারে না । তারা কাজে আগ্রহ হারায় ।

এই ভাবেই সরকারী কিংবা বেসরকারি প্রতিটি জায়গায় অযোগ্যদের জয়গান । ক্ষমতার অপব্যবহার । সব সময় মানুষ খুঁজে এখন জীবনের নিরাপত্তা । ঝামেলাহীন জীবন । কিন্তু কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী ,বস , কিংবা প্রতিষ্ঠান থেকে অনেকাংশেই সমান ভাবে সব সুযোগ সুবিধা বা সহযোগিতা পায় না । এখন এই পরিস্থিতে নিজের দেশকে ভালবাসতে চাইলেও পরিস্থিতির কারনে ভালবাসা যায়না । অনেক প্রবাসির চোখেই নিজ দেশের জন্য কান্নার সমুদ্র থাকে । দেশের এই ধরনের জটিলতার কারনে অনেকেই দেশে ফিরতে চায় না । তবে কি দেশ এইভাবেই ভেসে যাবে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর দিকে । কিভাবে কখন আমাদের চেতনা জাগবে ।কিভাবে মেধাবিরা দেশে আস্থা খুঁজে পাবে ।আমরা কেউ এই বিষয় গুলোকে গুরুত্ব দেই না । আমাদের বুদ্ধিজীবী সমাজ ও ভাবে না । এখনই সময় সকল সেক্টরে পরিবর্তন আনা । যথাযথ যোগ্য ব্যক্তিদের মূল্যায়ন এবং কর্ম পরিবেশ তৈরি করা ।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৪২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×