somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: আঁধারে যাত্রা-নুরুন নাহার লিলিয়ান।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(চিত্রশিল্পী : নাঈমা খান)



আঁধারে যাত্রাঃ
নুরুন নাহার লিলিয়ান ।
বীনা বালার খুব স্বপ্ন, সামনের মাসেই ভাইকে ঢাকা নিয়ে আসবে। ঢাকার কোন একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দেবে। ভাইকে মানুষ করতে পারলেই সংসার - বাবা- মা নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। একটু একটু করে জীবনটা পাল্টে যাবে বীনা বালার। অভাব অনটন আর একবুক হাহাকার যেন সব সময়ই ছায়ার মতো সঙ্গে থাকে। এই জীবন বীনা আর টানতে চায়না। ভদ্র সমাজের একজন হতেই হবে। সেই ছোটবেলাই অভাবের তাড়নায় বাবা বীনাকে বিয়ে দিয়েছিল। তখন বীনার চৌদ্দ কি পনেরো বছর বয়স হবে।বিক্রমপুরের উত্তর কামারগাওর গনেশ মন্ডলের ছেলে চণ্ডী মন্ডল, চণ্ডীর বউ মারা গেছে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী গনেশ মন্ডল অনেক টাকা পাওয়ানা বীনার বাবার কাছে।
দেনা শোধ করতেই উপায়ান্তর না পেয়ে বাবা বীনাকে চন্ডীরর কাছে তুলে দিয়েছিল। চন্ডী বীনাকে শ্রীনগরের উত্তর কামারগাও গ্রাম থেকে ঢাকা নিয়ে এলো। এক অচেনা শহর, হাজার হাজার মানুষ। বীনার চোখ বেয়ে অসহায় কান্না ঝড়তে থাকে। একমাত্র ছোট ভাই বিনয় কে বীনা ভীষণ ভালোবাসে । বিনয়ের মুখখানি যেন চোখের সামনে থেকে যেতেই চায় না। চন্ডী ভিন্ন জগতের মানুষ হলেও বীনাকে যেন ভীষন ভালোবেসে ফেলে।পুরোনো ঢাকার শাঁখারিপট্টিতে একটা পুরনো দুতলা বাড়িতে বীনার ছোট সংসার। কিছু না চাইতেই চন্ডী সব এনে দিতো বীনাকে। সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই চন্ডী কেমন করে পাল্টে যেতে লাগলো। প্রায়ই বাড়ি ফিরতো না। পনরো- বিশ দিন পর পর কোথা থেকে যেন হঠাৎ ফিরে আসতো।
এভাবেই বীনার জীবন থেকে অনেক গুলো বছর কেটে গেছে। ওই একাকী দিনগুলোতে কেউ কেউ যে ছিল না বীনার জন্য, তা নয়। চন্ডীর মেসতুতো ভাই তাপস বাজার করে দিত।আর মাসি মাঝে মধ্যে এসে খবর নিত।বীনা যেন কেমন করে এই অচেনা নগরের অনেক অচেনা মানুষকে চিনে ফেলেছে।প্রথাগত নিয়মতান্ত্রিক সমাজের অনেক অনিয়মের সঙ্গেই বীনার বোঝাপড়া হয়েছে। তাপস, তাপসের বন্ধু মুসলেম সহ আরও কয়েকজন আছে। মাসি ও একদিন নিয়ে এসেছিল কমলপুরের নিতেশ ঘোষ কে।ইসলাম পুরের বড় কাপড় ব্যবসায়ী নিতেশ। প্রথম রাতেই নিতেশ নিয়ে এসেছিল পাঁচ হাজার টাকা দামের শাড়ি। এত সুন্দর শাড়ি বীনা কোন দিন দেখেনি। খুশিতে বীনা আত্মহারা ছিল। কিন্তু শাড়িটা সুন্দর হলেও সেই দিনের রাতটা বীনার জন্য সুন্দর ছিল না । এখন ও কপালের সিদুর দেখলে বীণার ভীষণ কান্না পায় । সাত পাকের দৃশ্যটা হিংস্র বাঘের থাবার মতো সামনে দাড়িয়ে থাকে । বুকের ভেতরটা কেমন হু হু করে উঠে ।
মানুষ গুলো যে বীণা কে জোর করত তা নয় । বীণার বয়সটা সে সময় মধ্যাহ্নের সূর্যের তাপে অবিরত পুড়তে থাকত । আর ভেতরের মানুষটা অসহায়ের হয়ে ছটফট করত ।ভিন্ন স্বাদের স্রোতে বীণা ভেসে যেতো । এ জীবনের হিসাব নিকাশ কষতে বীণার মন চাইত না । তবু ও যেন বেঁচে থাকা । আর বেঁচে থাকতে গিয়ে কখন যে বীণা পাল্টে গেছে সে নিজেও জানে না । আর জানে না বলেই রুপান্তর হতে পারে । একেক ঘটনায় একেক রুপে মানুষ নিজেকে আবিস্কার করে । একদিন হঠাৎ করেই মাসি এসে বলল , "যে দিকে চোখ চইলা যাও । পালাও! না হইলে বাঁচতে পারবা না । চণ্ডী গুল্লি খাইয়া স্বর্গে চইলা গেছে । "
বীণা বালার পুরো পৃথিবী কেপে উঠল । কোন কিছু বুঝে উঠতে পারল না । নিজের দুই একটা জিনিস ,সিঁদুর কৌটা আর দামি শাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ।
শাঁখারিপট্টির বাড়িটার দিকে আর একবার ও তাকাল না ,যদি থেমে যেতে হয় । যদি মায়া মমতা আর ভালবাসা পা টেনে ধরে । বুকের ভেতর থেকে কি যেন দুমড়ে মুচড়ে বের হয়ে আসছে । শ্রাবণের মেঘ যেন আর বৃষ্টি ধরে রাখতে পারে না । অঝরে কাঁদতে কাঁদতে বীণা সামনে হাঁটতে থাকে । বার বার মনে হয় ছোট ভাই বিনয় ডাকছে দিদি! -না। বিনয় নয় । অন্য কেউ একজন ডাকছে । অস্পষ্ট কণ্ঠস্বর । বীণা গুলিস্তান চলে এসেছে । বাইরে তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি । বীণা উপায় না দেখে একটা দোকানে ঢুকে পড়ে । সেখানে তাকিয়ে দেখে মুসলেম বসা । মুসলেম কে দেখে বীণার যেন আরও বেশি কান্না পেল । মুসলেম বীণার হাতের ব্যাগটা নিজের কাছে নিয়ে চুপচাপ বীণার পাশে দাড়িয়ে থাকে । বীণার কান্না যেন আর থামে না । মুসলেমের যেন খুব মায়া হয় বীণার জন্য । কারন তিন-চারটা গোপন রাত আছে বীণার সাথে মুসলেমের । সেসব রাতের কিছু মায়া মুসলেমের বিবেকের সামনে অধিকার নিয়ে দাঁড়াল । মুসলেম বীণার জন্য সাহায্যের হাত বাড়াল । ধীরে ধীরে বৃষ্টি থেমে এল ।মুসলেমের সঙ্গে বীণা হাঁটতে লাগল ।
কেউ কারও সঙ্গে কথা বলল না । বেশ অনেকটা পথ এমনি করেই চলতে লাগল । হঠাৎই মুসলেম জিজ্ঞেস করল , " কই যাইতে চাও ? তোমারে দিয়া আমার আবার দোকানে আইতে হইবো । বীণা কিছু বলে না । শুধু সামনের দিকে হাঁটতে থাকে । পাশে মুসলেম ও হাটে । অনেকক্ষণ পর শান্ত কণ্ঠে বীণা বলে , সে গুলি খাইছে । মাসি আমারে বাইর কইরা দিয়া ঘরে তালা দিয়া দিছে ।
মুসলেম ফের প্রশ্ন করে , বাইচা আছে ,নাকি একেবারেই চইলা গেছে ।
বীণা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলল ," নাই । মাসি তাই কইল ।"
মুসলেম জিজ্ঞেস করে ," তুমি অহন যাইবা কই ? শ্রীনগর দিয়া আসি ?
বীণা খুব কঠিন কণ্ঠে বলে ,"না । আমারে দেখলে বাবা মইরা যাইবো । আমারে তুমার সঙ্গে নিয়া চল"।
মুসলেম যেন মনে মনে চমকে উঠে । অনাকাংক্ষিত আশা পূরণ । মুসলেমের বুকের ভেতরটা কেমন চঞ্চল হয়ে উঠে ।সে বীণার দিকে বিশেষ ভাবে তাকায় । বৃষ্টিতে ভিজে বীণা সবুজ শাড়িতে আরও সবুজ হয়ে উঠেছে । সিঁথির সিদুর বৃষ্টির জল পেয়ে কপালে নেমে এসেছে । এলোমেলো সিঁদুর রেখা বীণাকে বিধাতা যেন অন্য রূপ দিয়েছে । ভয়ঙ্কর সুন্দর এক ধ্বংস হয়ে বীণা মুসলেমের সামনে দাঁড়ানো । মুসলেম যেন সে ধ্বংস টের পায় না । কেবলই এক ভালোবাসার জলোচ্ছ্বাস তাকে অনেক দূর ভাসিয়ে নিয়ে যায় । বীণা কে তার এখন অন্যরকম ভাবে পেতে ইচ্ছে করছে । মুসলেম বীণার কপালের সিঁদুরের দিকে তাকায় । বুকের কোথায় যেন হিংসার এক অদ্ভুত আগুন পোড়াতে থাকে । সে দহন মুসলেম টের পায় । একদম কিছু বলে না । কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে । তারপর দু'হাত দিয়ে বীণার গাল দুটো আলতো করে ধরে বলে , " কপালের সিঁদুরটা ধুইয়া ফালাও।"
কথাটা শোনার পর বীণার বুকের ভেতরটা কেমন করে । বীণার কষ্টের আকাশে আরও কিছু কষ্ট আসে ভিড় জমাল । বীণার বেঁচে থাকার ইচ্ছে গুলো খুব অসহায় হয়ে উঠল । বীণা যেন হঠাৎই প্রতিবাদ করে উঠল ," তোমার সঙ্গে যাইতে হইলে সিঁদুর মুছতে হইব ক্যান? এইটা কেমন কথা ! "
মুসলেম একটু বিরক্ত হয়ে বলল , " দ্যাখো তুমারে আমি জোর কইরা আনি নাই । আমি মুসলমান পুলা । থাকি মেসে । সেইখানে আর ও কয়েকজন থাকে । তুমার তো বিষয়টা বুঝতে হইব ।"
বীণা যেন একটু শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে । বীণা আর কোন কথা বলে না । মুসলেম ফের দোকানে ঢুকে তারপর এক মগ জল এনে বীণা কে দেয় । বীণা কয়েক ঝাঁপটা জল দেয় মুখে ।
কপালের সিঁদুর ও ধুয়ে ফেলে । মুসলেম একটা রিকশা ডাকল । বীণা জীবনের নতুন পথে যাত্রা করল । তিন রুমের একটা মেসে মুসলেম থাকে । বন্ধুরা বীণা কে দেখে একটা রুম ছেড়ে দিল । কয়েক মাস সেখানে থাকার পর বংশালে একটা ছোট বাসা ভাড়া নিল । সে বাসাতেই বীণা নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করল । তারা দুজন জীবনের টানাপড়েনে বিয়ের কথা ভাবতেই সুযোগ পায়নি । এই সমাজের গতানুগতিক নিয়মেই তার স্বামী - স্ত্রী রূপে জীবনযাপন করতে লাগল ।
মুসলেম সবার মতো নয় ।সে পৃথিবী কে অন্য রকম ভাবে দেখে । বীণা কে নিয়ে সে নতুন জীবনের সুর বাঁধতে চায় । আর ও একটু ভাল ভাবে বেঁচে থাকা । গুলিস্তানের প্লাস্টিকের জিনিস পত্রের দোকানটা ছেড়ে দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ভাবছে । কয়েক হাজার টাকা হলেই মুসলেম মালয়েশিয়া যেতে পারবে । পাশের দোকানের মতিন দোকান বিক্রি করে মালয়েশিয়া গিয়ে ভালোই আছে । কিন্তু বীণা কে কার কাছে রেখে যাবে। এদিকে হঠাৎ মুসলেম বীণার বাবা - মা -ভাইয়ের খবর নিয়ে এল। বীণার ভাই বিনয় এস এস সি পরীক্ষা দিবে । বীণার কাছে মুসলেম যেন দেবতার মতো । যেখানে বীণা পরিবারের সবার কথা ভুলে গিয়েছিল। সেখানে মুসলেম দেবতা হয়ে সবার খবর এনে দিল । বীণা বালার চোখ দিয়ে গভীর নোনা জল বেয়ে পড়ে । আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় । কতো গুলো সময় কেমন করে কেটে গেছে । কয়েক মাস বিনয় দিদির কাছে থাকে ।মুসলেম ও মালয়েশিয়া চলে গেছে ।
প্রথম দিকে মুসলেম ভালই টাকা পাঠাত । দু'মাস হল কাজ চলে গেছে । বীণা কে কোন রকমে চালিয়ে নিতে বলেছে । টাকা ছাড়া কি ঢাকায় বেঁচে থাকা যায় । আবার সেই পুরনো অভ্যাসে ফিরে যাওয়া । মুসলেম চলে যাওয়ার পর তাপস প্রায়ই এসে খবর নিত । কিন্তু বিনয় মানতে পারে না , এ বাসায় তাপসের আসা যাওয়া । দিদি কে নিয়ে তার মনে নানা প্রশ্ন । অনেক পড়াশুনা বিনয়ের ।কিন্তু একদম পড়তে পারে না বিনয় । শুধু কান্না পায় । বিনয় যখন এই রুমে পড়তে বসে তখন পাশের রুম থেকে দিদির কণ্ঠে রাক্ষুসির হাসি শুনতে পায় ।
ছোট বেলার সে দিদি যেন আর নেই । বিষাক্ত একটা অনুভূতি তার চারপাশ ঘিরে থাকে । কাউকে বলা যায়না এ দুঃখের কথা । দিনে দিনে দিদির মধ্যের রাক্ষুসিটা বিনয়ের দেখার জগতটা অন্ধকার করে তুলেছে । এই অদ্ভুত টানা পোড়েন থেকে বিনয় বেড়িয়ে আসতে চায় । বিনয় প্রায় না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে । কখন ও কখন ও দেরি করে বাসায় ফিরে । অবশ্য এই সবে যেন দিদির কিছুই আসে যায় না । বিনয় আর সহ্য করতে পারছে না । এ জীবন থেকে মুক্তি নিতেই হবে । এক বুক হাহাকার নিয়ে জীবনের মানে খুঁজতে থাকে । স্বপ্ন গুলো যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে দিনে দিনে বিনয় কে গ্রাস করছে ।
একদিন বিনয় সব সঙ্কোচ ভেঙ্গে দিদিকে বলতে চায় । জীবনের প্রয়োজনের কাছে বীণা যে বন্দি! কেমন করে সে ভাই কে বুঝাবে। বিনয়ের ভেতরের মানুষটা আর ও প্রতিবাদী হয়ে উঠে । প্রায়ই বাসায় নানা মানুষের যাতায়াত নিয়ে বিনয়ের সঙ্গে দিদির ঝগড়া হয় । এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে বীণা বিনয় কে ঢাকা এনেছিল । অথচ আজ সেই ছোট ভাইটা বিপরীত দিকে হাঁটছে । এমনি করে সেদিন দিদির সাথে ঝগড়া করার পর নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে । পাশের রুমে দিদি। হয়তো বীণা ঘুমিয়ে পড়েছে । বেশ কিছুক্ষন এমনি নিরবতা কাটে । সব ভুলে বিনয় পড়তে বসে। হঠাৎ পাশের রুমে দরজা খোলার শব্দ । ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী লোকটার কণ্ঠস্বরের মতো । বিনয় পড়া থামায় । বীণা তাকে চলে যেতে বলে ।
ব্যবসায়ী মানুষ লাভ টা না নিয়ে কি যাবে? বীণা বালার বিবেক যেন মহাপ্রতিরোধ হয়ে সামনে দাঁড়িয়েছে । মানুষের বাসায় কাজ করে খাবে তবু ও আর নয় এই পথে ...।কাপড় ব্যবসায়ী নিতেশ ও নাছোড় বান্দা । এতো সহজেই মুক্তি দেবে। আজই সব দেনা পাওয়ানা মেটাতে হবে । শুরু করে সব কিছু ছিনিয়ে নেওয়া । বীণা যেন তাকে কোনভাবেই ছাড়াতে পারে না ।এতক্ষন বিনয় কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে বসে ছিল । পাশের রুমের বীণার আত্ম চিৎকার ।আর বসে থাকা যায় না । বীণার কান্না যেন বিনয় কে বাঁচাতে বলছে ।
বিনয় কিছু ভাবতে পারছে না । হঠাৎ খাটের নিচের ধারাল দাঁ টা নিয়ে দরজা ভেঙ্গে নিতেশের ঘাড়ে এক ঘা বসিয়ে দেয় । তারপর আর ও কয়েক ঘা । একাধারে কোপাতে থাকে ,যতক্ষণ পর্যন্ত তার শক্তি ছিল। অনেক ধস্তাধস্তি হয় । তারপর বীণা আর কিছু জানে না । প্রায় দুই দিন পর বীণার জ্ঞান ফিরে । একটা অচেনা হাসপাতালে বীণা শুয়ে আছে ।ঝাপসা চোখে সামনের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে দুজন পুলিশ দাঁড়ানো । বীণা সেদিকে তাকালে কর্তব্যরত নার্স শান্ত কণ্ঠে বলল , " এখন আপনার কেমন লাগছে?
বীণা কিছু বলে না । শুধু দুই চোখের কোনা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে । নার্স স্যালাইন খুলতে খুলতে বলল , "একটু ভাল হলেই আপনাকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হবে । "
আপনার ভাই পুলিশের কাছেই আছে । " কথাটা শুনেই বীণা আঁতকে উঠে । তারপর চিৎকার করতে থাকে । বিনয়! বিনয়! বিনয় আমার ভাই ! কই আছে ?"
নার্স বীণা কে শান্ত করার চেষ্টা করে । কিন্তু বীণা অস্থিরতায় কাতরাতে থাকে । মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করতে থাকে । নার্স ব্যথা কমানোর ওষুধ দেয় । বুকের উপর কাপড়টা তুলে দিয়ে চলে যায় ।একটু একটু করে স্বপ্ন কুড়িয়ে নিয়ে মানুষ জীবন কে সাজায় । সে সাজানো জীবন ও মৃত্যুর মতো নিশ্চিত দুঃস্বপ্নের কাছে পরাজিত হয় । ভোর রাতের দিকে পুলিশদের কথায় বীণার ঘুম ভাঙ্গে ।
প্রথম পুলিশ বলছে ," ভাইটার মনে হয় ফাঁসি হইবো । যেই ভাবে কোপাইছে !
দ্বিতীয় পুলিশ ," না । বয়স অল্প । যাবজ্জীবন হইতে পারে।"
প্রথম পুলিশ ," এর থেকে ও ছোট বয়সের ফাঁসি হইছে । বয়স প্রমান হইলে দেখা যাবে।"
কথা গুলো বীণার কানের ভেতরে মৃত্যু হয়ে প্রবেশ করল। কোন ভাবেই বিনয়ের ফাঁসি হতে পারে না ।
যা কিছু ভুল সব বীণার । বীণা কে দুঃস্বপ্নের কাছে বীণাই ঠেলে দিয়েছে । যা শাস্তি পেতে হয় বীণাই পাবে । হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বীণা । কিন্তু সে কান্না মৃত্যু কে পরাজিত করতে পারে না । মৃত্যু ও যেন বীণা কে আপন করে কাছে পেতে চায় । বীণা মৃত্যু কে ফিরিয়ে দিতে পারে না । অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে স্বাভাবিক ভাবেই বীণা ভীষণ দুর্বল ছিল । পাশের টেবিলে যতো ট্যাবলেট ছিল সব খেয়ে নিল । আর বীণার নিস্তেজ শরীরটা চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়ল ।
কঠিন স্বপ্নের সহজ সমাপ্তি! না! কিছু স্বপ্ন তবু ও বেঁচে থাকে হারানোর সুর নিয়ে । হয়তো বিনয় শাস্তি শেষে ফিরে আসবে এক নিঃসঙ্গ পৃথিবী নিয়ে । হয়তো কোনদিনই ফিরবে না । হয়তো আজীবন সময়ের স্রোতে বিনয়ের স্বপ্ন গুলো ভাঙ্গা গড়ার ব্যবধান নিয়ে ভাসতে থাকবে আঁধারের যাত্রায় ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৮
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×