somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাস " মারিজুয়ানা" পর্ব ১৫ -নুরুন নাহার লিলিয়ান

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



উপন্যাস " মারিজুয়ানা "পর্ব ১৫
লেখকঃ নুরুন নাহার লিলিয়ান
মারিজুয়ানার অসহায়ত্ব গুলো কেমন করে যেন গুঞ্জনের অনুভূতি গুলোকে গভীর বিষণ্ণতার সমুদ্রে ডুবিয়ে দিচ্ছিল । মানুষের ছোট একটা জীবন এতো কষ্টের কেমন করে হয় ।
মারিজুয়ানা বলতে লাগল ," আমি তখন ষোল বছর বয়স । চেয়ারম্যানের একমাত্র ছেলে রাহাতের সাথে আমার সম্পর্ক চলে । কিন্তু রাহাতের বাবা তা মেনে নেয় না । "
গুঞ্জন জিজ্ঞেস করল ," ওহ ! রাহাত আপনাকে সত্যি ভালবাসত না ?"
মারিজুয়ানা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ," আসলে ওর ভালবাসাটাই আমি বুঝতাম না ।কখন ও পাগলের মতো ভালোবাসতো ।আবার কখন ও এমন যে আমাকে চেনেই না । "
গুঞ্জন অবাক হয়ে আবার জিজ্ঞেস করে ," রাহাতের বাবা কেন মেনে নিতে চায়নি?"
মারিজুয়ানা বলল ," কারন আমার বাবা এক সময়ে ডাকাত দলের নেতা ছিল এবং মাদক চোরাকারবারির সাথে জড়িত ছিল । যদি ও তওবা করে এখন মসজিদের ইমাম হয়েছেন ।"
গুঞ্জন বলে ," আপনার বাবার অতীত পাপের খেসারত আপনি কেন দিবেন ?"
মারিজুয়ানা উত্তর ," পাপ যতোই লুকানো আর পুরনো হোক । তা কোন না কোন ভাবে সময় তা প্রকাশ করে । সুযোগমতো প্রতিশোধ ও নেয় ।"
গুঞ্জন কৌতূহলী হয়ে বলে ," তারপর কি হল ?"
মারিজুয়ানা বলল ," প্রথম যখন জানাজানি হয়ে গেল ।সে সময় একদিন ভরদুপুরে রাহাত আমাকে ওদের বাংলো বাড়িতে ডেকে নেয় । গোপনে কাজী ডেকে বিয়ে ও করে । "
গুঞ্জনের জানার আগ্রহ জেনে আরও বেড়ে যায় । তারপর জিজ্ঞেস করে ," রাহাত আপনাকে ঘরে তুলেনি?"
মারিজুয়ানা উত্তর দেয় ,"না । প্রায় এক মাস আমরা গোপনে নানা জায়গায় মিলিত হতাম । কিন্তু এক সময়ে গোপন বিয়ের খবর এক কান দুই কান করে জানাজানি হয়ে যায় । "
গুঞ্জন জিজ্ঞেস করে ," তারপর কি হল ?"
মারিজুয়ানা স্বাভাবিকভাবে বলে ," তারপর রাহাতের বাবা আমার পরিবারের সবাইকে হুমকি দিল ।যদি আমাকে দূরে অন্য কোথাও না পাঠায় কিংবা অন্যত্র বিয়ে না দেয় তাহলে তার লোকজনেরা আমার বাবাকে মসজিদে অপমান করবে । গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিবে ।"
গুঞ্জন জিজ্ঞেস করে ," রাহাত কি কিছুই বলেনি ?"
মারিজুয়ানা স্থির হয়ে শান্ত কঠিন কণ্ঠে বলল ," না । বলেছে যেন ওকে চিরদিনের জন্য ভুলে যাই । বিয়ে এবং সম্পর্ক দুটোই এক প্রকার অস্বীকার করল । "
গুঞ্জন যেন মারিজুয়ানার গল্পে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল । ভীষণ রকম হতাশা চারপাশ থেকে আঁকড়ে ধরল । তারপর ও মানুষের কৌতূহলের তো আর শেষ নেই ।
গুঞ্জন আবার জিজ্ঞেস করল ," আপনি রাহাত কে কিছু বলেননি ?"
মারিজুয়ানা বলল ," যখন ভালোবাসা হারিয়ে যায় । কোন মান অভিমান রাগ ক্ষোভ কি সেখানে মূল্য থাকে ! আমার মা বাবা আমাকে গাজিপুর ভাইয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিল । ভাইয়ের সংসারের চাপ কমাতে ভাবির কারসাজিতেই উনার সাথে আমার বিয়ে হয় ।"
গুঞ্জন বলল ," এই যে উনি আপনার চেয়ে বয়সে বড় । তারপর এমন অবহেলা করে আপনার ভাই ভাবি জানে ?"
মারিজুয়ানা বলল ," সবাই সব কিছু জানে । আমাকে ভাই ভাবি পরামর্শ দেয় আমি যেন উনার কাছ থেকে বড় অংকের টাকা পয়সা সম্পদ আদায় করে নেই । কিন্তু আমার স্বামী ভীষণ চতুর । আমার বিয়ের পেছনে আমার ভাবির সাথে আমার স্বামীর কোন একটা লেনদেন আছে । "

গুঞ্জন যেন প্যাঁচানো জীবন গল্পে নতুন আর ও একটি গল্পের ঘ্রান পায় । মনের মধ্যে নানা রকম জিজ্ঞাসা ঘুরপাক খেতে থাকে ।কোনটা রেখে যে কোনটা জিজ্ঞেস করবে । কিছুটা সময় চুপচাপ কাটল ।মনে মনে ভেবে নিল কি কি জিজ্ঞেস করবে । এদিকে মারিজুয়ানা রুমের টুকটাক জিনিস গুছিয়ে লাগেজে রাখল ।
গুঞ্জন জিজ্ঞেস করল ,"কি ধরনের লেনদেন ?"
মারিজুয়ানা উত্তর দিল ," এইতো টাকা পয়সা কিংবা এই জাতীয় কিছু । ভাবি চেয়ে ছিল আমার স্বামী আমাকে বিয়ে করে জাপান নিয়ে যাবে ।যদি ও বিয়ের সময় তেমনই কথা ছিল । "
গুঞ্জন আবার জিজ্ঞেস করল ," তাহলে কেন আপনাকে জাপানে নেয়নি ?"
মারিজুয়ানা যেন কোথায় গিয়ে আটকে যায় । তারপর বলে ," আমার কেন জানি ভিসা হয় না । তাছাড়া উনার আগের দুইটা জাপানি বউ ছিল এই বিষয় গুলোর জন্য হতে পারে । আমার সাথে উনার বয়সের অনেক পার্থক্য । "
গুঞ্জন বলল ," আমরা ও জাপানে ছিলাম । সঠিক কাগজ পত্র এবং সব তথ্য সঠিক হলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা না । "
মারিজুয়ানা কপাল কুঁচকে বলে ," উনার যে আগের দুই জাপানি বউয়ের ঘরে দুইটা সন্তান আছে তা আমি বিয়ের ছয় মাস পর জানতে পারি । "
গুঞ্জন অদম্য কৌতূহল নিয়ে জানতে চায় ," কিভাবে জানতে পারলেন ?"
মারিজুয়ানা নির্লিপ্তভাবে উত্তর দেয় ," কোন মানুষই জীবনের সব স্মৃতি চিরতরে মুছে ফেলতে পারেনা ।শ্বাশুড়ির পুরনো আলমারির জিনিস পত্র গুছাতে গিয়ে আগের অনেক গুলো এ্যালবাম পাই । তারপর সেখান থেকেই তাঁর ভেতরের মানুষটাকে আবিস্কার করি ।"

গুঞ্জন এবং মারিজুয়ানা বেশ আন্তরিকভাবে নিজেদের গল্পে মেতে উঠল ।গুঞ্জনের ভেতরে যেন অন্যরকম শিহরণ বয়ে যাচ্ছে । এমন সময় দরজায় কেউ টোকা দিল । মারিজুয়ানা উঠে গিয়ে দরজা খুলল ।দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা গেল শফিক এসেছে । সাথে লম্বা করে কুচকুচে কাল সেই বাদল নামের লোকটা । শফিক মারিজুয়ানা কে বলছে ," তুমি ভাবিদের সাথে থাকো আমরা নাতালি কে নিয়ে শপিং করতে যাচ্ছি । "
শফিকের পেছন থেকে বাদল হি হি করে বিশ্রী রকম হাসি দিয়ে বলল ," ভাবি আমি কিন্তু রাতে আইতাছি ।এখন একটু নাতালিকে নিয়ে আমরা খুলনা শহরটা দেখাইয়া আসি । "

বাদলের বিশ্রী রকম হাসির শব্দ আর ইঙ্গিতপূর্ণ কথা গুলো কেমন কানে আটকালো । বাদল লোকটা যে পরিপূর্ণ নোংরা লোক তার অবয়ব ,কথাবার্তা ,চলন বলন সব কিছুতে প্রকাশ পায় ।গুঞ্জনের এবার মনে পড়েছে ।বাদল নামের লোকটা একটা লাল প্রাইভেটকারে করে এসেছেন । সাথে খাকি ড্রেসের ড্রাইভার । হোটেলে ঢোকার সময়ে একটা লাল গাড়ির দরজা খাকি ড্রেসের ড্রাইভারটা খুব মাথা নিচু করে খুলে দিচ্ছিল । যতোটা নিচু না হলেই নয় । আর সেখান থেকে খুব হাব ভাব নিয়ে নামছিল বাদল। তিনি তার জীবনে যাপনে প্রকাশ করতে চান যে তিনি অনেক ধনী বিশেষ কোন ব্যক্তি ।নাতালিকে কিছু বাংলাদেশি জামা কাপড় কিনে দিবে । একবার ও মারিজুয়ানা কে বলল না । গুঞ্জন মনে মনে ভাবল শফিক লোকটা কেমন দায়িত্বহীন নিজের বউ কে অন্য একটা পরিবারের কাছে রেখে মেয়েকে নিয়ে শপিংয়ে চলে যাচ্ছে ।
মারিজুয়ানা দরজা বন্ধ করে আবার বিছানায় গুঞ্জনের পাশে এসে বসল । কিছুক্ষন পর নেশাম গুঞ্জনকে মোবাইল করল । খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ডঃ ফজলুল হাসানের বাসায় যেতে হবে । গুঞ্জন নেশামকে জানাল যে এই রুমে মারিজুয়ানা একা । শফিক সাহেব বাইরে গিয়েছেন । তাই গুঞ্জনদের সাথে মারিজুয়ানা কে যাওয়ার কথা বলল । মারিজুয়ানা ও না করল না । প্রফেসর ফজলুল ভীষণ আন্তরিক । ডঃ নেশামকে তাঁর বাসায় ডিনার করাবেই । ভদ্রলোকের আন্তরিকতা দেখে নেশাম ড্রাইভার সিদ্দিককে ডাকল । খুলনা শহরে তার ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা আছে কিনা নেশাম জানতে চাইল । সিদ্দিক বেশ অভিজ্ঞ উত্তর দিল ।তারপর নেশাম সবাইকে নিয়েই প্রফেসর ডঃ ফজলুল হাসানের বাসায় রওয়ানা করল ।কিন্তু সে বাসায় পৌঁছে গুঞ্জন কিছুটা অপ্রস্তুত হল ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:১৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×