শব্দের শক্তি মহাকাল অতিক্রম করে । সেই শব্দ প্রকাশের আছে নানাবিধ মাধ্যম । সেই মাধ্যমের মধ্যে লেখার মাধ্যম অন্যতম । যা সাধারন মানুষ প্রকাশ করতে পারে না ।লেখকেরা তাদের লেখার শক্তি দিয়ে আবেগিয় সকল শব্দ প্রকাশ করতে পারে অবলীলায় । তাই হয়তো লেখকেরা ঠিক সাধারনের চেয়ে একটু আলাদা । তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে অনলাইনে লেখার সুযোগ অনেক মানুষের মধ্যেই লেখার অভ্যাসকে বাড়িয়ে দিয়েছে । কিন্তু অনেকে মনে করেন প্রিন্ট মিডিয়ার আকর্ষণ কমে গিয়েছে । এটা সত্যি একটা সময়ে মানুষের বিনোদনের কিংবা জ্ঞান চর্চার অন্যতম মাধ্যম ছিল বই পড়া এবং সিনেমা দেখা ।
সময়ের দাবী পূরণে এখন চারিদিকে আনন্দ উৎযাপনের অনেক উপকরন আছে । তাই কিছুটা হলেও বই পড়ার আকর্ষণ থেকে মানুষের মন বিচ্যুত ।
বাংলাদেশে একুশে বই মেলা একটি অন্যতম আকর্ষণীয় আয়োজন । যে মেলায় শত শত লেখকের বই প্রকাশ হয় । বই মেলায় বই প্রকাশের জন্য সারা বছর লেখক এবং প্রকাশকদের ব্যস্ততা থাকে ।
বই লেখা এবং প্রকাশ করা কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে অনেক অনেক প্রকাশনা সংস্থা ।
বই মেলায় সত্যিকারের পাঠক কয়জন আছে সেই পরিসংখ্যান কার ও কাছে নেই । তবে বই মেলায় ঘুরতে প্রচুর মানুষ যায় । যদি ও বই মেলার প্রয়োজনটা প্রকাশনা সংস্থা গুলোর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ । কারন অন্য আর দশটা প্রতিষ্ঠানের মতো প্রকাশনা সংস্থা গুলো ও বই নিয়ে ব্যবসা করেন । বই বিক্রির উপর নির্ভর করে তাদের ব্যবসায়িক অস্তিত্ব । অন্যদিকে যারা দিনের পর দিন লিখে চলেছে তারা শুধু একটু নামের জন্য লিখেন । কারন এখন ও লেখকদের জন্য প্রফেশনাল স্পেস বাংলাদেশে তৈরি হয়নি । যদি ও দুই একজন লেখক নিজ তাগিদে নিজেদের ব্রান্ডে পরিনত করে তাদের লেখা বইয়ের বিশাল পাঠক শ্রেণী করতে পেরেছেন ।
ব্যক্তিগত পরিচিতি যাদের ভাল ।তাদের লেখা বই ও ভাল বিক্রি হয় । কিন্তু নানা রকম সমস্যা থাকে লেখকদের । সব লেখকের পক্ষে সম্ভব না নিজের লেখা বই সব শ্রেণীর পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া ।যদি ও এই বাজারজাতকরনের দায়িত্বটা প্রকাশনা সংস্থার । কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকাশনা সংস্থা গুলো জানেই না কিভাবে বই নামক প্রোডাক্টটি কিভাবে বাজারজাত করতে হয় । যে কারনে তারা সমাজে যারা যে কোন প্রফেশনে প্রতিষ্ঠিত কিংবা সমাজে সুপরিচিত তাদের দিকেই ঝুকে পড়ে । যারা সত্যিকার অর্থেই সাহিত্য চর্চা করে । সাহিত্য সাধনা করে তাদের অনেকেই যারা সমাজে খুব একটা প্রতিষ্ঠিত না তাদের প্রকাশিত বইয়ের বাজার তেমন একটা থাকে না ।
এই সুযোগে কিছু প্রকাশনা সংস্থা লেখকের সাথে প্রতারনা করতেও দ্বিধা করে না । প্রকাশক সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির অভাব ও এই শিল্পের পিছিয়ে যাওয়ার আর ও একটি কারন । সরকারের উচিত যথাযথ ভাবে প্রকাশকদের ট্রেইনিং এর ব্যবস্থা করা ।
পৃথিবীতে অনেক অনেক বিখ্যাত লেখক আছেন যারা নিজেরা ব্যক্তিগত ভাবে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন । কিন্তু তাদের লেখা বই পৃথিবীর কাছে নিজেদের পরিচিত করে তুলেছে ।
অথচ এই দেশে লেখকদের শ্রমিকদের মতোই খাটতে হয় । অনেক খেটে ও প্রকাশকদের কাছ থেকে শুনতে হয় বই তেমন বিক্রি হয়নি । বরাবরের মতো লেখক তাদের লেখার ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয় ।প্রকাশনা শিল্প জগতে যোগ্য ,সৎ আর শিক্ষিত মানুষের প্রয়োজন । কতো কপি বই প্রকাশ হল , কতো খরচ হয় , কতোটা বিক্রি হল সেই হিসেব প্রকাশকরা লেখকদের দেয় না ।কিংবা এই হিসেব নিকেশের বিষয়টি তারা বরাবর এড়িয়ে যায় । এমনকি কখন ও কোন লেখকদের সৌজন্য কপি ও দেওয়া না ।
আমার মনেকরি এই ডিজিটাল পৃথিবীতে এখন সময় এসেছে প্রকাশনা শিল্পের হিসেব নিকাশের স্বচ্ছতা কিংবা জবাব্দিহিতার ।প্রকাশনা শিল্পের আর ও বেশি ডিজিটালাইজেশন করা । প্রকাশনা শিল্পের উন্নয়নে সকলের এগিয়ে আসা । স্কুল ,কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত বই মেলার আয়োজন থাকা । সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে বইয়ের বিকল্প কিছু নেই । তাই প্রকাশক এবং লেখকের উৎকর্ষতায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ।
যারা প্রফেশনালি লিখছেন সেই সব কলম শ্রমিকদের মানে লেখকদের লেখার ন্যায্য মূল্য দেওয়া হোক ।
#কলম শ্রমিক বা লেখকদের লেখার মুল্যায়ন হোক
# নুরুন নাহার লিলিয়ান
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৬