( প্রয়াত শিল্পী তাজিন আহমেদ )
খুবই যন্ত্রণা আর পীড়াদায়ক। বার বার মনে পড়ছে । কেমন করে যেন বুকের ভেতরটায় কিছু কেটে যাচ্ছে ।কোন ভাবেই কাজে মন দিতে পারছি না । জীবন যে কখন কার জীবনে ভয়াবহ রূপ নিয়ে আসে ।শেষ পর্যন্ত টাকা ,বাড়ি ,গাড়ি ,নাম যশ কিছুই থাকে না ।দূরের কিংবা কাছের কতো মানুষের যে আত্ম অহংকার দেখলাম । যাইহোক অনলাইন নিউজে আর ইউটিউবে অভিনেত্রী তাজিন আহমেদের লুকানো জীবন যুদ্ধ আর মৃত্যুটা যে কারও চোখের পানি এনে দিবে । এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী , অনেক নামকরা নিউজ পেপার আর টেলিভিশনে চাকরি করেছেন । নিজেদের প্রোডাকশন হাউজ ও ছিল । উনার মা অমোঘ নিয়তি কিংবা চক্রান্তের শিকার হয়ে চেক জালিয়াতির অভিযোগে গাজী পুরের কাসিমপুর কারাগারে জেল খাটছে । আগামি মাসে শাস্তি শেষ হবে । এর মধ্যেই একমাত্র সন্তান কে করুন ভাবে হারাল । তাজিন এক সময়ে পরিচালক এজাজ মুন্না কে বিয়ে করেছিল । শান্তি পায়নি । মাদক আর নারী আসক্ত এই অভিযোগে তাকে ছেড়ে আসে । আবার সুদর্শন মিউজিশিয়ান রুমি রহমানকে বিয়ে করে । সেখানে ও শান্তি কেড়ে নেয় আরেক নারী । রুমি রহমান নাকি ছন্দা নামের এক গায়িকা কে গোপনে বিয়ে করে । সেই মহিলা রুমি রহমানের নামে নারী নির্যাতনের কেস করে । এতো কিছুর পর ও সে বাজে চরিত্রের স্বামী রুমি কে নানা জায়গায় লুকিয়ে রেখে সাপোর্ট করে । যেন পুলিশ ধরতে না পারে । একজন নারীর জীবনে কতো কতো ব্যাখ্যাহীন কষ্ট থাকে । অথচ মারা যাওয়ার সময় সেই স্বামী মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে । জানাজায় কেউ আসেনি । এমন কি কোন আত্মীয় স্বজন কে দেখা যায়নি । শোনা যায় হাসপাতালের খরচ কে বা কারা বহন করবে এ নিয়ে ও অনেক দ্বন্দ্ব ছিল । শেষে রোজী সিদ্দিকি এবং অভিনেতা শহিদুজ্জামান সেলিম সব দায়িত্ব নেয় । তারপর তার দাফন হয় । কি ভয়ঙ্কর নিয়তি ! অথচ তার আপন ফুপু বর্ষীয়ান অভিনেত্রী দিলারা জামান । সে ও একটি লাশের প্রতি দায়িত্বহীন আচরন করে অবাক হয়ে গেলাম ।বাংলাদেশের অভিনেতা অভিনেত্রীরা আসলেই অনেক মেধাবী । মিডিয়া জগতের অনেক ধনী শিল্পী ছিল । অনেক ক্ষমতাবান লোকজন ছিল । কেউ কি তাকে অর্থনৈতিক ভাবে একটু সাহায্য করতে পারত না । ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরা সাধারন মানুষরা একজন সুশীল , মেধাবী আর কর্মদক্ষ তাজিন আহমেদ কে চিনতাম । কেউ তার একান্ত জীবন যুদ্ধের গল্প জানতাম না । আজকে তার খুব কাছে থাকা অভিনেত্রীর কান্না জড়িত একটা ভিডিও দেখলাম । মিডিয়া জগতের মানুষ গুলো কি রকম নিষ্ঠুর ,বিবেক হীন আর মিথ্যাচারে আক্রান্ত তা প্রমানিত হল । মিডিয়া গুলো একজন প্রতিভাবান অভিনেত্রীর করুন জীবন নিয়ে খবর বানিয়ে প্রচার করছে । আর ব্যবসা করছে । সবচেয়ে কঠিন একটি বিষয় সেটা হল আপন ফুপু দিলারা জামান কেমনে দায়িত্ব এড়িয়ে থাকল । কার পথে মৃত্যু হবে ।কার ঘরে মৃত্যু হবে কেউ জানে না । অবাক ধনী শিল্পপতি মুসা ইব্রাহীমের ছেলে ববি হাজ্জাজের দলের একটি পদে ও নাকি তিনি ছিলেন । তার কাছে কি তিনি একটা কাজ জোগাড় করতে পারতেন না । সে প্রতিভাবান অভিনেত্রী এতো গুলো বছর মিডিয়ায় অবদান রেখেছে তাকে একটু সহায়তা করার কেউ ছিল না । বিষয়টা বিশ্বাস করতে সত্যি কষ্ট হচ্ছে । তাছাড়া ব্যক্তিগত ভাবে তিনি যথেষ্ট শিক্ষিত এবং কর্মদক্ষ ও ছিলেন । আপন ফুপু থাকতে অভিনেতা সেলিম সাহেব এবং অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকি সব দায়িত্ব নেয় । মিডিয়ার মানুষ জনকে সাধারন মানুষরা দেখে ।তাদের কাজ দেখে । তাদের জীবন বোধ আর মূল্যবোধ সাধারনের অনুকরণীয় । এই ধরনের চরম নিষ্ঠুর আর অমানবিক মানুষ গুলোর প্রতি সাধারনের আর কতোটুকুই সম্মান অবিশিষ্ট থাকবে । বেঁচে থাকতে একটা মানুষ ন্যায় -অন্যায় করে । একটা মানুষের প্রতি অন্য মানুষের অনেক রাগ অভিমান থাকতে পারে । একটা লাশ সব কিছুর উপরে থাকে । একটা সম্মানিত লাশকে যারা অভিনয় করে বেওয়ারিশ করার চেষ্টা করে । যারা রক্ত কে অস্বীকার করে তাদের মানুষ কেমনে সম্মান করবে । মানুষের সাথে রাগ করা যায় । লাশের সাথে কি রাগ করা যায় । আহা! কি ভয়াবহ নিষ্ঠুরতায় ভরা আমাদের সমাজ ।আমাদের দুনিয়া কতো প্রহসনের । সেই ছোট বেলা থেকে উনার অভিনয় দেখি । উনার লেখা পড়ি । একজন দর্শক কিংবা পাঠক হিসেবে উনার প্রতি সম্মান দেখান ও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে । উনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছিলেন । উনি আমাদের মিডিয়ার মানুষ ছিলেন । উনি আমাদের দেশের ভীষণ মেধাবী নারী ছিলেন ।জানিনা তাজিনের মায়ের কেমন লাগছে! কেমন করে তিনি এই সব সহ্য করে বেঁচে আছেন । যখন জেল থেকে ফিরবে কেমন করে সব আবার গুছিয়ে নিবে । যার সব টুকু শেষ হয়ে গিয়েছে ।এক সময় তার ও সব কিছু ছিল ।এমন ভয়াবহতা যে কোন সময় যে কারও জীবনে আসতে পারে । আসুন আত্ম অহংকার টা ছেড়ে একটু বিবেক কে জাগ্রত করি । মানবিক মানুষের পরিচয় দেই । তাজিনের জীবন একটা মর্মস্পর্শী হৃদয় বিদারক সিনেমাকে ও হার মানবে ।
( মা বাবার সাথে ছোট তাজিন আহমেদ )
এটা সত্য যে মিডিয়ায় যারা কাজ করে অধিকাংশই নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায় । যতো রঙিন ভুবন ততো প্রহসনের গল্প । যারা অনলাইন পত্রিকা বা টিভিতে কাজ করে অনেকেরই বেতন খুব সামান্য । দূর থেকে কালারফুল মনে হলেও ভীষণ যুদ্ধের জায়গা । ভাল পরিবারের অনেকেই মিডিয়া থেকে দুরে সরে যায় বা যাচ্ছে । এদের জীবনের এমন সব ঘটনা সাধারনের মনোজগতে ভীষণ ভাবে প্রভাব পড়ে । আমরা কাদের দেখি যাদের নিজেদের জীবনেরই সৌন্দর্য আর মানবিকতা বোধ নেই । আর বুঝলাম না অনেক অনেক দুঃস্থ গরীব শিল্পীর জীবন কাহিনী শোনা যায় । এর মধ্যে খালেদা আক্তার কল্পনা , রানী সরকার সহ আরও অনেকে । বুঝলাম না সরকার বা সুশীলরা কি করে ? তাদের হাব ভাব দেখানও শিল্পী সংগঠন গুলো কি করে ? ২০০২ সালে এক চাইনিজ মেয়ে নিয়ে সেঝ মামার বাসা কবি জসিম উদ্দিন রোডে যাচ্ছিলাম । পথে পপ গায়ক আজম খানের বাসা পরল । চাইনিজ মেয়েটাকে বললাম ," এটা আমাদের দেশের সুপার স্টার পপ গায়কের বাড়ি ।"
চাইনিজ মেয়েটি ভাঙ্গা চোরা বাড়ির দিকে তাকিয়ে আমাকে বলল ," তোমাদের বিখ্যাত পপ গায়কের বাড়ি কিন্তু এমন গরীবি অবস্থা কেন ? আমাদের দেশের শিল্পীদের বাড়ির আশে পাশের অনেকখানি এলাকা জুড়ে পুলিশ পাহাড়ায় থাকে । শিল্পীর সম্মান সবার উপরে ।"
আমাদের দেশে কেউ কোন সেক্টরে শিল্পী হতে চাইলে তাকে অনেক বেশি ঝুঁকি নিতে হবে । এখন ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা এখানে তৈরি হয়নি ।
যাইহোক মহান আল্লাহ উনাকে বেহেস্ত বাসী করুন ।সকল ভুল ক্ষমা করে দিন ।
( স্বামী রুমি রাহমানের সাথে তাজিন আহমেদ )
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:৩৬