somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস চালক-সুপারভাইজার দৈত্যদের হাতে মানুষ খুন বেড়েছে।

২৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন বাসে বাস চালক , সহকারী , সুপারভাইজারদের হাতে ভয়ঙ্করভাবে মানুষ খুন হচ্ছে । যা কিনা লোমহর্ষক দানবীয় কাহিনিকে অতিক্রম করে । টাঙ্গাইলে বাসে বাস চালক ,হেলপারদের দ্বারা ধর্ষণ হওয়ার পর তার ঘাড় মটকে খুন করে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয় । পুরো বাংলাদেশ স্তব্ধ হয়ে যায় । মানুষের সচেতন হৃদয়ে গিয়ে আঘাত হানে । মিডিয়া আর সুশীল সমাজ সরব হয়ে উঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছুদিন ঘৃণা প্রকাশের জোয়ার চলে ।তারপর সময়ের নিয়মে বিনা দোষে ধর্ষিত এবং ঘাড় মটকে মরে যাওয়া সেই রূপা কে সবাই ভুলে ও যায় ।
রূপার পরিবারের ভরন পোষণে সাহায্য করতে তার বোন পপি কে একটা কোন রকম চাকরি দেওয়া হয় । জীবন যুদ্ধ আর নিয়মের শেকল ধরে সবাই ব্যস্ত হয়ে যায় । রূপার হত্যাকারীদের কি হল তা নিয়ে কোন শব্দ আর বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে পাওয়া যায় না ।
হয়তো এমন ঘটনা বিশ কোটি জনগণের বাংলাদেশে নিয়মিত নিয়ম করেই ঘটে । কয়টা ঘটনা আমাদের কর্ণ কুহরে পৌছায় । সেজন্যই বাস মালিক , চালক , সহকারী আর সুপারভাইজার দৈত্যদের এতো দুঃসাহস ।এতো সহজে তাঁরা মানুষ খুন , ধর্ষণ আর গুম ও করে দেয় ।
সম্প্রতি যে ঘটনাটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মিডিয়া , সুশীল সমাজ রক্তাক্ত তা হচ্ছে গত শনিবার মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় পাওয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলের বিকৃত লাশ । এই লাশকে ঘিরে পুলিশের তদন্তে বের হয়ে আসে ভয়ংকর এক নারকীয় পাষাণদের তান্ডবলীলা ।
গতকাল শুক্রবার ,২৭ জুলাই দেশের জাতীয় পত্রিকা , অনলাইন নিউজ , টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহ সব জায়গায় খবরটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ পায় । সাইদুর তাঁর আর ও দুই বন্ধু মহিউদ্দিন এবং হাকিমুরের সাথে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসছিল । চট্টগ্রামে বসবাসকারী মা কোহিনূর কে মোবাইলে বলেছিল," টেনশন করোনা। ঢাকায় গিয়ে ফোন করব " । সেই ফোন আর আসেনি মা কোহিনুরের কাছে । এই ঘটনা নিয়ে মুন্সিগঞ্জে একটা সংবাদ সম্মেলন হয় । সেখানে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন , হানিফ পরিবহনের ঢাকা মেট্রো -ব -৯৬৮৭ নম্বরের বাসে দুই বন্ধু সহ ঢাকায় আসছিল সাইদুর রহমান পায়েল । বন্ধু মহিউদ্দিনের পাশের সীটেই ছিল সাইদুর । ভোর রাত চারটার দিকে ঢাকা -চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ভবের চর এলাকার কাছের সেতুতে যানজটে টয়লেট করতে সাইদুর বাস থেকে নামে ।
কিন্তু যানজট শেষ হলে বাস চলতে শুরু করে । সে বাসের কাছাকাছি আসার পর বাস কর্মীরা দরজা ও খুলে । হানিফ এন্টারপ্রাইজের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের স্বয়ংক্রিয় দরজার আঘাতে সাইদুর পড়ে যায় । নাক ,মুখ আর মাথা থেকে রক্ত ক্ষরন শুরু হয় ।রাস্তার উপর লুটিয়ে পড়ে। বাসকর্মীরা মনে করে সাইদুর মারা গেছেন । আর এই মৃত্যু নিয়ে ঝামেলা হতে পারে । তাই ফুলদী নদীতে সাইদুরের লাশটা ফেলে দিয়ে বাসটা ঢাকায় চলে আসে । ময়না তদন্তে জানা যায় সাইদুরের পেটে প্রচুর পানি ছিল । ফেলে দেওয়ার পর ও বেশ অনেকটা সময় জীবিত ছিল ।
সাইদুরের মা কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, আহত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে গেলে ও কেউ না কেউ বাঁচাত । হয়তো বেঁচে থাকত । নদীতে ফেলে কেন মেরে ফেলা হল । এই প্রশ্নের উত্তর কেউই দিতে পারবে না । পৃথিবীর কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব না এই উত্তর দেওয়া ।
চট্টগ্রামের সন্তান নিহত সাইদুর রহমান পায়েল । পরিবারের সাথেই চট্টগ্রামের হালিশহরে থাকতেন । সেখানে মা কোহিনূর একাই থাকতেন । বাবা আর বড় ভাই কাতার প্রবাসী । নিঃসঙ্গ মায়ের সুখ দুঃখ সকল আবেগের সঙ্গী ছিলেন সাইদুর রহমান । আর সেই ছেলেটির এমন নিষ্ঠুর মৃত্যু কোনভাবেই মা মানতে পারছেন না ।ছেলে ঢাকা থেকে ফিরলে যে খাটে ঘুমাত সেই শূন্য খাটের দিকে চেয়ে মা অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছেন ।
সাইদুরের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তাঁর প্রবাসী বড় ভাই বাবা সোমবার বাংলাদেশে ফিরেছেন । লাশ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় শেষ চেহারাটা দেখার ও ভাগ্য হয়নি দুর্ভাগা আপনজনদের । আর এই ভাবেই বাংলাদেশে দিন শুরু হয় । আর রাত আসে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ।
মেয়র আনিসুল হক বেঁচে থাকতে এক সভায় বলেছিলেন বাস চালক মালিকদের পেছনের হাত অনেক বড় । তাদের নিয়ন্ত্রনে আনা সত্যি কঠিন । মেয়র সাহেব পরিকল্পিত নগর তৈরিতে বাস পরিহনের কিছু পরিবর্তন করার চেষ্টা করে ছিলেন । যেখানে স্বয়ং নগর পিতা বলে গেছেন বাস মালিকদের ক্ষমতা আর কাল হাতের কথা সেখানে সাধারন মানুষ সত্যি অসহায় ।
এখন দিনে রাতে নারী কিংবা পুরুষ পথে কেউই নিরাপদ না । চলতি পথে বাসের ভেতরেই দৈত্যদের নির্মমতার শিকার হতে পারে যে কেউ ।
তবে এটা ও সত্য বাস মালিক চালক যতই ক্ষমতাধর হোক জনগণের সচেতনতা আর সাহসের কাছে কিছুই না ।কারন জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস । সেই জন্য চাই পরিকল্পিত আইন কানুনের প্রয়োগ , বাস চালক ,মালিক আর সুপারভাইজারদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং আর মানবিক চেতনায় উদ্ভাসিত করা । তাদের মানবিক বোধের জায়গা গুলো জীবন্ত রাখা ।
লোকাল বাস থেকে শুরু করে সব ধরনের পরিবহনে যাত্রীদের সাথে চালক আর সহকারীদের খারাপ আচরন সব সময় শোনা যায় । সরকারী - বেসরকারী উদ্যোগে বাস চালক সহকারীদের দেশের আইন কানুন সম্পর্কে সচেতন আর না মেনে চললে কঠিন শাস্তির বিধানের হুশিয়ারি দেওয়া উচিত । সেই সাথে দেশের মিডিয়া গুলোতে যাত্রী হয়রানী রোধে সচেতনতার শ্লোগান প্রচার করা উচিত । শুধু প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর সব জায়াগায় সব ধরনের পরিবহনে চলাচলে নাগরিক সচেতনতার বিকল্প নেই ।
তা না হলে এমন ভয়াবহ মৃত্যুর মিছিল শুধুই বড় হবে । আশাকরি রূপা এবং পায়েলের মতো হত্যাকারী বাস কর্মীদের ফাঁসি রাষ্ট্রীয় ভাবে ঘোষিত হোক ।
আসুন বাসে চলাচলে এমন সব দুর্ঘটনা রোধে আমরা একে অন্যকে সচেতন করি । এমন দানবদের হাতে প্রিয় মানুষদের মৃত্যু রোধ করি । নিজেদের মাতৃভূমিতে ভালবাসার বীজ রোপণ করি । যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হতে প্রিয় দেশের মানুষদের রক্ষা করি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৫৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×