somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাস " মারিজুয়ানা "পর্ব ২২- নুরুন নাহার লিলিয়ান ।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




#উপন্যাস" মারিজুয়ানা" পর্ব ২২
#নুরুন নাহার লিলিয়ান
তিন চার দিন ধরে শফিকের মা বিছানা থেকে উঠে দাড়াতে পারে । ইচ্ছে করলে নিজেই একা টয়লেটে যেতে পারে। কিন্তু সে যাবে না । মারিজুয়ানার সাহায্য তাকে নিতেই হবে ।মারিজুয়ানাকে কাজ করাতে না পারলে তাঁর পেটের ভাত হজম হয় না । শফিকের মায়ের ছেলেকে নিয়ে প্রচণ্ড অহংকার । মারিজুয়ানাকে সব সময় অবহেলা করে সম্বোধন করবে । একটু কাজের এদিক সেদিক হলেই সে মারিজুয়ানা কে ডেকে একশোটা কথা শুনাবে ।
--"কই নবাবজাদির ঝি কই রে ! মাওলানার পাকনা মাইয়াডা কই । আমার শফিক রে ঘুমে বেঁচে । আমি যে ডাকি কথা কানে যায় না ! "
মারিজুয়ানা কিচেন থেকে দৌড়ে আসে ।
--"কি হয়েছে আম্মা ? কিছু লাগবে?
--" আমার কি লাগব না লাগব তর কোন নজর আছে ? এই যে ডাকি কানে যায় না ? নবাবজাদি যা আমার স্যান্ডেল দুইডা ধুইয়া আন । টয়লেটে যামু ।"
মারিজুয়ানার মাথায় রক্ত উঠে যায় । কিছুই বলতে পারে না । কারন শফিক রেগে গিয়ে তাকে বাসা থেকে বের করে দিতে পারে । কুটনি বুড়িটা ইচ্ছে করলেই বাসার কাজের বুয়াকে ডাকতে পারে । কিন্তু সে তাকে ডাকবে না ।যেভাবেই হোক মারিজুয়ানাকে তাঁর কাজের উপর রাখতেই হবে ।
মারিজুয়ানা খুব ঠান্ডা মাথায় বলল ," আম্মা টয়লেটের সামনে জুতা আছে । "
আর অমনি শফিকের মা ক্ষেপে গেল । ক্ষেপে গেলে সে আবোল তাবোল বলতে থাকে । আর তা অনেকক্ষন থাকে । কিছুতেই তাঁর রাগ থামে না ।
-- "নবাবজাদির ঘরে নবাবজাদি ! আমি কইছু জুতা আনতে তুই জুতা আনবি । এতো জ্ঞান বুদ্ধি দিতে কইছি । "
মারিজুয়ানা কাচুমাচু হয়ে বলে ," আম্মা আপনি রাগ করতেছেন ক্যান !আমি কি ভুল বললাম?"
-- কিচ্ছু বুঝো না ! ন্যাকা! আমি কি ভুল বললাম । আবার শুদ্ধ কথা মারায় । যা জুতা নিয়া আয় । আমি কি টয়লেট পর্যন্ত খালি পায়ে যামু । "
মারিজুয়ানা জুতা আনতে গেল । আর এদিকে সে চিৎকার করতেই থাকল।
--শফিকরে কইছি এই পাকনা তেতুলরে বেশি মাথায় তুলিস না । অল্প বয়সী বউ পাইয়া সব গুলায় ফেলছে । এইডায় কোন দিন যে আমার পুলাডার সব সম্পত্তি নিয়া ভাগে ।"
এই সময়ে মমতাজ খালা রুমে আসে । কিছুক্ষন কপাল কুচকে কথা গুলো শুনে ।তারপর এগিয়ে এসে বোনের পাশে ।
--" বউডা কচি হইলে কি হইব । এক্কেরে টনটন করে । শফিক বেডার জাপানি মাইয়াডা তো দেখি রুম থাইক্কা বাইরই হয় না । "
শফিকের মা ও বলল ," আরে ওইডা আইছে আমার পুলাডার সব সম্পদ নষ্ট করতে । খালি খায় আর খায় !"
মমতাজ বোনের সাথে তাল মিলিয়ে বলল ," হ বুজি ওইডা রে ভাল লাগতাছে না । কথা কি কয় না কয় । কিছুই বুঝি না । খালি ঘুরে আর খায় ।"
এমন সময় মারিজুয়ানা সেন্ডেল নিয়া আসে । উপুড় হয়ে শাশুড়িকে পায়ে পড়িয়ে দেয় । এদিকে মমতাজকে বলে ," খালা টেবিলে সকালের নাস্তা দেওয়া হয়েছে । খেতে বসেন ।টেবিলে যান নাতালি ও খাচ্ছে । তারপর শাশুড়ির হাতটা কাঁধে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে টয়লেটের দিকে ।
মমতাজ খালা রুম থেকে বের হয়েই খাবারের টেবিলের দিকে যায় । সেখানে নাতালি একাই খাবার খাচ্ছে । ডিম ওমলেট , রুটি , কলা , নানা রকমের ফল , সালাদ ও জাপানি ওদন ও আছে ।মমতাজ খালা খুব মনোযোগ দিয়ে খাবার গুলো দেখতে থাকে ।
তারপর নাতালি কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে দেখে । নাতালি আজকে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর টি শার্ট পড়েছে ।কাল প্যান্টের নিচের দিকে নাতালির সাদা সাদা ঠ্যাং বের হয়ে আছে । মমতাজ খালা মাথা ঝুকে আর ও একটু কাছে এসে নাতালির সাদা সাদা বের হয়ে থাকা পা দুটোকে দেখে । নাতালি ভীষণ বিরক্তি নিয়ে মমতাজ খালার দিকে তাকায় । তারপর ইশারা দিয়ে চেয়ারে বসতে বলে ।আর খাবার খেতে বলে । কিন্তু মমতাজ খালার চোখ তো নাতালির ড্রেস দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে । আর একটু হলে হয়তো জ্ঞান হারাতো ।
তিনি কি বলবে বুঝতে পারছে না । নাতালির খাবার গুলোর দিকে আরও একবার দেখে নিল । তারপর মুখটা নাতালির মুখের দিকে নিয়ে জিজ্ঞেস করল," কি এতো খাও ক্যারে ? জাপান ফেরত যাইবা কবে ? আর কয়দিন থাকলে তো শফিক বেডার সব সম্পদ খাইয়া ফেলবা ? কথা বুঝছো ?"
নাতালি বিরক্তি আর লাজুক হাসি দিয়ে ভাঙ্গা বাংলায় বলে ," আপনি খাবার খান ।"
মমতাজ খালার যেন বিস্ময়ের শেষ নেই । তিনি নাতালির মুখে বাংলা শুনে ভীষণ বিনোদিত । তিনি যেন মহা আশ্চর্যজনক কিছু শুনতে পেয়েছেন । বিস্ময়য়ের মহা সমুদ্রে যেন তিনি হাবু ডুবু খাচ্ছেন ।তারপর নিজে নিজেই বলে উঠে ," এম্মা হেয় দেহি বাংলা কইতে পারে!
নাতালি খাওয়া শেষ করে চুপচাপ উঠে পড়ে । টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মুগি চা মগে ঢালতে থাকে ।তারপর মুগি চায়ের মগ হাতে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসল ।এরপর মমতাজ খাবারের টেবিল থেকে একটা আপেল নিয়ে কামড়াতে কামড়াতে নাতালির সোফার কাছে যায় । নাতালি কেমন করে মুগি চা চুমুক দিয়ে খায় সেটা সে তাকিয়ে দেখে । কিছুক্ষন এমনি দাঁড়িয়ে থাকে আপেল খেতে খেতে । নাতালি আড় চোখে মমতাজ খালার শব্দ করে আপেল খাওয়ার অদ্ভুত দৃশ্য দেখে ।আর নিজের মনে মনে মুচকি হাসে ।
আপেল খাওয়া শেষে নাতালির ঘাড়ের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে ," কি বিয়া শাদী করবা না ? ডাঙ্গর তো কম না ? লাইন টাইন আছে ?"
নাতালি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে ," কিসের লাইন ?"
মমতাজ খালা ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করে ," আরে জামাই নাই ? অই যে কি জানি কয় হাজুবেন্ড নাকি বয়োফ্রেন্ড নাই ?"
নাতালি এবার হেসে ফেলে । তারপর বলে ," জাপানে আছে । "
মমতাজ খালা এবার আরও বিস্ময় নিয়ে বলে ," ও বিয়া কি জাপানেই করবা?"
নাতালি সুন্দর করে ভাংগা বাংলায় বলে ," এখন বিয়ের কথা ভাবিনি ।"
মমতাজ চোখ কপালে তুলে বলে ," ওম্মা হেয় এতো বড় ছেমরি । কয় বিয়া কথা অহন ও ভাবে নাই । বছর ভইরা পুলা গো লটর পটর করবা খালি । হের তো চরিত্র সুবিধার মনে হইতাছে না ।"
নাতালি একটু কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে ," লটর -পটর ! এটা কি ? এটার মানে কি ?"
মমতাজ খালা মুখের কাছে গিয়ে বলে , " লটর- পটর বুঝোনা? আরে পুলা গো লগে লটর-পটর !"
নাতালিকে সে কোনভাবেই বুঝাতে পারে না । এমন সময় মারিজুয়ানা আসে । তারপর মমতাজ খালার কথা বার্তা কিছুটা শুনতে পায় । মারিজুয়ানা জিহ্বায় কামড় কেটে মমতাজ খালা কে বলে ," আরে খালা ওকে আপনি এসব কি জিজ্ঞেস করতেছেন ?আপনার ভাগিনা শফিক গোসল করে নাস্তা করতে আসছে । এসব শুনতে পেলে রেগে যাবে ।"
মমতাজ খালা নির্বিকার ভাবে বলে ,"আমি অন্যায় কি কইছি !"
মারিজুয়ানা ফের বলে ," আচ্ছা আপনি নাস্তা করতে বসেন।"
মমতাজ খালা টেবিলের দিকে যেতে যেতে বলে ," তুমগো বড়লোকি নাস্তা মুখে দিলেই শেষ ! এগুলিতে পেট ভরেনি!"
মারিজুয়ানা ধৈর্য নিয়ে বলে ," আচ্ছা ঠিক আছে । এখন এগুলো খান আমি দ্রুত ভাত রান্না করছি ।"
এদিকে নাতালি মমতাজ খালার উপর চরম বিরক্ত । রাগ আর বিরক্ত নিয়ে টেবিলে খালি চায়ের মগটা রেখে নিজের রুমে চলে যায় । রুমে ঢুকে জোরে দরজাটা বন্ধ করে ।
শফিক দরজার বন্ধ করার আওয়াজ পায় । খাবার টেবিলে বসতে বসতে সেদিকে তাকায় । তারপর চুপ চাপ নাস্তা করে উঠে পড়ে । আজকে হয়তো ময়মনসিংহ যাবে । সেখানে তাঁর আর ও একটা ব্যবসার প্রজেক্ট আছে । রাতেই ফিরে আসবে । ড্রাইভার সিদ্দিক মিয়াকে কল করে। নিচে গাড়ি বের করে অপেক্ষা করছে ।
আজকে কয়েকজন আত্মীয় স্বজন শফিকের সাথে ময়মনসিংহ ফিরে যাবে । শফিক সকালের নাস্তা খেয়েই চুপচাপ বের হয়ে গেল । সাথে আর ও দুজন আত্মীয় নিচে পেছনে পেছনে নিচে নামল ।
মারিজুয়ানা অনেক কিছু শফিক কে বলতে চেয়ে ও বলতে পারল না ।
চলবে ………

আগের
http://www.somewhereinblog.net/blog/nurunnaharlilian/30248398
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×