somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাস"মারিজুয়ানা"২৪-নুরুন নাহার লিলিয়ান

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


#উপন্যাস"মারিজুয়ানা"২৪
#নুরুন নাহার লিলিয়ান

এক সপ্তাহ হয় শফিকের মা ময়মনসিংহ চলে গিয়েছে । মারিজুয়ানা একটু রিল্যাক্স জীবন যাপন করছে । কিন্তু নাতালি মেয়েটা দিনে দিনেই বেয়াদব হয়ে উঠছে । ইদানিং সে অনেক রাত করে বাসায় ফিরছে ।এখানে ভাষা ইন্সটিটিউটে বাঙালি মেয়ে আসফির মাধ্যমে বেশ কিছু ছেলে মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে ।এর মধ্যে আসাদ নামের একটি ছেলের সাথে নাতালির গভির সম্পর্ক তৈরি হয়েছে । আসাদ ব্যক্তিগত জীবনে নরসিংদির এক গ্রাম থেকে আসা মেধাবি ছাত্র । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র। তৃতীয় বর্ষে পড়ছে ।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও পড়ে । কিন্তু কেমন করে যেন নাতালির প্রেমের ঘোরে হাবু ডুবু খাচ্ছে ।

আসফি কে নিয়ে নাতালি সারা দিন নানা জায়গায় ঘুরে । তারপর রাতে বাসায় ফিরেই গোসল করতে ঢুকে । বেশ কিছু দিন হয় একই কাজ করে যাচ্ছে । মারিজুয়ানার চোখে বিষয়টা লাগলেও শফিক কে কিছু বলেনি ।কাল রাতের ঘটনা । নাতালিকে দেখেই কেমন উদ্ভ্রান্ত মনে হচ্ছিল । বাইরে এসেই ওয়াস রুমে গেল । তারপর কোন কথা না বলেই নিজের রুমে চলে গেল । মারিজুয়ানা সামনের রুমে বসে নিউজ পেপার পড়ছিল । ব্যাপারটা কেমন যেন লাগল ।
অনেক ডাকা ডাকির পর রাতের খাবার খেতে আসে ।

এমনিতে নাতালি খেতে বসলে বাংলাদেশি খাবার নিয়ে নানা রকম কৌতূহলী প্রশ্ন করে । কিন্তু কাল রাতে একদম মাথা নিচু করে খাচ্ছিল । মারিজুয়ানা খুব ভাল করে লক্ষ্য করছিল । শারীরিক কোন সমস্যা কিনা জানতে চাইলেও বলে না । একদম চুপ হয়ে থাকে । প্রতি মাসে পিরিয়ডের সময় গুলোতে পেট ব্যথা করলে কিংবা যে কোন সমস্যা হলে সে মারিজুয়ানার সাহায্য নেয় । কিন্তু কালকের রাতে নাতালিকে দেখেই মনে হচ্ছে কিছু একটা লুকাচ্ছে ।

নাতালির রুমের চারপাশে ভাল করে দেখল মারিজুয়ানা । কিছু না পেলেও ওর রুমের দরজাটা একটু ফাঁক করার সাথে সাথেই যেন মারিজুয়ানার মাথা ঘুরাতে লাগল । রক্ত মাখা বাসি প্যাডে ময়লার ঝুড়ি ভরে গেছে । ফ্লোরে জায়গায় জায়গায় রক্ত । কেমন অদ্ভুত ভাবে কালচে হয়ে আছে । নাতালির যে নিয়ন্ত্রনহীন রক্তপাত হচ্ছে তাতে আর কোন সন্দেহ নেই ।মারিজুয়ানা ব্যাপারটা বুঝেও না বুঝার ভান করল।
আজকে খাবারের টেবিলে নাতালিকে একদম অন্যরকম লাগছে ।যেন মারিজুয়ানার বাধ্যগত সন্তান । মারিজুয়ানা চুপচাপ নিস্তব্ধ নাতালির পাশের চেয়ারে বসে আছে ।
মারিজুয়ানা আস্তে করে জিজ্ঞেস করে ,"তোমার মন খারাপ ?"
নাতালি মাথা নিচু করেই উত্তর দেয় ,"হুম"
মারিজুয়ানা জিজ্ঞেস করল ," অনেক রক্ত যাচ্ছে ?"
নাতালি মাথা নিচু করে বলল ,"হুম । এখন ঠিক আছে । "
মারিজুয়ানা জিজ্ঞেস করল ," ডাক্তারের কাছে নিতে হবে?"
নাতালি সচেতন ভাবে উত্তর দিল ," না । গত দুই দিন খারাপ ছিলাম । আসাদ আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল ।"
মারিজুয়ানার বুকের ভেতর কেমন মোচর দিয়ে উঠল । তারপর নিজেকে শান্ত করে জিজ্ঞেস করল ," আসাদ কেন তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়েছিল ?"
নাতালি খুব স্থির কন্ঠে বলল ," গত সপ্তাহে দুই তিন দিন সন্ধ্যার সময়ে বেশ কয়েকবার আমি আর আসাদ ভালবেসেছিলাম ।তারপর আমাকে ইমারজেন্সি পিল খাইয়ে দেয়। "
মারিজুয়ানা অস্থির হয়ে উঠল । তারপর কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে ,"আসাদ কে ?তুমি ওয়াকিতাকে এখন ভালোবাসো না?"
নাতালি একটু থামে । তারপর মারিজুয়ানার দিকে তাকিয়ে স্থির কন্ঠে বলে ," আমি দুজনের কাউকেই ভালবাসি না । আমি ভালবাসা বুঝি না । ভাল লাগে তাই বন্ধুত্ব । "
মারিজুয়ানার কপাল মাথায় উঠে । অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ," ওয়াকিতা কি জানে ?"
নাতালি ক্লান্ত কণ্ঠে বলে ," না । জানে না । "
মারিজুয়ানা অনেক করে বুঝাল যে বার বার পার্টনার পরিবর্তন ভাল না । শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে সুস্থতা বহন করে না । শফিক ও বিষয়টা জানে । মেয়ের এই স্বভাব কে সে বাবা হিসেবে আর কতোটুকুই শাসন করতে পারে !
যেখানে নাতালির নিজের মায়ের চরিত্রই ঠিক নেই । এদিকে মারিজুয়ানা গভীর চিন্তায় পড়ে যায় । নাতালির এই বিষয় গুলো শফিক কে জানানো দরকার ।

বেশ কয়েক দিন মারিজুয়ানা শুধুই ভাবে কিভাবে পুরো বিষয়টা শফিকের কাছে তুলে ধরবে। কারন শফিক সব কিছুইতেই মারিজুয়ানাকে সন্দেহ করে । নাতালির এই সব বিষয় জানাতে গেলে হয়তো বলে বসতে পারে যে নাতালির বিরুদ্ধে সে ষড়যন্ত্র করছে । নাতালি যেন কোন ভাবেই এই সংসারে না থাকতে পারে ।
কিন্তু এরই মধ্যে বাবার কাছে নাতালির টাকার চাহিদা যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। শফিক নিজেও লক্ষ্য করেছে মেয়েটা বেশ কিছু দিন ধরে ভীষণ রকম বেয়াদবি করছে । শফিক শুধু ওর মায়ের কথা চিন্তা করে কঠিন ভাবে শাসন করতে পারে না । নাতালির টাকা চাইলে শফিক দিতে বাধ্য থাকে ।কিন্তু কেন এতো বেশি টাকা নিচ্ছে তা শফিক কে বলে না । আর এই বিষয়টা নিয়ে গতকাল রাতে বাবা মেয়ের জাপানি ভাষায় তুমুল ঝগড়া হয় । শফিক যেন তেড়ে যাচ্ছিল নাতালির রুমের দিকে । মারিজুয়ানা তাকে আটকায় । কারন নাতালির কিছু হলে বা কোন অভিযোগ করলে ওর মা মারিজুয়ানাকে সহ দোষী করবে।
তাই অনেক করে সে শফিক কে বুঝায়। তাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে। আর এমন পরিস্থিতিতেই মারিজুয়ানা আসাদের ঘটনাটা জানায়। শফিক একদম চুপ হয়ে যায় । সে সারা রাত বারান্দায় পায়চারি করে । আর ভাবে কিভাবে নাতালিকে জাপান ফেরত পাঠানো যায় ।

দুই তিন বাসাটা একদম শব্দ হীন থাকে । মারিজুয়ানা খুব স্বাভাবিক থাকে নাতালির সাথে। আগের মতোই নাতালিকে যত্ন করে। খাবার খাওয়ার সময়ে এক সময় নাতালি নিজের থেকেই বাবার প্রতি আচমকা রাগ প্রকাশ করে । তাকে সে পুলিশে দিতে চায় । মারিজুয়ানার বুকের ভেতরটা দুক করে উঠে । কি ভয়াবহ।নিজের বাবাকে পুলিশে দিবে কথাটা বলতেও তাঁর বুকে বিঁধল না ।
তারপর ও শফিক বিষয়টা কে হাল্কা ভাবে নিল ।


আর ও একটা মাস নাতালির গতিবিধি শফিক লক্ষ্য করল । মারিজুয়ানাকে শিখিয়ে দিল যেন তাকে অন্য কোন বিষয়ে ব্যস্ত রাখা হয় । মাঝে মাঝে গুঞ্জনদের বাসায় নিয়ে যায় । বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘুরতে নিয়ে যায় । নাতালির সাথে শফিক সম্পর্কটা আবার ঠিক করে নেয় । কিন্তু নাতালির নতুন সিদ্ধান্ত হল সে তাঁর বান্ধবি আসফির সাথে আলাদা হোস্টেলে থাকবে । শফিক স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয় যে তাকে জাপান ফেরত যেতে হবে । জাপান দূতাবাস তাকে নিজ দেশে ফেরত যেতে বলেছে ।


বাংলাদেশে ২০১৬ সালের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী আক্রমনে অনেক লোক মারা যায় । নিহতদের মাঝে বেশ কয়েকজন জাপানি নাগরিক ছিল । যে কারনে অনেকটা সময় ধরে সব দেশের দুতাবাস গুলো বিদেশি নাগরিকদের নিজ দেশেই অবস্থান করতে অনুরোধ করছে । ব্যাপারটা নাতালির ও জানা । তাই শফিকের কথা সহজেই বিশ্বাস হল।


শেষ অবধি নাতালিকে ফেরত পাঠানোর সব প্রস্তুতি শুরু হল । খবরটা শফিকের মুখে শোনার পর থেকে মারিজুয়ানার মনটা বেশ হাল্কা মনে হচ্ছে । মনটা খোলা আকাশে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়াচ্ছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×