somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাস"মারিজুয়ানা"২৫ -নুরুন নাহার লিলিয়ান

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



#উপন্যাস"মারিজুয়ানা" পর্ব ২৫
#নুরুন নাহার লিলিয়ান
গুঞ্জনের তিন মাস প্রাগনেন্সি চলছে । বিয়ের প্রায় অর্ধ যুগ পর এই প্রথম বারের মতো গুঞ্জন আর নেশাম বাবা মা হতে চলেছে ।একটা অন্য রকম সময় বয়ে যাচ্ছে নেশাম আর গুঞ্জনের সংসারে । অনেক দেশ বিদেশের নানা চিকিৎসার পর যখন আশা করা ছেড়ে দিয়েছিল । ঠিক তখন হঠাৎ নেশাম গুঞ্জনের অমবস্যার অন্ধকার আকাশ জুড়ে আলো জেগে উঠেছে । সেই প্রতীক্ষিত আলোকে স্পর্শ করার দিন গুনছে । বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল দেশে বিয়ে বাচ্চা বিষয়টায় মানুষের মনোজগৎ এখন ও অনেক পশ্চাৎপদ ।

মানুষের জীবনে বিয়ের মাধ্যমে সম্পর্ক এবং সংসারের মাধ্যমে বংশ গতি রক্ষা করার মতো টিপিক্যাল চিন্তার মধ্যেই নিরানব্বই ভাগ মানুষ বসবাস করে । অথচ এই নিরানব্বই ভাগ মানুষের কার ও জীবনের সাথে কার ও জীবন যুদ্ধের গল্প এক না । কার ও জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি এক না । তবে কিভাবে এই সব মানুষ গুলো একই প্রচলিত নিয়ম মেনে তথাকথিত সময়ে জীবনের সব চাওয়া পূর্ণ করবে । যেখানে সবার যোগ্যতা এবং সীমাবদ্ধতা এক না । তবু ও একটা রক্ষণশীল রাষ্ট্রের অলিখিত নিয়ম কানুন চলে আসছে বহু দিন ধরে ।মানুষ গুলো মনের অজান্তে কখন ও অদৃশ্য ভাবেই সেই সব নিয়ম ধরেই বেঁচে আছে ।

গুঞ্জন শৈশব থেকেই প্রগতিশীল পরিবেশে জীবন যাপন করেছে। ছায়া নটের মতো সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সুশীল সমাজে কর্মজীবন কাটছে । তারপর ও একটা অন্ধ বিশ্বাসে আক্রান্ত সমাজেই সে ঘুরে ফিরে নিজেকে আবিস্কার করে । শ্বশুর বাড়ি কিংবা বাবার বাড়ি সব জায়গায় এই একটা বিষয়ের জন্য কষ্ট পেয়েছে ।

বিয়ের পর থেকে প্রথম কয়েক বছর তাকে থাকতে হয়েছিল জাপানে । সে সময়টায় নেশাম তার গবেষণার কাজে প্রচণ্ড ব্যস্ত ছিল ।বাচ্চা নেওয়ার মতো কোন পরিস্থিতি ছিল না । তারপর ও গুঞ্জন সব সময় বাচ্চা নেওয়ার পক্ষে ছিল । নিয়তির খাম খেয়ালিতে প্রত্যাশিত সময়ে বাচ্চার অস্তিত্ব অনুভব করেনি ।

জাপানের আদুরে ডাক্তারদের উন্নত প্রযুক্তির কতো রকমের চিকিৎসাই না নিয়েছিল । এক সময়ে ডাক্তার পরামর্শ দেয় নিজের দেশে ফিরে আসতে । আবহাওয়া এবং পরিবেশ পরিস্থিতিও দুজন বিবাহিত নারী পুরুষের বাবা মা হওয়ার পথে ভূমিকা রাখে।মানুষের জন্ম -মৃত্যুর জন্য সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা অনিচ্ছা অনেক বড় বিষয় । প্রাকৃতিক ভাবেই কিংবা প্রকৃতির প্রয়োজনেই দুজন নারী পুরুষ বিবাহ নামক সম্পর্কে আবদ্ধ হয় । এক সময়ে বাবা মা হয় । তারপর ও মানুষ গুলো এই প্রকৃতি নির্ভরশীল বিষয় গুলো আলোচনা সমালোচনা করতে ভালোবাসে ।

এই শরীরে একা একাই নিজেকে যত্ন করতে হচ্ছে । নেশামের আমেরিকার বোস্টনে কনফারেন্স আছে । যাওয়ার আগে নেশাম ও অসুস্থ ছিল । ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ছিল । গুঞ্জনদের গবেষণাগারের আবাসিক এরিয়ায় অনেক মশা । এরোসল স্প্রে , মশার ওষুধ কোন কিছুতেই যেন মশা কমানো যাচ্ছে না ।বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে অনেক মশা বেড়েছে। বিভিন্ন রকম জ্বরের কারনে বেশ অনেক মানুষ মারা ও গিয়েছে । বছর খানিক আগে গুঞ্জনের চিকুনগুনিয়া নামের একটা জ্বর হয়েছিল । সেই জ্বরের পর থেকে শরীরের নানা জায়গায় ব্যথা ,হাঁটতে কষ্ট হয় । আগের মতো একটানা কাজ করার মতো প্রান শক্তি ও নষ্ট হয়ে গিয়েছে ।২০১৭ সালে হঠাৎ করেই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সহ অনেক জায়গায় চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যায়।

এরপর থেকে নিয়মিতই মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে ।অনেক জায়গা মানুষ মারা ও যাচ্ছে । আর ও কতোটা সময় একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাবেন কার ও পক্ষে বলা অসম্ভব ।

নেশামকে সম্পর্কের শুরু থেকেই দেখেছে নিজের কাজের ব্যাপারে সে কোন কম্প্রোমাইজ করে না । গুঞ্জনের শরীরটা ভীষণ খারাপ । এই অবস্থায় ডঃ নেশাম তার কনফারেন্স কোনভাবেই বাদ দিবে না । দুই দিন ধরে সব কিছু একা একাই করছে । বোস্টনে পৌঁছেই সে ফেসবুকের মাধ্যমে জানিয়েছিল যে ঠিক মতো পৌঁছেছে । পনের দিনের এমন ট্যুর ডঃ নেশামকে প্রায় করতে হয় ।
তাই গুঞ্জনের ও এমন একা থাকা অভ্যেস হয়ে গেছে ।

আজ বিকেলে থেকেই বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিল আর বাইরের আকাশ দেখছিল । মনটা অস্থির হয়ে ছিল ।কখন ও কখন ও নিজেকে একটা নিঃসঙ্গ দ্বীপের মতো মনে হয় । পৃথিবীতে মনের খুব কাছাকাছি থেকে ও অনেক স্বামী স্ত্রী নিজেদের মন স্পর্শ করতে পারে না ।ব্যাখ্যাহীন ভাবে পরস্পরের কাছে চির অচেনা হয়ে থাকে । ডঃ নেশামের মন বুঝতে পারা অনেক কঠিন । তারপর ও অন্য আর দশটা সুখী মানুষের মতোই নেশাম আর গুঞ্জনের সংসারটা এগিয়ে যাচ্ছে । একটা ভালোবাসার সংসারে সব কিছু জানতে নেই কিংবা সব কিছু চেনার চেষ্টা করা ও বোকামি । গুঞ্জন সংসারে খুব বেশি জ্ঞানী হওয়ার চেষ্টা করে না বলেই সুখী ভাবে সংসার এগিয়ে নিতে পারছে ।একটা সংসারে সুখী হতে হলে জ্ঞানী হতে নেই । বেশি বুঝতে নেই । শুধু সংসারের ছোট ছোট নিয়ম গুলোতে সচেতন চোখ রাখতে হয় ।

চা ঠাণ্ডা হয়ে গেলে আবার গরম করে খাওয়া ভীষণ বিরক্তিকর । তাই গরম ধোঁয়া থাকতে থাকতেই গুঞ্জন শেষ করে ফেলে । নেশাম কে খুব মনে পড়ছে । একজন মায়ের গর্ভে যখন সন্তান আসে । তখন শুধুই মা একা অনুভব করবে কেন । একজন বাবার ও বাবা হয়ে উঠা কে অনুভব করা উচিত হৃদয় দিয়ে ।বাবা হওয়া নিয়ে নেশাম খুব খুশি । কিন্তু সে কখনও নিজের ভাল মন্দ আবেগ সঠিক ভাবে প্রকাশ করতে পারে না । কোথাও যাওয়ার সময় শুধু গুঞ্জন কে অনেক ক্ষন বুকে জড়িয়ে থাকে । মুখে কিছুই বলে না । কিংবা বলতে পারে না ।
তাই নেশামের কাছ থেকে গুঞ্জন কখনও কোন আবেগের প্রকাশ আশা করে না । মানুষটার উপস্থিতি কে নিজের মতো উপভোগ করে ।

হঠাৎ এমন সময়ে নেশামের মোবাইল কল গুঞ্জন কে ভালোবাসার সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয় ।মাঝে মাঝে এমন দূরত্বে থেকে পরস্পরকে কাছে পাওয়ার সুখটা একদম অন্যরকম । অনেকটা কোন বিলাসী বিকেলের স্নিগ্ধ সুখের মতো ।অনেক অপেক্ষা আর কঠোর পরিশ্রমের পর কৃষক যখন প্রত্যাশিত মাঠ ভরা ফসল পায় ঠিক তখন কৃষকের অকৃত্রিম সুখ গুলো কোন কিছুর সাথে তুলনা করে বুঝানো যায় না । আজকে গুঞ্জনের সুখটুকু ঠিক যেন কোন অচেনা গ্রামের মাঠের কৃষকের মতো ।

প্রতিটি সংসারই রমণীর হাতে ফলানো সবুজ ফসলের মাঠ । যেখানে প্রতিটি নারীর ত্যাগ , ভালোবাসা , পরিশ্রম আর অপেক্ষা থাকে । মোবাইলের অপর পাশের কণ্ঠটি যেন আজ বেশ ঝরঝরে । ডঃ নেশাম বেশির ভাগ সময়ে সিরিয়াস মুডে কথা বললে ও আজকে একদম অন্য কেউ । মনে হচ্ছে সে ও কিছু একটা ফেলে গেছে । যার সমগ্র অস্তিত্ব সে নিজেও অনুভব করছে ।
পৃথিবীর সবচেয়ে শুদ্ধতম এবং পবিত্রতম অনুভূতির নাম বাবা হওয়া । পৃথিবীর সকল পুরুষের সকল ব্যস্ততা যেন ঠিক এই অনুভূতির কাছে একটু হলে ও গুরুত্বহীন । গুঞ্জন ও নেশামের এই রকম যত্ন আর ভালোবাসা গুলো উপভোগ করছে । পৃথিবীর সব টুকু ভালোবাসা দিয়ে অনুভব করছে । বেশ সুখ মাখানো আহ্লাদি কণ্ঠে নেশাম বলল ," আমার কবি বউয়ের কণ্ঠে একটা গান শুনতে ইচ্ছে করছে ।"
গুঞ্জন হেসে দিয়ে বলল ," কবি বউয়ের কণ্ঠে কবিতা শুনতে চাইবে । কবির কণ্ঠে গান কেমনে হয় !"
নেশাম হো হো করে হেসে দিয়ে বলে ," ওহ ! তাই তো ! কবিতায় সুর দিলেই তো গান হয়ে যেতে পারে ।তুমি না হয় সুর দিয়ে কবিতা শোনাও ।"
তারপর প্রান খুলে হাসতে থাকে । নেশামের হাসির শব্দ গুলো লক্ষ্য কোটি মাইল দূর থেকে ও গুঞ্জন কে ভালোবাসার গভীর স্পর্শ দিয়ে গেল ।
দুজন ভবিষ্যৎ মা বাবা নতুন এক সুরে অভিন্ন স্বপ্নে বিভোর হয়ে রইল ।দুটি প্রান একাকার হয়ে মিশে রইল অনেক কষ্টে পাওয়া তাদের ভালোবাসার নতুন অস্তিত্বকে আগলে ধরে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×