somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাস"মারিজুয়ানা"২৬ -নুরুন নাহার লিলিয়ান

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



#উপন্যাস" মারিজুয়ানা" পর্ব ২৬
#নুরুন নাহার লিলিয়ান
পাঁচ মাস পরের কথা । এর মধ্যে নাতালিকে জাপান পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে । মারিজুয়ানার দিন গুলো কোন রকমে ভালই কেটে যাচ্ছিল । মারিজুয়ানার ছোট ভাই রাজিব কে শফিক মধু প্রজেক্টে নিয়োগ দিয়েছে ।শফিক বাংলাদেশ থেকে মধু জাপানে পাঠায় । রাজিব এর আগে দু'মাস কাজ করেছিল । তখন সে একটি বেসরকারি বিশ্ব বিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছিল ।

শফিকের খারাপ ব্যবহার আর পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছিল বলে একদিন চুপচাপ চলে গিয়েছিল ।দেড় মাস হয় মাস্টার্স শেষ করেছে । মা- বাবা এবং বোন মারিজুয়ানার অনুরোধ আর পিড়াপীড়িতে আবার সেই মধু প্রজেক্টে যোগ দেয় ।রাজিব অন্তর্মুখী এবং আত্মমর্যাদা সম্পন্ন এক শিক্ষিত তরুন । বোন মারজানের দুঃখ গুলো সে ভীষণ ভাবে অনুভব করে ।কিন্তু সে যে কিছুই করতে পারে না । জীবনের অসহায়ত্ব গুলো না পারে নিজেকে সাহায্য করতে । না পারে বোনকে দোযখ থেকে বাঁচাতে ।

পড়াশুনা করার সময় থেকেই অনেক ফার্মে চাকরির চেষ্টা করেছে । কিন্তু সবাই ফ্রি খাটায় । কেউ উপযুক্ত বেতন দিতে চায় না । আর মামা চাচা না থাকলে এই ঢাকা শহরে ভাল বেতনের চাকরি পাওয়া অনেক কঠিন ।তাই অনিশ্চিত সময়ে ভাগ্যকে সঁপে না দিয়ে বোনের স্বামীর ফার্মেই যোগ দিতে হল । শফিক তাদের সব সময় খুব অবহেলার দৃষ্টিতে দেখে । চলনে বলনে তাঁর ভেতরে অনেক পার্থক্য রেখে চলে । রাজিব সব বুঝতে পারে । মাঝে মাঝে অসহায় অভিমানী মনটা ফুঁসে উঠে । কিন্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতার কাছে নিজেকে বিনীত রাখতেই হয়।

নিজের আপন শ্যালক হলেও রাজিবের মারজানের বাসায় থাকার অনুমতি নেই । স্টাফ টনি আর রাজিব সহ আরও কয়েক জন ধানমন্ডির জিগাতলা একটা ফ্ল্যাটে মেস করে থাকে । মারিজুয়ানার এটা নিয়ে অনেক আপত্তি থাকলে ও স্বামী শফিক কে কিছুই বলতে পারে না । যদি রাজিব কে বাদ দিয়ে দেয় ।
অনেক সময় ছোট ভাইটিকে ভাল মন্দ খাওয়াতে মন চায় । কিন্তু সব সময় ইচ্ছে থাকলে ও করতে পারে না ।

সেদিন এক জাপানির বাসায় লাঞ্চ ছিল । তাই সব স্টাফদেরও বাসায় খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল । সে সময় মারিজুয়ানার খুব কাছাকাছি ছিল টনি আর রাজিব । লাঞ্চ শেষে জাপানিকে নিয়ে শফিক যখন অফিস রুমে চলে যায় । তখন টনি আর রাজিব ব্যবসার যাবতীয় কথা মারিজুয়ানা কে বলে ।এই কয়দিনে রাজিব এবং টনির সাথে ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে । দুজনের বয়স ও প্রায় কাছাকাছি ।টনিকে মারিজুয়ানা সব সময় ছোট ভাইয়ের মতোই আদর করে । আর টনি ছেলেটার ভেতর একদম একটা সহজ সরল বাচ্চা বসবাস করে ।বাস্তবতা অনেক সময়ই বুঝতে পারে না । সহজ সরল ভাবে সত্য কথা গুলো বের হয়ে আসে ।
মারিজুয়ানা সবাইকে তাড়াতাড়ি খেয়ে মেসে ফিরে যেতে বলছিল ।

কারন সন্ধ্যায় ল্যাব এইড হাসপাতালে মারিজুয়ানার ডাক্তারের এপোয়েন্টমেন্ট আছে ।
টনি মারিজুয়ানার ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা শুনেই বলছিল ," স্যার কি যাবে ম্যাম আপনার সাথে ?"
মারিজুয়ানা ঠাণ্ডা সুরে বলল ," হুম ।যাবে। "
টনি আবার বলল ," কোন সমস্যা হলে আমাদের জানাবেন।"
মারিজুয়ানা হেসে দিয়ে বলল ," আচ্ছা জানাব । সব সমস্যা সবাইকে জানানো যায় না ।"
টনি আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল ," নাতালি ম্যাম কি যোগাযোগ করেছিল ?"
মারিজুয়ানার হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেল । নাতালি জাপান ফিরে যাওয়ার পর একবার ও স্বেচ্ছায় কোন যোগাযোগ করেনি । এমন কি শফিকের সাথে ও না ।মেয়েটির ভেতরে খুব স্বাভাবিক আচরনের ঘাটতি আছে ।
নাতালি চলে যাওয়ার আগে টনি দুই তিন মাস নাতালি কে বাংলা শেখাত । শফিকই বলে দিয়ে ছিল সপ্তাহে দুই একদিন নাতালির সাথে বসতে । টনি এবং নাতালি প্রায় সমবয়সী ।নাতালিকে বাংলা পড়াতে গিয়ে অনেকটা মনে মনে দুর্বল হয়ে পড়েছিল ।

টনি মধ্য বৃত্ত ঘরের সহজ সরল ছেলে হলে ও বাস্তব জ্ঞান বুদ্ধি তার আছে । সে খুব ভাল করে জানে নাতালি তার বসের মেয়ে । যখন সে প্রায় শুক্রবার সন্ধ্যায় নাতালিকে বাংলা পড়াতো মারিজুয়ানা দেখতো টনির চোখে মুখে এক অপ্রতিরোধ্য সহজ সরল ভালোবাসার বৃষ্টি ঝরছে ।প্রায়ই নাতালির খুব কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করতো । পড়াতে গিয়ে নাতালির সানিধ্যে সে যেন স্বর্গ সুখ পেতো । একবার পড়াতে বসলে আর উঠতেই চাইতো না ।

নাতালির রূপের মায়াজালে যেন টনির সহজ সরল অনুভূতি গুলো আটকে যাচ্ছিল । মারিজুয়ানা সব কিছু স্পর্শ করতে পেরে শফিক কে জানায় । তারপর টনিকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখা হয় । আজকে টনির কথা শুনে মনেহল টনির মনের ভেতরে অনুক্ত অভিমানি ভালবাসাটা হয়তো ডুকরে কাঁদছে ।মারিজুয়ানা টনির সেই লুকানো ভালবাসাটা অনুভব করতে পারে । কিন্তু কঠিন বাস্তবতার কাছে সব কিছুই অসহায় ।
মারিজুয়ানা টনিকে আন্তরিকতা নিয়েই জিজ্ঞেস করল," তোমার সাথে নাতালি যোগাযোগ করেনি ?"
টনি মাথা নিচু করে খুব শান্ত ভাবে উত্তর দেয় ," না । আমার সাথে যোগাযোগ করার কোন কারন নেই । তাছাড়া নাতালি ম্যাম ফেসবুকে একটিভ না । ইন্সট্রাগ্রামে বেশি সময় দেয় । "
মারিজুয়ানা একটু সিরিয়াস হয়ে বলে ," বাবার এতো আদরের মেয়ে ।সেই বাবার সাথেই যোগাযোগ করেনি । আমিই একদিন নিজে থেকে মেসেজ দিয়ে খবর নিয়েছি ।অদ্ভুত !"
টনি মনেহয় কিছু গোপন কথা বলার সুযোগ পেল ।
একটু নড়ে চড়ে বসে বলল ," জানেন ম্যাম কিছু মনে করবেন না । আপনি স্যার কে এতো ভালবাসেন । অথচ স্যার সবাইকে বলে আমার দুটো ছেলে মেয়ে ছাড়া আপন কেউ নেই । ছেলে মেয়ে দুটো কে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই আমি ধন্য। "
মারিজুয়ানার মুখটা কাল আঁধারে ঢেকে যায় । মারিজুয়ানা খুব ধীর কণ্ঠে বলে ," আমার কোন কথাই বলে না ,তাই না?"
টনি মাথা নিচু করে বলে ," জি ম্যাম । স্যার সব সময় তাঁর ছেলে মেয়ে নিয়েই কথা বলে । আমি অবাক হয়ে যাই আপনার প্রতি কি তাঁর কোন ফিলিং নেই !"
মারিজুয়ানা ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল । বুকের কোথাও ভীষণ রকম ব্যথা হতে শুরু করল ।দু'চোখ ছাপিয়ে কান্নার নোনা জল ছল ছল করে উঠল । কিন্তু টনির সামনে নিজেকে সংযত করে নিল ।

পুরো বিষয়টাকে অন্য দিকে নিতে মারিজুয়ানা প্রসঙ্গ পাল্টালো । চেহারায় স্মিত হাসি টেনে জিজ্ঞেস করল ," রাজিবের সাথে থাকতে তোমার কেমন লাগছে ?"
টনি খুব আন্তরিক ভাবে সহজ উত্তর দিল ," জি ম্যাম ভাল । নাতালি ম্যাম চলে যাওয়ার পর কিছুদিন একা একা লেগেছিল । এখন রাজিব ভাইয়ের সাথে বেশ মজার সময় কাটে । "
রাজিব কে প্রজেক্টের স্টাফ হিসেবে পঁচিশ হাজার টাকা বেতন দেয় । এই টাকা থেকে পাঁচ হাজার করে গ্রামের বাড়ি পাঠায় । মারিজুয়ানা হাত খরচ কিংবা সংসারের খরচ থেকে বাঁচিয়ে কিছু টাকা বাবা মা কে দেয় ।
কয়েক মাস ধরে মা বাবা ভালই আছে । বড় ছেলের কাছে আর টাকা চাইতে গিয়ে অপমানিত হতে হয় না ।
মারিজুয়ানার বড় ভাই এবং ভাবির কূটকৌশলের কারনেই মিজুয়ানা এখন শফিকের বউ নামক দাসী হয়ে আছে। টাকার লোভে নিজের বোন কে শফিকের বয়স্ক ব্যবসায়ীর কাছে বিয়ে দিয়েছে । মারিজুয়ানা জানে না তার ভাই এই বিয়ে কে কেন্দ্র করে শফিকের কাছ থেকে অনেক টাকা ও নিয়েছে ।
কখন ও জীবন মানুষকে কোন অচেনা মহা সমুদ্রে ফেলে দেয় । সেখানে শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকাই জীবন । সবার জীবনেই অনেক অচেনা ঢেউ আসে । লন্ড ভন্ড করে দিয়ে যায় । তবু ও সব কিছুর শেষে মানুষ বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে ।
মারিজুয়ানা ও বার বার ডুবতে ডুবতে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে । পরিবারের সবার মুখে একটু হাসি দেখে বেঁচে থাকতে চায় । পৃথিবীর সব টুকু রহস্য হয়তো এই বেঁচে থাকা আর মরে যাওয়ার মধ্যবর্তী সময় টুকুর মধ্যে । মারিজুয়ানা সাহসের সাথে সেই রহস্যকেই স্পর্শ করতে চায় ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:০৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×