ছবিঃ কক্সবাজার ছবিটা আমার মোবাইলে তুলেছিলাম
"বেতন ভাল, উপরি আছে, ক্ষমতাও কম নয়, সম্মান মেলা ..."
কুঞ্জপুকুরের কান্ড গ্রন্থে লেখা কালজয়ী লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উক্তি । আসলে সেই গ্রন্থের পেক্ষাপট যাই হোক মানুষের মনের ভেতরের লোভী আর দ্বিচারিণী মনোবৃত্তির চিরন্তন রূপ অনেক বছর আগেই লেখক ১৯৯৫ সালে লিপিবদ্ধ করেছেন ।
মানব জাতি সম্পর্কে এই উপলব্ধি যে কতোখানি ভয়াবহ রকম সত্য তা কেবল মানুষের কাছে গেলে আর কাজ করতে গেলেই বুঝা যায় । চাকরি কিংবা ব্যবসা শুরু করার আগেই যারা বেতন , উপরি পাওয়া ,ক্ষমতা পাওয়া নিয়ে চিন্তা করে তাদের সম্মান আসলে কারও মনে থাকে না । কিছু দিন আগে টিভিতে দেখাল উদ্ভাবনে বাংলাদেশ অনেক অনেক পিছিয়ে ।বিশ্বের অনেক ছোট ছোট দেশ বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে আছে । অথচ একটা দেশ এগিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্ভাবন /আবিস্কার /নতুন চিন্তা অনেক অনেক জরুরি ।
আমাদের ভেতরের হীনমন্যতা আর হিংসাবোধ অন্যকে সম্মান দিতে জানেই না । দিন শেষে নিজেরা ও কিছু করতে পারে না । খিড়কী হতে সিংহ দুয়ার সব জায়াগায় কাজ না করে ক্ষমতা ভোগ করতে চাওয়ার যে প্রবনতা আর প্রতিযোগিতা বাংলাদেশ আর ও ২০০ বছর পর ও মানুষের চিন্তা চেতনা পাল্টাতে পারবে না ।
বিশ্ব বিদ্যালয়/ গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলোতে কয়জন শিক্ষক / গবেষক গবেষণা করতে আগ্রহী । বেশির ভাগ দলাদলি, লেজুর বৃত্তি , উপরি পাওয়ার আশায় প্রশাসনিক ক্ষমতা পাওয়ার যুদ্ধে লিপ্ত ।প্রকৃত একজন শিক্ষক শুনেছি সারা জীবন ছাত্র থাকে । অথচ শিক্ষকদের লেকচারেই থাকে ভুল । একজন গবেষক হিসেবে চাকরি নিয়েছে , অথচ গবেষণা করার আগ্রহ তাঁর নেই , আর্টিকেল নিয়ে তাঁর দায়বদ্ধতা নেই । কেমনে থাকবে যদি উপরি পাওয়ার চিন্তা মাথায় থাকে ।
কর্পোরেট জগতে তাকান । অযোগ্যদের দখলে আছে আমাদের পুরো ব্যবস্থাপনা । ব্যাংকে যাবেন অনেক উচ্চ মাধ্যমিক পাশ পাবেন হেড অফিসে মহা ক্ষমতায় চেয়ার ভোগ করছে । হয়তো তারই জুনিয়র ডাবল এম এ কিংবা এমবিএ করা । ওই যে এমবিএ করা লোকটির মামা চাচা কেউ এমডি ,ডিএমডি না । কেউ চেয়ারম্যানের আত্মীয় না । আর সব আমলেই রাজ দপ্তর গুলোর কথা সবাই জানে । সিকিউরিটি গার্ড থেকে পিএ সবাই উপরের কলের ক্ষমতা দেখায় ।আর সুশীলদের কথা কি বলব । সবাই শিল্পী , বুদ্ধিজীবী , আর দিন শেষে অর্থ শুষে নেওয়া এনজিওর মালিক ।
ব্যবসায়ীরা লাভের আশায় সাধারণ মানুষদের বিষ খাওয়াতে দ্বিধা করে না ।বিবেক বোধ আর নীতির দিকে মানুষই নেই ।
সেই ছোট বেলা থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি নাচ , গান , আবৃত্তি আর লেখালেখির করা শেখান হয়েছে মনোজগতের উন্নতির জন্য । সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য । ২০১৮ সালে এসে দেখি লেখা হোক আর না হোক সবার এই জগতেও হীন মন মানসিকতার মানুষে উর্বর সমাজ ।সম্মানিতরা সম্মান পায় না । আবার কাউকে সম্মান দেখাবেন ভাববে আপনার স্বার্থ কিংবা দুর্বলতা আছে । বড়ই নেতিবাচক অনুভূতির আর চিন্তায় বাংলার বাতাস শুধু ভারী হচ্ছে ।
চিরদিন জেনেছি শিল্পীরা ত্যাগে সুখ খুঁজে ভোগে না । অথচ এখানে ও দেখি কিছু একটা সৃষ্টি করার আগেই নিজেকে স্বঘোষিত শিল্পী দাবি করা । আবার টাকা পয়সা অল্প সময়ে কিভাবে কার সাথে কোন পথে গেলে পাওয়া যাবে সেই ধান্দাবাজি ও আছে ।শিল্পীরা হৃদয়ের চর্চা করে অথচ আজকের শিল্পীরা শিল্প সত্ত্বা কে বিক্রি করছে টাকার কাছে । ন্যায় , নীতি আর জীবন বোধের জায়গায় একজন প্রকৃত মানুষের দেখা পাওয়া অনেক দুরূহ ।
তবে কি ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে !!!হীন স্বার্থপর , অযোগ্য আর অমানবিক মানুষ পৃথিবীর ঘূর্ণায়মান অধ্যায়ে এক সময়ে অস্পষ্ট হয়ে যায় ।
জীবন যুদ্ধের লড়াইয়ে সব শেষে সত্যটাই থাকে পরম মমতায় ।