somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রুনো ‘র সমকালীন আরো যাদের ইনকুইজিশনের বিচারে হত্যা করা হয়েছিল

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইনকুইজিশনের গড়ে উঠার পটভুমি কি ? অত্যাচার প্রশ্নে আসে রোমান আর স্পেনীয় ইনকুইজিশন এর কথা -ব্রিটেন কি ধুয়া তুলসি পাতা ছিল ? ষোড়শ শতকে ব্রনোর আত্মত্যাগ এর কথা জোরেশোরে বলা হয় কিন্তু শুধু তাকে পুড়িয়ে মেরেছিল তথাকথিত সভ্য ইউরোপ ?

১. মধ্যযুগের ইউরোপে সম্রাট ট্রাজান (খ্রি ৯৮-১১৭) এর সময় নীতি নির্ধারণ করা হয় , খ্রিস্টান হওয়া একটি মৃত্যুদন্ডযৌগ্য অপরাধ । অবশ্য খ্রিস্টধর্মের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকলেও তৃতীয় শতকে এ ধর্মকে বেশ খোলাখোলিভাবেই সহ্য করা হতো ।কিছু কিছু সংখিপ্ত দমনমুলক প্রচেস্টা নেয়া হয়েছিল বৈকি আর একবার বড়ো ধরনের নির্যাতন শুরু করেন ২৫০ সালে সম্রাট ডেসিয়াস (২৪৯-৫১খ্রি) এবং সম্রাট ভালেরিয়ান (২৫৩-২৬০ খ্রি) তা’ চালিয়ে যান । দূটি সহনশীলতার ফরমান (৩১৩ ও ৩১৩ খ্রি ) নির্যাতনের অবকাশ ঘটায় । ধর্মীয় স্বাধীনতার ইতিহাসে এই দলিল দুটির গুরুত্ব আছে । এর মধ্যে একটি ছিল সম্রাট কনস্তানতিন (খ্রি ৩০৬-৩৩৭) যা ইডিকট অব মিলান নামে পরিচিত ।এই ফরমান জারির প্রায় দশ বছর পরে কনস্তানতিন দ্য গ্রেট স্বয়ং খ্রিস্টধর্ম গ্রহন করেন । যে খ্রিস্টধর্মীরা এতদিন সহনশীলতা দাবি করছিলেন এই যুক্তিতে যে, ধর্মবিশ্বাস ঐচ্ছিক সেই তারাই রাস্টীয় ক্ষমতার সমর্থনে সহনশীলতার মত পরিত্যাগ করল আর প্রচার করল ‘খ্রিস্টীয় মতবাদে যারা বিশ্বাস করে না তারা অনন্তকালের জন্য নরকে যাবে ’ । আর কায়েমী রাজনৈতিক স্বার্থজনিত কারণে শাসকশ্রেনী ‘একমাত্র সত্য ’ বা খ্রিস্টীয় মতবাদ জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া আর ভুলের বিস্তার রোধ করা কর্তব্য হিসেবে গ্রহন করে (এই নীতি সর্বকালে সর্ব দেশে সব শাসক শ্রেনীর জন্য নিদারুন ভাবে সমকালিন সত্য )। কনস্তানতিন দ্য গ্রেট ও তার উত্তারিধাকারদের আমলে একের পর এক ফরমান জারি হতে থাকে । পেগ্যান মতবাদ চুরান্তভভাবে বিধবস্ত হয় চতুর্থ শতকে সম্রাট থিওডোসিয়াস (৩৭৯-৯৫) এর কঠোর আইন বলে । স্পেনে ধর্মদ্রোহী প্রিসিলিয়ান (৩৪০-৮৫) এর মৃতুদন্ড থেকে ধর্মদ্রোহিতার জন্য মৃতুদন্ড দেয়া শুরু হয় । নেতৃস্থানীয় খ্রিস্টান যাজক সন্ত আগাস্তিন (মৃ ৪১০ খ্রি ) ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পীড়নের নীতি প্রণয়ন করেন এবং একে ধর্মগ্রন্থের শক্তভিত্তির উপর স্থাপন করেন ।শাসক শ্রেনীর উপর গির্জার প্রভাব সবচেয়ে মারাত্মক রূপলাভ করে দ্বাদশ শতকে । আলবেজোয়াতে তথাকথিত ক্রুসেডের নামে পুরুষ, নারী ও শিশুদের পাইকারিভাবে আগুনে পুড়িয়ে ও ফাসিতে ঝুলিয়ে মারা হয় । তাতেও তারা সন্তষ্ট হলেন না । বিরুদ্ধমতাবলম্বীদের খুজে বের করার জন্য ১২৩৩ খ্রিস্টাব্দে পোপ নবম গ্রোগোরি ইনকুইজিশন বা ধর্মীয় বিচারসভা নামে এক সংঘটিত ব্যবস্থা চালু করেন যা পুর্নতা পায় চতুর্থ ইনোসেন্ট এর এক অধ্যাদেশ বলে ১২৫২সালে



২. জিঅরদানো ব্রুনো কে ভিন্নমত পোষনের দায়ে রোমে দন্ডাজ্ঞা দেবার পর “কাম্পো দ্য ফিওরি” নামক দহনস্থলীতে পুড়িয়ে মারা হয় ১৬০০ সালে। এটা আমরা কমবেশী সবাই জানি। তিনি বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন ; বিধায় তাকে নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছি । বাংলা ভাষায়ও লেখার কমতি নেই । বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাবি‘র অধ্যাপক শহীদুল ইসলামের একটি লেখা মুক্তমনার বর্তমান প্রকাশনাতেও সন্নিবেশিত হয়েছে।

ব্রুনোর ঐ যুগে ইউরোপে এরকম অনেক হত্যাকান্ড ঘটেছিল ,যাদের সবার কথা ইতিহাসে পাওয়া যায়না। যতদুর জানা যায়, ১৬১৯ সালে তুলুজে লুচিলিও ভানিনি নাস্তিক হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হন; তার জিঁহবা ছুড়ে ফেলা হয় এবং তাকে পুড়িয়ে মারা হয় । প্রথম এলিজাবেথ ও জেমস (রাজ ১৬০৩-১৬২৫) এর শাসনকালে ইংল্যান্ড রোমান ইনকুইজিশনের চেয়ে পিছিয়ে ছিল না কিন্তু যাদের বলি দেয়া হয়েছিল তারা অখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন বলে ঐ দেশের ধর্মীয় উন্মাদনার কথা ভুলে যাওয়া হয়েছে। অবশ্য কবি মার্লো (১৫৬৪-১৫৯৩) যদি শূড়িখানায় নোংরা কলহে নিহত না হতেন তবে ইংল্যান্ড তাকে পুড়িয়ে মেরে ইতালির মত গৌরব (!) লাভ করতে পারত, কারণ মার্লোর খ্যাতি ব্রুনোর চেয়ে কম ছিল না । উল্লেখ্য , তিনি নাস্তিকতার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন কিন্তু বিচার চলাকালেই তিনি নিহত হন । নাট্যকার টমাস কিড (১৫৫৮-১৫৯৪) কেও নিদারুন শাস্তি দেয়া হয়েছিল। স্যার ওয়াল্টার র‌্যালে (১৫৫৪-১৬১৮) এর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল কিন্তু তিনি দোষী সাব্যস্ত হননি বলে রেহাই পান । অন্যরা এত সৌভাগ্যবান ছিলেন না । এলিজাবেথের রাজত্বকালে নরউইচে ফ্রান্সিস কেট (যিনি কেমব্রিজে করপাস ক্রিস্টির ফেলো ) সহ তিন/চার জনকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল।

প্রথম জেমস এর আদেশে বার্থৌলোমিউ লিগেট (১৫৭৫-১৬১১) কে কিছুদিন কারারুদ্ধ রেখে তারপর স্মিথফিলডে পুড়িয়ে মারা হয় । মাত্র এক মাস পরে ওয়াইটম্যানকে কভেন্ট্রির বিশপ লিচফিলডে পুড়িয়ে মারা হয়। স্যার ওয়াল্টার র‌্যালে কে পুনরায় গ্রেফতার করে শিরোচ্ছেদের মাধ্যমে হত্যা করা হয় ১৬১৮ সালের ২৯ শে অক্টোবর । রায়েলের মৃত্যুর পর, তারা মাথাকে মমি করে তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। কিছু কিছু সুত্র থেকে জানা যায়, শিরচ্ছেদ করার পূর্বে তাকে শেষবারের মতো ধূমপান করতে দেয়া হয়েছিলো……মৃত্যুর আগে বন্দীকে শেষবারের মতো ধূমপান করতে দেয়ার রেওয়াজনুসারে তাকেও ধূমপান করতে দেয়া হয়েছিল।

মুক্তির মন্দির সোপান তলে ,কত প্রাণ হল বলিদান
লেখা আছে অশ্রু জলে ………………….
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৫
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×