প্রতি শুক্রবার রাত বারোটার পর রেডিও ফুর্তিতে ভূত বিষয়ে এক প্রোগ্রাম প্রচারিত হয় । সেখানে অনেকে তাঁদের নিজেদের জীবনে অথবা বাবা দাদার জীবনে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর ভুতুড়ে গল্প শোনান । সেই প্রোগ্রামের উপস্থাপক আরজে রাসেল তাঁর ভরাট কণ্ঠে ভুতুড়ে গল্পগুলোকে আরো ভুতুড়ে করে তোলেন । সত্যি বলতে কি, আমি আরজে রাসেলের একজন ভক্ত । তাঁর পৌরুষদীপ্ত গম্ভীর কণ্ঠস্বর বেশ ভালো লাগে । আমি মনে করি প্রতিটি ছেলের কণ্ঠ আরজে রাসেলের মত হওয়া উচিৎ । কিন্তু রেডিও ফুর্তির ভূতের অনুষ্ঠান ‘ভূত এফএম’-এ প্রচারিত কাহিনীগুলো শুনলে আমার প্রচণ্ড হাসি পায় । মানুষজন বানিয়ে বানিয়ে কিভাবে এতো সুন্দর গল্প বলতে পারেন তা ভাবতেই অবাক হই ।
শুধু ভূত এফএম নয়, ভূতের বিষয়ে যত গল্প, সিনেমা, কল্পকাহিনী আছে এগুলোর কোনটিই আমাকে মজা দিতে পারে না । জীবনে হলিউডের কত মুভি দেখেছি তার হিসেব রাখা কষ্টকর । আমার এমন কোন ছুটির দিন যায় না যেদিন অন্তত একটি মুভি দেখিনা । কিন্তু হরর মুভি ভুলেও দেখিনা । কনজিউরিং বা এক্সরসিস্ট এর মত বিখ্যাত হরর মুভি দেখার জন্য কোন আগ্রহ অনুভব করি না । দুটো কারণে এসব মুভি আমি দেখি না, প্রথমত- আমি জানি এসব নিছক গল্প । এগুলো গড়ে উঠেছে সম্পুর্ন মিথ্যা কল্পনার উপর । বাস্তবতার ছোঁয়া এসবে থাকে না । তাই এই মুভি দেখতেও মন চায় না । দ্বিতীয়ত- ভূতের ছবি দেখতে থাকলে আমি যত বড় সাহসী মানুষ হই না কেন ঠিকই এক সময় আমার মনেও ভূতের বিশ্বাস ঢুকতে শুরু করবে । আমিও ধীরে ধীরে ভূতের মত মিথ্যা বস্তুকে ভয় পেতে থাকবো । কাজেই, ভূতের ছবি না দেখাটাই উত্তম ।
মানুষ কেন, কোন যুক্তির আলোকে ভূত বিশ্বাস করে আমি বুঝি না । বেশির ভাগ মানুষের একটা বিশ্বাস, নির্জন কবরস্থান বা শ্মশানে ভূত থাকে । এ প্রসঙ্গে চমৎকার একটা ঘটনা শেয়ার করা উচিৎ ।
আমাদের গ্রামের এক চোর তার জীবনের বেশিরভাগ সময়ে সফলতার সাথে চুরি করে বড় রকমের কোন ধরা না খেয়েই শান্তিপুর্নভাবে বুড়ো বয়সে মারা যান । আমার কাকার কাছে এই লোক তার একটা সিক্রেট বলেছিল । জনাব চোর যেখানে চুরির জন্য যাবেন সেখানে আগে গিয়ে নির্জন স্থান বিশেষত কবরস্থান বা শ্মশানে একটা জায়গা দেখে আসতেন । চুরির সময় মানুষ ধাওয়া দিলে পালানোর সহজ পথ না পেলে এই চোর আংকেল কবরস্থানের ঝোপঝাড়ে গিয়ে নাকি লুকিয়ে বসে থাকতেন । তারপর সময় বুঝে পালাতেন । আমার ধারণা চোর আংকেলের গা ঢাকা দেবার এই তথ্য পুরো সত্য । এই পদ্ধতিতে শুধু এই চোর নয়, নিশ্চয়ই সকল চোর নিরাপদে লুকিয়ে থাকতে পারবে ।
প্রাচীন মিশরের ফারাওগণ তাঁদের অতি মুল্যবান কবর এবং পিরামিড রক্ষা করার জন্য যাবতীয় ঝাড়ফুঁক, অভিশাপবাণী এবং কালোজাদু প্রয়োগ করতেন । ফারাওদের ধারণা ছিল অতিপ্রাকৃতিক শক্তি তাঁদের পিরামিডের পাহারা দেবে । কিন্তু কি লাভ হত ? ঠিকই চোরেরা যুগে যুগে পিরামিডে ঢুকে মুল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে গেছে ।
ভেবে দেখুন, কবরস্থানে চোর, ডাকাত, লুটেরা সবাই অনায়াসে ঢুকতে পারে । কই তাদের তো ভূতে ধরে না ! ভূতে ধরে খালি আমার আপনার মত নিরীহ লোকজনকে !
আগে যখন চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো ছিল না তখন কারো মেন্টাল প্রবলেম হলেই সবাই ভেবে নিত লোকটাকে ভূতে আছর করেছে । এখন ভূতের আছর কমে গেল কেন ? ভূতেরা কি আছর করার কৌশল ভুলে গেছে ?
আরেকটা প্রশ্ন, যারা ভূত বিশ্বাস করে তারা কি কেউ নিজের চোখে ভূত দেখেছিল ? আমি নিজে তো ভূত দেখিইনি, এমন কারো সাক্ষাত এখনো পাইনি যে লোক বলতে পারবে, ‘ইয়েস, আমি নিজের চোখে ভূত দেখেছি ।’
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৪