somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্ল্যাট ট্রিটমেন্ট

১২ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মেয়েটার পেছনে ছেলেটা নাছোড়বান্দার মত ঘুরেই চলছে । মেয়েটা কত রকমে বুঝিয়ে বলল সে এখন শুধু পড়ালেখা আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে, কোন রিলেশনে জড়াতে চায় না । অথচ অবুঝের মত ছেলেটা মেয়েকে বিরক্ত করছে । প্রতিদিন কলেজে যাবার পথে দাঁড়িয়ে ছেলেটা মেয়েটাকে বেশ আবেগময় ভাষায় প্রেম নিবেদন করে । মেয়েটা স্বাভাবিকভাবে না করে দেয় । ছেলেটা পরদিন এসে আবার নতুন কোন ডায়ালগ দিয়ে প্রেম নিবেদন করে । মেয়েটা আবারো তাকে ফিরিয়ে দেয় ।

এভাবে একদিন ছেলেটা মেয়েকে বলে, ‘দেখো, তোমাকে আমি ভুলতে পারবো না । তুমি যদি সারাজীবন আমাকে ফিরিয়ে দাও তবুও আমি প্রতিদিন সকালে তোমার কাছে মন ভিক্ষা চাইবো । আমাকে ফিরিয়ে দিও না প্লিজ, আমি তুমি একসাথে জীবন কাটাবো । কথা দিচ্ছি, আমি তোমার জন্য এক তাজমহল বানিয়ে দেব । মৃত্যুর পর সেই তাজমহলে আমি তোমার পাশে থাকতে চাই । একবার যদি তুমি আমার হাত ধরো আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না, বেঁচে থাকি বা মরে যাই, কেয়ামতের আগে আর কেউ তোমাকে-আমাকে পৃথক করতে পারবে না ।’
মেয়েটা কিছুক্ষণ নীরবে ছেলের চেহারার দিকে তাকিয়ে রইল । মেয়েটা মনে মনে ভাবল, আহা, এই ছেলে তো দেখি আমায় নিস্তার দেবে না । তার প্রপোজে যতদিন সাড়া দেব না ততদিন সে নতুন উদ্যমে আমাকে বিরক্ত করতে থাকবে । এই ছেলেটাকে একটা ফ্ল্যাট ট্রিট দিলে নিশ্চিত সে একদম শান্ত হয়ে যাবে । আর কখনো বিরক্ত করবে না ।
মেয়েটার মুখে হাসি ফুটে উঠলো । ছেলের চোখে চোখ রেখে মেয়েটা বলে, সত্যিই তুমি আমাকে আজীবন ভালবাসবে ?
ছেলেটা বলে, হ্যাঁ সত্যিই আজীবন ভালবাসবো ।
মেয়েটা আবার বলল, মৃত্যু পর্যন্ত তুমি আমার পাশে থাকবে ?
ছেলেটা বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ মৃত্যু পর্যন্ত পাশে থাকবো ।
মেয়েটা সুন্দর করে হাসি দিয়ে বলল, সত্যিই আমার জন্য তাজমহল বানিয়ে দেবে ?
ছেলেটা ব্যপক উৎসাহ নিয়ে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তোমাকে তাজমহল বানিয়ে দেবো !
মেয়েটা ভুবন ভোলানো রিনরিনে হাসি দিয়ে বলল, আহ, আমি তো তোমার মত এমন একজনকেই চাই । আমি তোমার প্রস্তাবে রাজি । শোন, আগামিকাল সকাল দশটা বাজে তুমি আমার সাথে দেখা করার জন্য রেডি থেকো । আমি তোমাকে ফোন দিয়ে বলে দেবো কোথায় আসতে হবে । প্লিজ আমি ফোন দেবার আগে তুমি আমাকে কল দিও না, কেমন ?
ছেলেটা খুশিতে উচ্ছসিত কণ্ঠে বলল, ইয়েস ! আর মনে মনে বলল- যাহ শালী শেষ পর্যন্ত তোকে সিস্টেম করে ফেললাম !

পরদিন ছেলেটা সেজেগুজে রেডি হয়ে মেয়েটার ফোনের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে রইল ।
ঠিক সকাল দশটা বাজেই মেয়েটা ছেলেকে ফোন দিল । ছেলের মোবাইলে মেয়েটার কল আসতেই আনন্দে নেচে উঠে ছেলেটা কল রিসিভ করে বলল, হ্যালো জান, কোথায় তুমি ? তুমি কোথায় প্লিজ তাড়াতাড়ি বল ! আমি আর পারছি না । অপেক্ষা করতে করতে আজ আমি মরে যাচ্ছি । তোমাকে দেখলেই আমি যেন বাঁচি । কোথায় তুমি ?
মেয়েটা হেসে বলল , জান এতোগুলান দিন যখন ধৈর্য ধরছো আর একটু কষ্ট কর প্লিজ । আমি মিরপুরে আছি, তুমিও চইল্যা আসো, আজ আমগো অনেক কিছু করনের আছে ।
ছেলেটা বলল, ওয়াও ! মিরপুরে কোথায় জান ? বোটানিক্যাল গার্ডেনে ?
মেয়েটা বলল, আরে ধুর । বোটানিক্যাল গার্ডেনের ঝোপ জঙ্গলে গিয়া কি করমু ? আমি একটা ফ্ল্যাটে আসছি । তুমিও চইল্যা আসো ।
ছেলেটা মনে মনে বলে উঠলো, আরে এ তো দেখি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি ! আমার ভাগ্যটা যে এতো ভালো তা তো কখনো ভাবিনি । খুশিতে উদ্বেলিত ছেলে চিৎকার দিয়ে বলল, ওহ ফ্যান্টাস্টিক জান ! আমি এখুনি আসছি । কোথায় তুমি ? এড্রেসটা বল ।
মেয়ে হেসে বলে, মিরপুরে নাভানা রিয়েল এস্টেট গ্রুপ একটা নতুন হাউজিং প্রজেক্ট করছে । আমি সেখানে আমাগো জন্য একটা ফ্ল্যাট কিনতাছি । তুমি টাকা নিয়া আসো ।
ছেলেটা কিছুই বুঝল না । সে কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, কি বললা জান ? বুঝি নাই !
মেয়েটা জবাব দেয়, বুঝো নাই ? আইচ্ছা আবার কইতাছি, হুনো । তুমি আমি মিলা তো বাকি জীবন একলগে কাটামু । তো আমরা কি হারাজীবন গাছের তলায় থাকমু ? নাহ, আমরা একটা ফ্ল্যাট কিন্যা সেখানে আরামে থাকমু । এর লাইগা আমি নতুন ফ্ল্যাট দেখতে আসলাম । ফ্ল্যাট দেখে আমার পছন্দ হয়া গেছে । আমি অখনি বুকিং দিয়া দিতাছি । কাগজপত্র সব রেডি । এখন খালি টাকাটাই বাকি, তুমি ঝটপট বিশ লাখ টাকা নিয়া আসো ।
ছেলেটা সব শুনে তব্দা মেরে গেলো । কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর হো হো করে হেসে ছেলে বলল, জান তুমি তো সেইরাম জোকস করতে পারো । তোমার কথা শুনে আমার খুব হাসি পাচ্ছে । তোমার কথা বলার স্টাইল পুরো গুন্ডাদের মত হচ্ছে ।
মেয়েটা হেসে বলল, আরে জান, আমি তো এমনেই কতা কই ? তোমার কাছে আমার কতার স্টাইল ভাল্লাগছে ? অসুবিদা নাই, তুমি আমার কতা হুনতে হুনতে হারাজীবন হাসতে পারবা । তয় এখন হাসাহাসির টাইম নাই । টাকা নিয়া আসো ।
ছেলে বলে, তুমি রিয়েলি রিয়েল এস্টেটের অফিসে গেছো ?
মেয়ে শান্ত গলায় বলল, হ্যাঁ, হাঁচাই আসছি । দাঁড়াও তোমারে ইমোতে একটা ভিডিও কল দিতাছি । তাইলেই বুঝতে পারবা ।

সাথে সাথে মেয়েটা ভিডিও কল দিল । ভিডিও কলে ছেলেকে মেয়েটা দেখাল সে হাউজিং সোসাইটির অফিসে বসে আছে, তার হাতে ফ্ল্যাট বুকিং দেবার কাগজপত্র সব রেডি । সব দেখে শুনে ছেলে ভয়ে ভিডিও কল কেটে দিল । মনে মনে সে ভাবতে লাগলো তার সাথে মেয়েটা এসব কি করছে ! এই মেয়ে কি সুন্দর শুদ্ধ বাংলায় কথা বলত । আজ তার কথার একসেন্ট একদম মাস্তানদের মত হয়ে গেছে । মেয়েটা কি ছেলেটাকে সত্যিই ফ্ল্যাটবাড়ি কিনে দিতে বলছে ? নাকি এটা আসলে প্রাঙ্ক ! চারদিকে যেভাবে প্রাঙ্ক বেড়ে গেছে এই মেয়েটা হয়ত সেভাবেই প্রথম ডেটিংটাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রাঙ্ক করছে ।

মেয়েটা আবারো কল দিল । ছেলেটা কল রিসিভ করবে না ইগনোর করবে বুঝল না । কল বাজতে বাজতে কেটে গেল । মেয়েটা আবারো কল দিল । ছেলেটা কাঁপা হাতে কল রিসিভ করল । মেয়েটা আদুরে গলায় মিষ্টি ধমক দিয়ে বলল, এই তুমি কেটে দিলা কেন ? আমার কতা তো শেষ অয় নাই । আচ্ছা কতা পরে কমুনে, তুমি টাকা নিয়া আসো ।
ছেলেটা তোতলাতে তোতলাতে বলল, আ-আ-আমি টাকা কো-কোথায় পাবো ?
মেয়েটা বলল, আরেহ, তুমি তাজমহল বানানোর জন্য টাকা জমাই রাখছ না ! দেখো, মরার পরে তাজমহল দিয়া কি অইব ? তুমি আমি মরার পর আজিমপুর কবরস্থানের এক কিনারে পইড়া থাকমু । কাজেই ওইটা নিয়া ভাইবো না । আপাতত যদ্দিন বেঁচে আছি আমরা মিরপুরের ফ্ল্যাটে থাকমু । মরার পর তোমার কাছে তাজমহল চাই না জান । তোমার কাছে আমার একটাই আবদার, তাজমহলের ফাণ্ড ভাইঙ্গা আমারে ফ্ল্যাট কিন্যা দাও ।
ছেলেটা থতমত খেয়ে বলল, জান আজ সকাল থেকে আমার খুব পাতলা পায়খানা চলছে । আমি মিরপুর কিভাবে যাবো বল ? আমি তো বের হতেই পারছি না ।
মেয়েটা আফসোস করে বলল, ইশ! আজেবাজে জিনিস খায়া পেট খারাপ কইরা ফালাইছো । আচ্ছা কষ্ট কইরা এদ্দুর আসার দরকার নাই । আমি তোমারে মেসেজ দিয়া রিয়েল এস্টেট কোম্পানির একাউন্ট নাম্বার দিতাছি । তুমি তাড়াতাড়ি বিশ লাখ টাকা পাঠাই দাও । পারলে আরও বেশিও দিতে পারো । আগে পরে যখনই হউক সব টাকা তো তোমারেই শোধ করতে হইব । এখন যত টাকা দিয়া ফালান যায় তত ভালা । পেশাব পাইখানা সারায়া বের হইয়া ব্যাংকে যাও, অসুবিধা নাই । আমি এইখানে আছি । টাকা জমা দিয়াই আমারে একটা কল দিও জান ।
ছেলেটা তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিল । তারপর দ্রুত মোবাইলটা বন্ধ করে সিম খুলে তোষকের নিচে রেখে দেয় ।

পরদিন থেকে মেয়েটা নিশ্চিন্তে কলেজে আসা যাওয়া করতে লাগলো । কেউ আর কোনদিন পথ আটকিয়ে প্রেম নিবেদন করে তাকে বিরক্ত করেনি ।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০২
৩৭টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×