মেয়েটার পেছনে ছেলেটা নাছোড়বান্দার মত ঘুরেই চলছে । মেয়েটা কত রকমে বুঝিয়ে বলল সে এখন শুধু পড়ালেখা আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে, কোন রিলেশনে জড়াতে চায় না । অথচ অবুঝের মত ছেলেটা মেয়েকে বিরক্ত করছে । প্রতিদিন কলেজে যাবার পথে দাঁড়িয়ে ছেলেটা মেয়েটাকে বেশ আবেগময় ভাষায় প্রেম নিবেদন করে । মেয়েটা স্বাভাবিকভাবে না করে দেয় । ছেলেটা পরদিন এসে আবার নতুন কোন ডায়ালগ দিয়ে প্রেম নিবেদন করে । মেয়েটা আবারো তাকে ফিরিয়ে দেয় ।
এভাবে একদিন ছেলেটা মেয়েকে বলে, ‘দেখো, তোমাকে আমি ভুলতে পারবো না । তুমি যদি সারাজীবন আমাকে ফিরিয়ে দাও তবুও আমি প্রতিদিন সকালে তোমার কাছে মন ভিক্ষা চাইবো । আমাকে ফিরিয়ে দিও না প্লিজ, আমি তুমি একসাথে জীবন কাটাবো । কথা দিচ্ছি, আমি তোমার জন্য এক তাজমহল বানিয়ে দেব । মৃত্যুর পর সেই তাজমহলে আমি তোমার পাশে থাকতে চাই । একবার যদি তুমি আমার হাত ধরো আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না, বেঁচে থাকি বা মরে যাই, কেয়ামতের আগে আর কেউ তোমাকে-আমাকে পৃথক করতে পারবে না ।’
মেয়েটা কিছুক্ষণ নীরবে ছেলের চেহারার দিকে তাকিয়ে রইল । মেয়েটা মনে মনে ভাবল, আহা, এই ছেলে তো দেখি আমায় নিস্তার দেবে না । তার প্রপোজে যতদিন সাড়া দেব না ততদিন সে নতুন উদ্যমে আমাকে বিরক্ত করতে থাকবে । এই ছেলেটাকে একটা ফ্ল্যাট ট্রিট দিলে নিশ্চিত সে একদম শান্ত হয়ে যাবে । আর কখনো বিরক্ত করবে না ।
মেয়েটার মুখে হাসি ফুটে উঠলো । ছেলের চোখে চোখ রেখে মেয়েটা বলে, সত্যিই তুমি আমাকে আজীবন ভালবাসবে ?
ছেলেটা বলে, হ্যাঁ সত্যিই আজীবন ভালবাসবো ।
মেয়েটা আবার বলল, মৃত্যু পর্যন্ত তুমি আমার পাশে থাকবে ?
ছেলেটা বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ মৃত্যু পর্যন্ত পাশে থাকবো ।
মেয়েটা সুন্দর করে হাসি দিয়ে বলল, সত্যিই আমার জন্য তাজমহল বানিয়ে দেবে ?
ছেলেটা ব্যপক উৎসাহ নিয়ে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তোমাকে তাজমহল বানিয়ে দেবো !
মেয়েটা ভুবন ভোলানো রিনরিনে হাসি দিয়ে বলল, আহ, আমি তো তোমার মত এমন একজনকেই চাই । আমি তোমার প্রস্তাবে রাজি । শোন, আগামিকাল সকাল দশটা বাজে তুমি আমার সাথে দেখা করার জন্য রেডি থেকো । আমি তোমাকে ফোন দিয়ে বলে দেবো কোথায় আসতে হবে । প্লিজ আমি ফোন দেবার আগে তুমি আমাকে কল দিও না, কেমন ?
ছেলেটা খুশিতে উচ্ছসিত কণ্ঠে বলল, ইয়েস ! আর মনে মনে বলল- যাহ শালী শেষ পর্যন্ত তোকে সিস্টেম করে ফেললাম !
পরদিন ছেলেটা সেজেগুজে রেডি হয়ে মেয়েটার ফোনের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে রইল ।
ঠিক সকাল দশটা বাজেই মেয়েটা ছেলেকে ফোন দিল । ছেলের মোবাইলে মেয়েটার কল আসতেই আনন্দে নেচে উঠে ছেলেটা কল রিসিভ করে বলল, হ্যালো জান, কোথায় তুমি ? তুমি কোথায় প্লিজ তাড়াতাড়ি বল ! আমি আর পারছি না । অপেক্ষা করতে করতে আজ আমি মরে যাচ্ছি । তোমাকে দেখলেই আমি যেন বাঁচি । কোথায় তুমি ?
মেয়েটা হেসে বলল , জান এতোগুলান দিন যখন ধৈর্য ধরছো আর একটু কষ্ট কর প্লিজ । আমি মিরপুরে আছি, তুমিও চইল্যা আসো, আজ আমগো অনেক কিছু করনের আছে ।
ছেলেটা বলল, ওয়াও ! মিরপুরে কোথায় জান ? বোটানিক্যাল গার্ডেনে ?
মেয়েটা বলল, আরে ধুর । বোটানিক্যাল গার্ডেনের ঝোপ জঙ্গলে গিয়া কি করমু ? আমি একটা ফ্ল্যাটে আসছি । তুমিও চইল্যা আসো ।
ছেলেটা মনে মনে বলে উঠলো, আরে এ তো দেখি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি ! আমার ভাগ্যটা যে এতো ভালো তা তো কখনো ভাবিনি । খুশিতে উদ্বেলিত ছেলে চিৎকার দিয়ে বলল, ওহ ফ্যান্টাস্টিক জান ! আমি এখুনি আসছি । কোথায় তুমি ? এড্রেসটা বল ।
মেয়ে হেসে বলে, মিরপুরে নাভানা রিয়েল এস্টেট গ্রুপ একটা নতুন হাউজিং প্রজেক্ট করছে । আমি সেখানে আমাগো জন্য একটা ফ্ল্যাট কিনতাছি । তুমি টাকা নিয়া আসো ।
ছেলেটা কিছুই বুঝল না । সে কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, কি বললা জান ? বুঝি নাই !
মেয়েটা জবাব দেয়, বুঝো নাই ? আইচ্ছা আবার কইতাছি, হুনো । তুমি আমি মিলা তো বাকি জীবন একলগে কাটামু । তো আমরা কি হারাজীবন গাছের তলায় থাকমু ? নাহ, আমরা একটা ফ্ল্যাট কিন্যা সেখানে আরামে থাকমু । এর লাইগা আমি নতুন ফ্ল্যাট দেখতে আসলাম । ফ্ল্যাট দেখে আমার পছন্দ হয়া গেছে । আমি অখনি বুকিং দিয়া দিতাছি । কাগজপত্র সব রেডি । এখন খালি টাকাটাই বাকি, তুমি ঝটপট বিশ লাখ টাকা নিয়া আসো ।
ছেলেটা সব শুনে তব্দা মেরে গেলো । কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর হো হো করে হেসে ছেলে বলল, জান তুমি তো সেইরাম জোকস করতে পারো । তোমার কথা শুনে আমার খুব হাসি পাচ্ছে । তোমার কথা বলার স্টাইল পুরো গুন্ডাদের মত হচ্ছে ।
মেয়েটা হেসে বলল, আরে জান, আমি তো এমনেই কতা কই ? তোমার কাছে আমার কতার স্টাইল ভাল্লাগছে ? অসুবিদা নাই, তুমি আমার কতা হুনতে হুনতে হারাজীবন হাসতে পারবা । তয় এখন হাসাহাসির টাইম নাই । টাকা নিয়া আসো ।
ছেলে বলে, তুমি রিয়েলি রিয়েল এস্টেটের অফিসে গেছো ?
মেয়ে শান্ত গলায় বলল, হ্যাঁ, হাঁচাই আসছি । দাঁড়াও তোমারে ইমোতে একটা ভিডিও কল দিতাছি । তাইলেই বুঝতে পারবা ।
সাথে সাথে মেয়েটা ভিডিও কল দিল । ভিডিও কলে ছেলেকে মেয়েটা দেখাল সে হাউজিং সোসাইটির অফিসে বসে আছে, তার হাতে ফ্ল্যাট বুকিং দেবার কাগজপত্র সব রেডি । সব দেখে শুনে ছেলে ভয়ে ভিডিও কল কেটে দিল । মনে মনে সে ভাবতে লাগলো তার সাথে মেয়েটা এসব কি করছে ! এই মেয়ে কি সুন্দর শুদ্ধ বাংলায় কথা বলত । আজ তার কথার একসেন্ট একদম মাস্তানদের মত হয়ে গেছে । মেয়েটা কি ছেলেটাকে সত্যিই ফ্ল্যাটবাড়ি কিনে দিতে বলছে ? নাকি এটা আসলে প্রাঙ্ক ! চারদিকে যেভাবে প্রাঙ্ক বেড়ে গেছে এই মেয়েটা হয়ত সেভাবেই প্রথম ডেটিংটাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রাঙ্ক করছে ।
মেয়েটা আবারো কল দিল । ছেলেটা কল রিসিভ করবে না ইগনোর করবে বুঝল না । কল বাজতে বাজতে কেটে গেল । মেয়েটা আবারো কল দিল । ছেলেটা কাঁপা হাতে কল রিসিভ করল । মেয়েটা আদুরে গলায় মিষ্টি ধমক দিয়ে বলল, এই তুমি কেটে দিলা কেন ? আমার কতা তো শেষ অয় নাই । আচ্ছা কতা পরে কমুনে, তুমি টাকা নিয়া আসো ।
ছেলেটা তোতলাতে তোতলাতে বলল, আ-আ-আমি টাকা কো-কোথায় পাবো ?
মেয়েটা বলল, আরেহ, তুমি তাজমহল বানানোর জন্য টাকা জমাই রাখছ না ! দেখো, মরার পরে তাজমহল দিয়া কি অইব ? তুমি আমি মরার পর আজিমপুর কবরস্থানের এক কিনারে পইড়া থাকমু । কাজেই ওইটা নিয়া ভাইবো না । আপাতত যদ্দিন বেঁচে আছি আমরা মিরপুরের ফ্ল্যাটে থাকমু । মরার পর তোমার কাছে তাজমহল চাই না জান । তোমার কাছে আমার একটাই আবদার, তাজমহলের ফাণ্ড ভাইঙ্গা আমারে ফ্ল্যাট কিন্যা দাও ।
ছেলেটা থতমত খেয়ে বলল, জান আজ সকাল থেকে আমার খুব পাতলা পায়খানা চলছে । আমি মিরপুর কিভাবে যাবো বল ? আমি তো বের হতেই পারছি না ।
মেয়েটা আফসোস করে বলল, ইশ! আজেবাজে জিনিস খায়া পেট খারাপ কইরা ফালাইছো । আচ্ছা কষ্ট কইরা এদ্দুর আসার দরকার নাই । আমি তোমারে মেসেজ দিয়া রিয়েল এস্টেট কোম্পানির একাউন্ট নাম্বার দিতাছি । তুমি তাড়াতাড়ি বিশ লাখ টাকা পাঠাই দাও । পারলে আরও বেশিও দিতে পারো । আগে পরে যখনই হউক সব টাকা তো তোমারেই শোধ করতে হইব । এখন যত টাকা দিয়া ফালান যায় তত ভালা । পেশাব পাইখানা সারায়া বের হইয়া ব্যাংকে যাও, অসুবিধা নাই । আমি এইখানে আছি । টাকা জমা দিয়াই আমারে একটা কল দিও জান ।
ছেলেটা তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিল । তারপর দ্রুত মোবাইলটা বন্ধ করে সিম খুলে তোষকের নিচে রেখে দেয় ।
পরদিন থেকে মেয়েটা নিশ্চিন্তে কলেজে আসা যাওয়া করতে লাগলো । কেউ আর কোনদিন পথ আটকিয়ে প্রেম নিবেদন করে তাকে বিরক্ত করেনি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০২