somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিন ও মানুষের বিয়ে

১৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের বাসার ছাদে কিছুদিন অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে । যেমন গভীর রাতে কেউ যেন ছাদে হাঁটছে, কিংবা গান গাইছে, এমনকি আমার মা নাকি শুনতে পেয়েছেন কেউ আমার নাম ধরে ডাকছে । বাবাকে উদ্বিগ্ন মা বললেন, ‘এই শুনছো ? ছাদে কে যেন হৃদি হৃদি বলে ডাক দিয়েছে ! ছাদে গিয়ে একটু দেখে আসো তো কেউ আছে কিনা ।’
বাবা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছাদে গেলেন । তারপর নেমে এসে গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘ছাদে কেউ নেই । মেয়ের চিন্তায় তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, এখন বাতাসের হিসহিসানি শুনে তোমার মনে হয় মেয়ের নাম ধরে কেউ ডাকছে ।’

কয়েকদিন পরের ঘটনা ।
আমি সন্ধ্যাবেলা ছাদ হতে কাপড় আনতে গেলাম । ছাদে গিয়ে তো আমি অবাক ! জুব্বা গায়ে দেয়া লম্বা একজন লোক ছাদে পায়চারী করছেন । দেখে মনে হল তিনি ইমাম সাহেব । আরে, উনি ছাদে উঠলেন কিভাবে ? আমাদের ছাদের আশেপাশে কোন গাছপালা নেই । স্পাইডারম্যান ছাড়া আর কারো পক্ষে এই ছাদে ওঠা সম্ভব নয় । আমি বললাম, ‘হুজুর, মাগরিবের আজান দিয়ে ফেলেছে তো, আপনি মসজিদে না গিয়ে আমাদের ছাদে হাঁটাহাঁটি করছেন কেন হুজুর ? আর এখানে আপনি উঠে এসেছেন কিভাবে ?’
তিনি আমার দিকে এগিয়ে এসে গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন । উনার চোখদুটো বাতির মত জ্বলছিল । বজ্রের মত কঠিন কন্ঠে বললেন, ‘তুর নাম হৃদি ?’
আমি বললাম, ‘জী হুজুর । আপনি আমার নাম জানেন ?’
তিনি বললেন, ‘হ জানি, তুই আমার পোলার বউ অইবি আর তুর নাম জানুম না এইডা কেমতে অয় ।’
আমি থতমত খেয়ে বললাম, ‘আমি আপনার ছেলের বউ মানে ? এটা কি বললেন হুজুর ?’
লোকটা মৃদু ধমকের সুরে বলল, ‘ওই মাইয়া ! আমি হুজুর না, আমি একজন জিন । আমার পোলার লগে তুর শাদি অইব, চল আমার লগে ।’
আমার গা কাঁপতে শুরু করল । এটা তাহলে জিন ! আমি তো মনে করেছিলাম সামু ব্লগের বিশিষ্ট অতিপ্রাকৃতিক ব্লগার সিগন্যাস ছাড়া কেউ কোনদিন জিন দেখেনি, দেখবেও না । আমি সিগন্যাসের জিন বিষয়ক ব্লগ পড়ে হাসতাম, এখন দেখি আমাকে জিনের ঘরেই যেতে হবে । হায় কপাল ।
আমি সাহস সঞ্চয় করে বললাম, ‘আমি একটু আমার মায়ের সাথে দেখা করে আসি ।’
জিন বিরক্ত হয়ে বলল, ‘মায়ের লগে দেখা করন লাগবো ? দরকার কি, আইচ্ছা যা, তুর মায়ের লগে মুলাকাত কইরা চইলা আয় ।’

আমি এক দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে মায়ের কাছে গেলাম । মা রান্নাঘরে রাতের খাবার পাক করছিলেন । আমি মাকে সব ঘটনা খুলে বললাম । মা বললেন, ‘তোর মাথা ঠিক আছে ? কি সব আবোল তাবোল বকছিস ?’
আমি কেঁদে মাকে বললাম, ‘আমার সাথে একবার ছাদে চল । তাহলে তুমি নিজে বুঝবে আমি যা বলছি তা সত্য নাকি মিথ্যা ।’
মা রান্নার খুন্তি নিয়ে আমার সাথে ছাদে চললেন ।

আমরা ছাদে গিয়ে দেখি জিন বাবাজী দাঁড়িয়ে আছেন । আমার মা কোন ভয় পেলেন না, হনহন করে হেঁটে জিনের কাছে গিয়ে মা বললেন, ‘এই যে ভাই, আপনি নাকি জিন ? আপনি নাকি আমার মেয়েকে আপনার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চান ।’
জিন বললেন, ‘অও, আপনি এই মাইয়াডার মা ? বেয়াইন সাহেবা আপনার নসিব বড় ভালা । আমার নাম খানবাদশা, আমি এই শহরের হগল জিনের সর্দার । আমার পোলা আপনাগো এই এলাকার মাদ্রাসায় মাইনষের সুরতে পড়ালেখা করে । সে মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে আপনের মাইয়ারে দেখে পসন্দ কইরা ফালাইছে । আপনাগো বাসার ছাদে আইসা সে ডেইলি হাঁটাহাঁটি করে, আপনের মাইয়ার নাম ধইরা নাকি মাজে মইধ্যে ডাকাডাকিও করে । ওরে আমি কত বুঝাইলাম, দেখ তুই জিনের পোলা, তুর লাইগা জিনের মাইয়া লাগবো । মানুষ বড় খারাব জাত, মানুষের কাছে যাইস না । হে আমার কুনো কতাই হুনে না । আপনের মাইয়ারে না পাইলে হেয় নাকি বাঁচবো না । তয় কি আর করুম । আপনের মাইয়ারে নিতে আইছি । কুনো চিন্তা নাই বইন, আমরা নিজেরা যা খাই আপনের মাইয়ারে আমরা হেইডাই খাবামু । আপনাগো বাঙালি জাতের প্রধান খাইদ্য ভাত আর মাছ, আমগো জিন জাতের প্রধান খাইদ্য গোবর আর হুকনা হাড্ডি । আমি কতা দিতাছি আপনের মাইয়ারে ভালা জাতের গরুর তাজা গোবর আর মরা রামছাগলের হুকনা হাড্ডি খাওয়ামু ।’
আমার মা বললেন, ‘তুই আমার মেয়েকে নিতে চাস ? তুই আমাকে চিনিস ?’
জিন আংকেল মনোযোগ দিয়ে মায়ের চেহারা দেখে বললেন, ‘না, চিনতে ত পারতাছি না । তয় গলার টোন হুইন্যা মনে অইতাছে আপনে স্বয়ং জিন জাতির আম্মু !’
মা আর ধৈর্য ধরতে পারলেন না । হাতের খুন্তি দিয়ে জিন বাবাজীকে এলোপাথাড়ি উত্তম মধ্যম দিতে শুরু করলেন । খুন্তির বাড়ি সহ্য করতে না পেরে জিনটা চোখের পলকে একটা বাদুড় হয়ে গেলেন । তারপর উড়ে চলে যেতে লাগলেন । কিন্তু বেশিদূর যেতে পারেননি । বিদ্যুতের তারের সাথে লেগে জিন বাদুড় কারেন্টের শক খেয়ে মরে গেলেন ।

সেই তারে মরা বাদুড়টি দীর্ঘদিন ঝুলেছিল । আমি ছাদে উঠে বিদ্যুতের তারে জড়ানো সেই বাদুড়টা দেখতাম, আর মনে মনে ভাবতাম কেউ জানতেও পারবে না এই বাদুড় সাধারণ কোন বাদুড় নয় ।



[গল্পের ডায়ালগে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করতে আমার ভালো লাগে না । কিন্তু গল্প লেখার পর নিজে যখন পড়ছিলাম তখন জিন সাহেবের মুখে শুদ্ধ বাংলা দেখতে কেমন যেন ‘অড’ লাগছিল । তাই জিনের ডায়ালগ হতে শুদ্ধ বাংলা কেটে অশুদ্ধ বাংলা লিখে দিলাম । ;) ]

উৎসঃ কল্পনাপ্রবণ মন হইতে উৎসারিত । এই ঘটনার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই । ছবিঃ অন্তর্জাল
উৎসর্গঃ আমার মাকে । যিনি জন্মের পর থেকে সকল প্রকার দানব হতে আমাকে আগলে রেখেছেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৪
৫৮টি মন্তব্য ৫৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×