somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কপালের ক্যানভাস

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ছিলাম বুয়েটের মেইন ওয়েটিং লিস্টে, আর ও ছিলো বুয়েটের আর্কিটেকচারের ওয়েটিং লিস্টে। বুয়েটে শেষ পর্যন্ত ওয়েটিং লিস্টে কতদূর টানবে এই হিসাব করতে গিয়েই ওর সাথে ফেসবুকে আমার বন্ধুত্ব।
এরপর আরেক ভার্সিটির ইলেকট্রিকাল ডিপার্টমেন্টে থিতু হলাম দুইজনই। গোঁফওয়ালা ফর্সা একটা মেয়ে, ওকে প্রথম দেখে এটাই আমার মাথায় আসে সবার আগে।
তারপর অনেকগুলো ক্যাফের পরোটা, অনেকগুলো হলিক্রস-নটরডেম যুদ্ধ, অনেকগুলো ইসিবি ক্যান্টিন, আর ক্লাসশেষে মিরপুর ডিওএইচএসের অনেক-অনেক রোদবৃষ্টি।।

প্রথম দেখা গোঁফওয়ালা সেই মেয়েটা তার নাকের নিচের ঐ কিঞ্চিৎ কেশ-নির্মূল অভিযান চালায় তারও দুই বছর পর। সেটা অবশ্য কখনও চোখে লাগে নি আমার আর। সর্বনাশ যা হওয়ার ততদিনে হয়ে গেছে।

আমি ছিলাম ভ্যাগাবন্ড। আর আমার চারপাশের সার্কিট-পড়ুয়া আঁতেলগোষ্ঠী ক্লাসে কিংবা পরীক্ষার খাতায় পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ফেলতো!!
কিন্তু সবার থেকে ও একটু আলাদা ছিল। কিছুটা উন্মাদ, কিছুটা ভাবুক... আর হয়তো, কিছুটা আমার মত। দুনিয়ার সব আজগুবি বিষয় নিয়ে এই মেয়েটার সাথেই গল্প করা যেত।

আমি আগে পূজায় ঘুরতে বের হতাম না।
পূজা-পার্বণে আলাদা করে বিশেষ কিছু মনে হত না কখনই। তবে ভার্সিটিতে ঢোকার পর শার্টের নিচে এতদিন যত্ন করে ঢেকে রাখা পাখাগুলোয় আস্তে আস্তে প্রাণসঞ্চার হলো। এলোমেলো ঘুরাঘুরির পাশাপাশি পূজার সময় নিয়ম করে রামকৃষ্ণ মিশন কিংবা ঢাকেশ্বরীতে ঘোরা শুরু করলাম।

ধর্ম নিয়ে ওর মধ্যেও সংস্কার ছিল না কোনও। আমাকে সুন্দর করে ও-ই প্রথম বোঝায় শ্রী-কৃষ্ণের অবতারতত্ত্ব। আর এইতো, বছরখানেক আগে হরতালের সময় বাসে উঠে ওকে যানবাহনের দোয়াটা আমারই শেখানো।
দেখিস, এটা পড়লে তোর কিচ্ছু হবে না।

আমরা স্রষ্টা বিশ্বাস করতাম।
আর... একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করতাম, অনেক।

ফার্স্ট ইয়ারে ভার্সিটির পাশের একটা ছোট্ট মণ্ডপে ওর সাথে পূজা দেখি। এরপর বনানীতে। তারপর জগন্নাথ হলে; গত স্বরস্বতী পূজায়।
সেবার বেদীর উপর শাড়ি পরে অমর্ত্যের দেবীকে প্রণাম করছিলো ও। আমি ওর বামপাশে দাঁড়ানো। সত্যি বলছি, ঐটা এখন পর্যন্ত আমার দেখা সেরা দৃশ্যের মধ্যে একটা।
ক্যাবলাকান্তের মত আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম এক মর্ত্যের দেবীর দিকে।

আমার খুব ইচ্ছা করত, এই পাগলাটে ধরণের মেয়েটাকে ওর বিয়ের আগ পর্যন্ত খুব যত্ন করে দেখেশুনে আগলে রাখবো। খুব আবেগ নিয়ে যুগল-বন্দীদের মত হাত ধরার কোনও ইচ্ছা আমার কখনই ছিল না। অন্তত টং-এর চা খেয়ে ফেরার পথে হোঁচট খেলে তো ওর হাতটা ধরা যেত, দশ লক্ষ মাইক্রো সেকেন্ডের জন্য।
ঐটুকুই তো অনেক।

পূজার সময় আমি এখনও বের হই।
কারণ আমাকে সবকিছু খুঁটিয়ে দেখতে হয়; বাসায় ফিরে নিজের গল্পটা লেখার জন্য হলেও। গত দুর্গা পূজায়ও একা একা ঘুরলাম কয়েকটা মণ্ডপে। বেদীর উপর উঠলাম কোথায় যেন। দশমীর রঙ-উৎসব চলছে তখন। হুট করে শাড়ি পরা এক মহিলা কপালে লাল এঁকে দিলো খুব যত্ন করে।
খুব ভালো লাগলো হঠাৎ করে কেন যেন।

মেডিকেল টার্ম অনুযায়ী, ব্রেইনের ফ্রন্টাল লোব অর্থাৎ কপালের দিকেই মানুষের আবেগ-অনুভূতির সৃষ্টি। আর এই কারণেই যুগ যুগ ধরে বোধ হয় কপালের স্পর্শকে ধরে নেয়া হয় নির্ভরতা। আমি ধর্মবোদ্ধা নই। তবুও ভাবতে ভালো লাগে; এজন্যই হয়তো কপালে সিঁদুর দেয়া হয় হিন্দুধর্মে।

ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে জিআরই দিয়ে বাইরে চলে যাবি তুই, তাইনা?? যাওয়ার আগে আমার কপালে খুব যত্ন করে একবার লাল রঙ দিয়ে যাস তো দশমীর দিনের ঐ অচেনা মহিলাটার মতন।
জানিস তুই, আমার চুল পড়ে যাচ্ছে??
তোর জন্য আমার কপালে বিরাট ক্যানভাস নিয়ে বসে আছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:০৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×