"আল কাওয়াকিবুদ দুরবিয়াহ ফী মাদহি খায়রিল বারিয়াহ" বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ(সা) এর প্রশংসায় রচিত এক সুদীর্ঘ কবিতা। বিশ্ববিখ্যাত এ কবিতা "কাসীদা-এ-বুরাদা" নামে সুপরিচিত।নবী প্রেমিকদের হৃদয়ে আজো যা জাগিয়ে তুলে ইশকের ঢেউ। ইমাম বুসরী(র) এর রচয়িতা। তাঁর পুরো নাম শেখ আবদুল্লাহ শরফুদ্দিন মুহাম্মাদ ইবনে সাঈদ ইবনে হাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ বুসরী(র)। মিসরের বসরি নামক জনপদে তিনি জন্মগ্রহন করেন। এই বুসির থেকে তিনি ইমাম বুসিরী নামে খ্যাতি লাভ করেন। হিজরী ৬০৮ সালে ১লা শাওয়াল মুতাবিক ইং ১২১৩ সালের ৭ মার্চ তার জন্মতারিখ। ১৯২০ সালে কায়রো নগরীতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
ইমাম বুসিরী ছিলেন বহু ভাষায় সুপণ্ডিত,সাহিত্যিক ও একজন প্রথিতযশা কবি। একজন কামেল আল্লাহওয়ালা হিসেবেও তিনি মুসলিম বিশ্বে সুপরিচিত। তিনি প্রচুর কবিতা রচনা করেছেন। তবে কাসীদা-এ-বুরাদাই তাঁকে অমর করে রেখেছে।
কবি একসময় পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ও সম্পূর্ণ অচল হয়ে বিছানায় আশ্রয় নেন। বহু চিকিৎসার পরেও তিনি আরোগ্য লাভ করেন নি,এসময় তিনি নবিজী(সা) এর প্রশংসায় একটি কাসীদা লিখে তাঁর উছিলায় আল্লাহ পাকের দরবারে রোগমুক্তির প্রার্থনা করার নিয়ত করেন। কাসীদা রচনা সমাপ্ত হলে তিনি এক জুমার রাতে পাক-সাফ হয়ে এক নির্জন ঘরে প্রবেশ করেন এবং গভীর মনোযোগে ভক্তিভরে কাসীদা আবৃত্তি করে থাকেন। আবৃত্তি করতে করতে তিনি একসময় ঘুমিয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তিনি স্বপ্ন দেখলেন, সমগ্র ঘর আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে গেছে এবং প্রিয়নবী (সা) সেখানে শুভাগমন করেছেন। কবি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন এবং স্বপ্নাবস্থায় প্রিয়নবী(সা)-কে কাসীদা পাঠ করে শুনাতে থাকেন। আবৃত্তি করতে করতে যখন কাসীদার শেষের দিকের একটি পঙক্তি পর্যন্ত পৌঁছান যেখানে লেখা ছিল"কাম আবরাআত আসিবান"-'কত চিররুগ্ন ব্যক্তিকে নিরাময় করেছে প্রিয়নবীর হাতের স্পর্শ' তখন প্রিয়নবী(সা) তার হাত মোবারক দিয়ে কবির সমগ্র দেহ মুছে দেন এবং তিনি খুশী হয়ে নিজ গায়ের নকশাদার ইয়ামনী চাদর দিয়ে তাঁকে ঢেকে দেন। স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় কবির! তাকিয়ে দেখেন প্রিয়নবীর সেখানে নেই। তবে কবি সম্পূর্ণ রোগমুক্ত এবং নবীজীর প্রদত্ত চাদর তার গায়ে জড়ানো। তিনি আল্লাহর শোকর আদায় করলেন।
সকালে উঠে তিনি বাজারের দিকে হাঁটতে লাগলেন। পথিমধ্যে দেখা হল এক দরবেশের সাথে। দরবেশ বললেন, আপনি নবী(সা) এর প্রশংসায় যে কাসীদা রচনা করেছেন, আমাকে তা একটু শুনান। ইমাম বুসিরী বললেন, আমি তো এ বিষয়ে অনেক কবিতা লিখেছি,আপনি কোনটি শুনতে চান। দরবেশ কাসীদা-এ-বুরাদার প্রথম চরণটি আবৃত্তি করে বললেন,এইটি।
বিস্ময়াভিভূত কবি বললেন, আপনি কোথায় পেলেন? আমি তো এ কাসিদা এখনো কাউকে দেখাইনি। দরবেশ বলল, গতরাতে আপনি যখন এ কাসিদা প্রিয়নবী(সা)-কে আবৃত্তি করে শুনাচ্ছিলেন তখন আমি সেখানে উপস্থিত থেকে তা শুনছিলাম। কেবল আমি নই, তখনই এ কাসীদা আল্লাহ পাক তাঁর বিশেষ বান্দাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন।
এভাবে অত্যল্পকালের মধ্যে এ কাসীদা এবং করামতের সংবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সে থেকে আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে অত্যন্ত ভক্তি ও সম্মানের সাথে এ কাসীদা পঠিত ও সমাদৃত হয়ে আসছে। বিভিন্ন ভাষায় গদ্যে ও পদ্যে এর বহু অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
ভাব, ভাষা ও ছন্দে এ এক রসোত্তীর্ণ ও কালোত্তীর্ণ কবিতা। অলংকারে,উপমা,উৎপ্রেক্ষা ও আঙ্গিকে সফল, সাবলীল,প্রাণময় এ কাসীদা শ্রুতিমধুর ও সুখপাঠ্য।
এ কবিতা শুনে প্রিয় নবী(সা) কবিকে নকশাদার চাদর দান করেছিলেন বলে, এ কবিতার নাম হয়েছে'কাসিদা-এ-বুরাদা'।'বুরাদাতুন' শব্দের অর্থ নকশাদার চাদর।নকশাদার চাদরের মত এ কবিতায় রয়েছে বিষয়-বৈচিত্র্য,ভাষার সূক্ষ্ণ কারুকাজ- এ জন্য এর নাম 'কাসীদা-এ-বুরাদা'- এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন কেউ কেউ।
আসলেই এ কবিতাটি এক অনন্য কবিতা, যা আজো নবী প্রেমিকদের আবেগে আপ্লুত করে, এ কবিতা পাঠে আজো কারো কারো চোখে অশ্রু ঝরে.........
বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন সুরে গাওয়া কাসিদায়ে বুরাদার কিছু ভিডিও শেয়ার করলামঃ
পুরো কবিতাটি বাংলা অনুবাদসহ নামাতে পারেন নিচের লিংক থেকেঃ
Kasida-E-Burda-ImamBusiri(RA)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৮:১২