somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের ধর্ম চর্চা , অন্ধ আস্তিক যেখানে একজন নাস্তিকের চেয়েও ভয়ংকর......

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জামাতের রাজনীতির স্ট্র্যাটেজী দেখলেই বোঝা যায় তারা একদম খাদের কিনারায় এসে পৌঁছেছে। শেষ পর্যন্ত ‘চাঁদ এবং সাইদী’ গুজবের উপরও তাদেরকে নির্ভর করতে হয়েছে। প্রোপাগান্ডা নির্ভর রাজনীতি তারা সারাজীবনই করে এসেছে। তবে এটা এতটাই নিম্নমানের হয়েছে যে তাদের দেউলিয়াত্ব (অন্তত রাজনৈতিকভাবে) আরো বেশী স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে তারা যে সেই সময়টুকুর জন্য সফল হয়েছে,গ্রামের হাজার হাজার সরল ...নারী,পুরুষ ও শিশুকে পথে নামাতে সক্ষম হয়েছে সেটা খুব বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি।
জামাত এতদূর গেল কি করে? উত্তরটা খুব সোজা। আমরা তথাকথিত ধার্মিক মুসলমানরা আসলে ধর্ম চর্চার জায়গায় একজন নাস্তিকের চেয়েও খারাপ। যারা কথায় কথায় ইসলাম ইসলাম করেন বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন তারা কোরান শরীফ বা হাদিস ঠিকভাবে বুঝে পড়েন কিনা? তাফসীর পড়েন কিনা? অনেকেই একেবারেই পড়েন না। ছোট বেলা হুজুরের কাছে কায়দা সিপারা অত:পর দুয়েকপারা কোরান পড়েই দায় শেষ। কোরান কিন্তু খুব বড় বই না। হুমায়ুন আহমেদের এক একটা বড়সড় উপন্যাসের সমান। ধীরে সুস্থে পড়তে শুরু করলেও ৭ দিনের বেশী লাগার কথা না। আমাদের কোরান পড়ার ধরনটাও অদ্ভূত। অধিকাংশই কোরান পড়ি রোজার মাসে দুপুরে, সুর করে, দুলে দুলে। বোঝার চেষ্টা নাই। অথচ মুখে বলি জীবন বিধান। কখনো বলি মহাবিজ্ঞান। বুঝলামই না যখন তা বিধান হলেই কি আর বিজ্ঞান হলেই বা কি? বাংলা বা বোধগম্য অন্য কোন ভাষায় কোরান আমরা সচরাচর পড়িনা। আরবী ভাষাটি শেখা্র তো তাগিদ নেইই। আমাদের হুজুররাও সাধারণত বাংলায় কোরান পড়াটা উৎসাহিত করেন না। বরং কেউ কেউ নিরুৎসাহিত করেন। এক সময় ব্রাহ্মণরা যে কারণে সাধারন মানুষকে বেদ পড়তে দিতনা, সম্ভবত সেরকম কোন কারণ থাকবে। টুপি-দাড়ি সর্বস্ব ধর্মব্যবসায়ীরা যা বলেন সেটাই মেনে নিই। এ্ই অবস্থানটা হয়তো তারা ধরে রাখতে চান আমাদের অন্ধকারে রেখে।
হাদীস শিখি আমরা মুখে মুখে। বাংলাদেশে জয়ীফ হাদিসের এবং জাল হাদিসের কদরই বেশী। একবারে ছড়াছড়ি। দেখার কেউ নেই। কোরানের ইবনে কাথিরের তাফসীর জগদ্বিখ্যাত। কেউ পড়লে গল্প-উপন্যাস(রূপক অর্থে) পড়ার মত মজা পাবেন, নিশ্চিত। আমাদের শিক্ষিত সমাজ এসব ব্যাপারে চরম উদাসীন। তারা টলস্টয় পড়লেই ভাবেন আর কিছু লাগেনা। আরও লক্ষ্য করেছি জামাত শিবির এবং অন্যান্য ধর্ম ব্যবসায়ীরা মূলত নাসেক মানসুকের( যেগুলো আয়াত পরবর্তী সংশ্লিষ্ট আয়াত দ্বারা বাতিল করা হয়েছে) উপর ভিত্তি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে থাকে। তাছাড়া আয়াত গুলো নাযিলের কার্যকারণ বিবেচনা করলেও অনেক অপব্যাখ্যা এমনিতেই স্পষ্ট হয়ে যায়। আমি আমার সহকর্মীদের দেখেছি তারা কেউই কোরান হাদীসের বেসিক বই গুলি পড়েন না। কেউ কেউ জীবনেও পড়েননি। কোরান হাদীসের বা্ইরে ধর্মীয় বই বলতে তারা বোঝেন নামাজ শিক্ষা, মোকসেদুল মোমেনীন বা পাঞ্জেগানা ওজিফা টাইপের নিম্নমানের বই। অথচ এক এক জনের ডেভিডসন প্রায় মুখস্ত্। এই মানুষগুলিও ধর্ম নিয়ে ভীষন সেনসিটিভ। ধর্ম কেবল আবেগের জায়গায়ই হয়ে রইলো এদের কাছে, জ্ঞান চর্চার সাথে এর কোন যোগ নেই।
ইসলাম ভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে প্রায়ই আমরা কথা বলি। কিন্তু ইসলামে রাজনীতির প্রকৃত স্বরূপটি কি তা নিয়ে কেউ ভাবিনা। কেন খোলফোয়ে রাশেদীনের চারজনের মধ্যে তিনজন খলিফাই মারা গেলেন গোত্র দ্বন্দ্বে? কেন মুসলিম জাহানের পঞ্চম প্রতিনিধি নবীর ওহী লেখক, ব্যক্তিগত সহকারী মুয়াবিয়া (আ: ) নবীর উম্মতদের কাছে হয়ে উঠলেন খল চরিত্র, কেউ ভেবে দেখিনা। ভোগবাদিতার বিপরীতে সাম্যবাদ আর ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে গড়া রাষ্ট্রই ইসলামী রাষ্ট্র। নয়তো মুয়াবিয়া(আ: )কেও আমরা খোলাফায়ে রাশেদীনই বলতাম।
খুব আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করেছি আমাদের ধর্ম চর্চা হয়ে উঠেছে মূলত সমাজের বঞ্চিত মানুষের, নিম্ন আয়ের মানুষের আধ্যাতিকতার চর্চা। কারণ তাদের আর কোন জায়গা নেই। প্রচলিত শিক্ষাকে এরা আপন করতে পারেনা। কারণ আমাদের অর্থর্নৈতিক বৈষম্য। এদের ইহকালে কিছু নেই এরা জেনে গেছে। তাই পরকালই ভরসা। এই ধর্ম শিক্ষা তাদের জীবিকাও। এই জীবিকার মান খুবই নিম্ন। আমাদের মফস্বলের ইমামরা কত টাকা বেতন পান কেউ কি জানেন? ১৫শ থেকে ২ হাজার এর বেশী না। এরা বেচে থাকে কি করে? বাজারে মাইক ভাড়া করে এক ধরনের ভিক্ষাবৃত্তি, বাড়ী বাড়ী গিয়ে আরবী পড়ানো আর মৌলভী খাওয়ানোর নামে মাসে ১০ /১২ টা বাড়ীতে গিয়ে দাওয়াত খাওয়ার মত ব্যাক্তিত্বহীন কাজ তাদের করতে হয়। অথচ একেকটা মসজিদের পেছনে বছর বছর কতগুলি টাকা খরচ হয়! মাদ্রাসা শিক্ষা যে আদৌ বাস্তবানুগ কোন শিক্ষা ব্যবস্থা না সেটা সবাই জানেন। কেউ এদের সংস্কার করেনা। একেকজন মাদ্রাসা একটা খাড়া করেই পরকালের টিকেট কনফারম করে ফেলেন। ইসলাম-পসন্দ মানুষ হিসেবে তারা নাম কামান। এর ভেতরের অন্ত:সার শূন্যতা নিয়ে ভাবেন না। যিনি প্রতিষ্ঠা করেন উন্নতি নিয়ে তারও মাথা ব্যথা নেই। প্রগতিশীলরাও এসব নিয়ে ভাবেন না, এসব নিয়ে ভাবলে তাদের লেভেল নীচে নেমে যায়। ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করেন, মাদ্রাসা নিয়ে যারা রাজনীতি করেন তাদের ছেলে মেয়েরাও মাদ্রাসায় পড়ে না। মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদারেছীনের নেতা মাওলানা(!) মান্নান(কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী)-এর ছেলে বিদেশে পড়ালেখা করেছেন। গো আজমের ছেলেরাও তাই। আমি গ্রামে গিয়ে দেখেছি কি ভয়ংকর অন্ধকারের ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠে মাদ্রাসার ছাত্ররা। এটা এমন এক অন্ধকার যার সাথে ইসলামের কোন যোগ নেই। এই শিক্ষায় কোন বিনোদন নেই,মানবিকতার চর্চা নেই। এ যেন এক আবছা আলো-ছায়ার জগত। যা সে দেখে না, বোঝে ও না। কেবল মুখস্ত করে। আমাদের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই ইসলামিক স্টাডিজ বলে একটা বিভাগ থাকে। সেখানে ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য সাবজেক্টে চান্স পেতে গিয়ে যারা ব্যর্থ হয় তারা। এখানে আসলে কি স্টাডি হয় আমার জানার খুব ইচ্ছা। আমাদের কারোরই এসব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। আবার ধর্ম নিয়ে আমাদের উন্মাদনারও শেষ নেই। আমাদের সো কল্ড শিক্ষিত সমাজ তাই অজান্তেই ওদের শ্রেনীশত্রু। কারণ এই সমাজ থেকে তারা অবজ্ঞা ছাড়া কিছু পায়না। ফলে শাহবাগের মানুষ নয় সাঈদীই হয়ে ওঠে ওদের আপনজন।
এই অবস্থায় পুরো সুযোগটা নিচ্ছে জামাতের মত দলগুলি। একদিকে ভুল ব্যাখ্যা অন্য দিকে শ্রেনী অসন্তোষ, এই দিয়ে সহজেই তারা মানুষকে ফ্যানাটিক করে ফেলতে পারে। ‘এমনকি চাঁদে সাঈদীর ছবি দেখা গেছে’ এরকম আজগুবি গল্পও তারা খাওয়াতে পারে। বঞ্চিত মানুষ এর সাথে চিরকালই সুবিধাভোগীদের একটা সংঘাত
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:২২
১২টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×