somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।। আ স্টোরি অব ব্রোথেল ।।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আলোর ঝলকানি দেখতে আমি চিলেকোঠায় উঠি ।

হাজার হাজার কষ্টের সিড়ি বেয়ে বেয়ে উঠতে থাকি এক বিভোরতায়। নীচে পড়ে থাকে কলোনি বাড়ির কলের পাড়, নোংরা গলি, খিস্তি খেউড়ে ডুবে থাকা আর অন্ধকারের সাথে বেড়ে ওঠা এক পাড়া । সারা সকাল পাড়াটা বেঘোরে ঘুমায় ।

দুপুরের আগে আগে পাড়া জাগতে শুরু করে। দাতঁমাজা, হাটুমাজা, দেহমাজাসহ কলপাড়ে ভিড়, চুলায় ভিড়সহ নানাবিধ ভিড় উপচে পড়ে । কেননা জায়গা বড় কম । মাত্র বিশ বর্গ ফিটে দুজন করে মানুষের বাস । সকাল থেকে শুরু করে শিশু শিক্ষার আপা, সিস্টার-ডাক্তার আপাদের কৌতূহলী আলাপচারিতা,বাজারবাবুর হিসাবের খাতার প্যাচাল,আলগা খুনসুটি, আর মাসিদের মোড়লীপানায় ভরে থাকে ক্লান্ত দুপুর-বিকেল ।

এর মাঝে হয়ত স্নান শেষে ভিজে চুলে কেউ দাঁড়ায় এক চিলতে রোদ্দুরে

কেউবা মুঠোফোনে জেনে নেয় দূরান্তে থাকা নিজ পরিবারের খোঁজ, পাঠানো মানি অর্ডারের খবর । নিজেকে পরিচয়হীন রেখে হয়ত অন্য কারো পরিচয়কে নিশ্চয়তা দেয় এই দেহজীবী নারীরা । কে জানে, তাদের পাঠানো অর্থেই লালিত হয় অন্য কারো স্বপ্ন । কেউবা বসে যায় সাজাতে নিজেকে কেননা সন্ধ্যা রাত্রে বিকোতে হবে নিজেকে ।সেখানে মুখের জেল্লাতি না বাড়ালে এ বাজারে টিকে থাকা বড় মুস্কিল । আর এ বাজারে প্রতারণা বড় এক পুঁজি ।

এখানে সন্ধ্যা হলে বাতি জ্বলে ওঠে ঘরে ঘরে । ঘরে ঘরে নকল ভালবাসার হাসি আর মুনাফার রাংতায় জড়ানো এক দেহজ বেসাতের আওয়াজ পাওয়া যায় । দেহলোভীরা ভিড় করে এইসব আত্মত্যাগী নারীর দরোজায় । যদিও ক্রেতা নাগরেরা নগদে বিনিময় করে কিন্ত ত্যাগ বড়ই একপেশে হয়ে যায় নারীদের জন্য ।

তাতে অবশ্য সমাজের কিছু এসে যায়না ।সমাজে ক্ষতের মত বেঁচে বর্তে টিকে যায় পাড়াটা, যুদ্ধ করে টিকে থাকে একদল মানুষ । মানুষই তো ।

দেখতে ,কথায়,আচার আচরণে ওদের মানুষের মতই তো লাগে । তবু কেমন একটা আশরাফী ঘৃনা আমাদের এই সত্যকে ঢেকে রাখতে চায় ।আমাদের বুঝিয়ে দিতে চায় ওরা মানুষ সত্যি কিন্ত যেন কেমন অন্য টাইপের মানুষ ।

অথচ অধিকাংশ নারীরাই কোথাও না কোথাও ছলনা-বঞ্চনার শিকার হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছে । বেশীরভাগই অনিচ্ছায় শিকার হয়ে একেবারে উপাদেয় হয়ে চলে এসেছে সমাজের লাম্পট্যে ভরা এক আলুলায়িত শয্যায় ।

সারাটা জীবন ভাগ্যের দোষে জ্বলে পুড়ে অংগার হতে থাকে একদল নারী । একসময় এরাও মেনে নেয় ভাগ্য অথচ এরা কারো বোন, কারো স্ত্রী হতে পারত অনায়াসে ।

আর এর মধ্যেই জন্ম নেয় এবং বেড়ে ওঠে কিছু মানবশিশু, আদম সন্তান ।

কার পাপে বা কার ভালবাসায় এদের জন্ম তা উদঘাটন সম্ভব করা হয়ে ওঠেনা । সে উদঘাটন করতে গেলেই সমাজের বিরাট এলার্জি শুরু হয়ে যাবে ।

কার পাপে এই শিশুরা ক্রুশবিদ্ধ হয় প্রতিদিন ?

ওরা জানেনা পিতা,আব্বা,বাবা শব্দের মাহাত্ম কোথায় কতটুকুন । ওরা জানেনা এক নিবিড় আশ্রয়ের নাম –বাবা । হাজার হাজার অভিধান খুঁজেও পায়না বাবার কোন যুৎসই অর্থ । এক মা- তাও প্রতিদিনের দলাই মলাই শেষে আর মা হয়ে উঠতে পারেনা । হয়ত হটাৎ কোন মধ্যরাতে ঘুম ভেংগে গেলে মায়ের বুকের মধ্যে বা আঁচলের গন্ধের মধ্যে সামান্য একটু মা-কে খুঁজে পায় । সে বড়ই সামান্য ।

শিশুর অধিকার কে আর রক্ষা করে ! সরকার তো দূর আকাশের তারা তাকে দেখা যায় কিন্ত কাছে আসেনা । তাই ওরা বেশীদিন আর শিশু থাকেনা । অল্পতেই বুঝে যায় ব্যবসার কলা কৌশল , চাতুরী, সমাজের তাচ্ছিল্য ।
ওরা জেনে যায় দেখতে আদতে মানুষ হলেও ওরা আসলে মানুষ না ।

ওদের সাথে কেউই নেই । না ধর্ম, না সমাজ, না মা, না বাবা ! ওরা তাহলে বেঁচে ওঠে কিভাবে ? বেঁচে থাকে কিভাবে ? ওরা এই সমাজের বা মানুষের প্রতি কি মনোভাব পোষন করে তাহলে ? অথচ ওরাই জানে এই সমাজের কারা তাদের বাবারা ? সমাজের কারা রাতের আঁধারে মুখ মুখোশে ঢেকে ভিড় করে তাদের মায়েদের দরোজায় ।

এভাবেই একদল মানুষ দিনের পর দিন শোষিত হতে থাকে আমাদেরই সামাজিক বিলাস ব্যসনে , রাজনীতিতে, বাক্তিগত শয়তানিতে ।

আর আমরা মানব সেবার গল্প লিখি, মানব উন্নয়নে মেডেল নিই পারলে নোবেল নিয়ে টানাটানি করি,হ্যান করি ত্যান করি আসলে ঘোড়ার ডিম করি ।

আ স্টোরি অব ব্রোথেল/ ১৭।০৯।২০১৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×