আসরের ক্ষানিক পর। গ্রামকে ফরজ গোসল করিয়ে নেওয়ার জন্য যতটুকু বৃষ্টি দরকার ঠিক ততটুকু বৃষ্টি হয়েছে একটু আগে। স্বচ্ছতা নিয়ে বায়োমন্ডল নিজেকে রাঙিয়ে রেখেছে, দেখতে সদ্য বিবাহিত নারীর হাতে লাগানো মেহেদীর মত। যতটুকু বাতাস দিলে দরবারের শাহেন শাহ্ খুশি হয় ঠিক ততটুকু পরিমাণ বাতাস বইছে। সূর্যের উপস্থিতি নাই, অস্তিত্ব আছে। বাঁশ গাছের পাতাগুলো বাতাসের ছোয়ায় যে স্বর্গীয় শব্দ তৈরী করছে তাতে তাল দিয়ে পাখপাখালীরা বুঝাতে চাইছে তারা গায়ক নয়, বাদক। পানির নৃত্য, মৃত্যুমুখী মানুষকেও হাসিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে কলকল করছে। ঘাটলার পাশে থাকা ফুলের বাগান, হুরের বাগানের মত দেখাচ্ছে। এমন পরিবেশে দাদা ভাইকে ধরে থাকতে মন চাইছে। এমন পরিবেশও আমার মন খারাপ।
ইহতেশাম আলী। আমার দাদা। উনার অবস্থা দেখলে মনে হয় উনি বৃদ্ধ হওয়ার জন্যই সারা জীবন অপেক্ষা করেছে। দুই কারণে দাদা ভাইকে আমার পচন্দ।
১. উনি অযুকে যেতে দেন না। অযুর প্রতি ভালোবাসা দেখে মাঝে মাঝে অযুওয়ালা আমিও দ্বিধায় পড়ে যাই। নিজেকে প্রশ্ন করি, আমার অযু আছে তো?
২. উনার শিশু বনে যাওয়া। দাদা যখন পবিত্র কোরআন পড়েন তখন মনে হয়, নিষ্পাপ শিশু হয়ে উনি কারো সাথে কথা বলছেন।
ঐইতো ঘাটলায়। দাদা ভাই… হাত দিয়ে আমাকে ডাকছেন। জড়িয়ে ধরলাম! আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হাল মিম মাহিচ”১। আমি কবর দেখিয়ে দিলাম। উনি মুচকি হাসলেন।
- আচ্ছা দাদা ভাই, তুমি এত শুভ্র কেন?
- কারণ, আমার মা আমাকে পবিত্রতা পর্যন্ত যত্ন করেছেন।
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষন!
- আচ্ছা সাদ, দাদুকে তোমার একটা ইচ্ছার কথা বল।
- আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর সাথে ফজরের নামাজ পড়া।
- হক সাহেব!
- জ্বি হক সাহেব।
চল দাদা ভাই, যাই। আমি কিন্তু তোমার হাত ধরে রাখবো। নইলে আমার বেশী কষ্ট লাগবে। আমরা মুয়াজ্জিন সাহেবের বাড়ির দিকে হাটতে থাকলাম। তার ২০ বছরের মেয়ে আলিয়া’র জানাজা মাগরিবের আগেই।
১. সূরা ক্বাফ। আয়াত – ৩৬ সূফী – ১৯.০৪.১৮
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৪২