২০১১ সালের আদমশুমারির প্রতিবেদনে অনুযায়ী বাংলাদেশে আদিবাসীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ১৪১ জন তারা প্রায় ২৭টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত।দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে এদের বসবাস থাকলেও পাহাড়ী অঞ্চলে এদের বসবাস বেশি।দেশের অনেক গন্য মান্য ব্যাক্তি বর্গ এদের প্রশংসা করতে গিয়ে "পাহাড় ও বন ধ্বংস বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম একটি কারণ। দীর্ঘদিন যাবত পাহাড় ও বনাঞ্চলে বসবাস করে বনের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এসেছে আদিবাসীরা" এরকম মন্তব্য করেছেন বলে যানা যায়।
শুধু তাই না ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও এদের অবদান অস্বীকার করার মত না তা বীর মুক্তিযোদ্ধা উ-মংয়াইন, উ-ক্যহ্রাচিং, উ-উসিতমং প্রমুখ দের সম্পর্কে জানলে বোঝা যায়।শুধু এরাই না গারো যোদ্ধা লতিকা এন মারাক, খাসিয়া নারী কাকন বিবি, শহীদ কাঁকেট, রাখাইন নারী প্রিনছা খে।এছাড়াও অনেক নাম না জানা খোঁজ না জানা অনেক নারী পাকিস্তানীদের কাছে বন্দী অবস্থায় মৃত্যু বরন করেছেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা স্বাধীন দেশ পেলেও তারা কি আসলেই স্বধীনতা পেয়েছে ? তারা কি স্বাধীন ভাবে বাঁচার অধিকার পেয়েছে? আমার মনে হয় না পেয়েছে । যদি পেত তাহলে শত শত নারী শিশু ধর্ষনের স্বীকার হত না ।
বিগত ২০১৩ ও ২০১৪ সালের একটি ধর্ষনের বর্নণা নিম্নরূপঃ
২০১৪ সালে পরিসংখ্যান অনুযায়ী যৌন ও শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছে ১১৭ জন নারী ও শিশু। তাদের মধ্যে ধর্ষন এবং গণধর্ষনের শিকার হয়েছে ২১ জন আদিবাসী নারী ও শিশু, ধর্ষনের পর হত্যা ৭ জন, শারীরিক লাঞ্চনা ও আক্রমনের শিকার ৫৫ জন, ধর্ষনের চেষ্টার শিকার ২১ জন, অপহরণ ও অপহরনের চেষ্টা শিকার ১১ জন, যৌন হয়রানী ২ জন আদিবাসী নারী ও শিশু। ২০১৩ সালে আদিবাসী নারী ও শিশু সহিংসতার শিকারের এই সংখ্যা ছিল ৬৭ জন। ২০১৩ সালের সহিংসতার শিকার আদিবাসী নারী ও শিশু থেকে ২০১৪ সালে ৫০ জন বেশী শিকার হয়েছে, যার অর্থ হলো ২০১৩ সাল থেকে ২০১৪ সালে দেড় গুণ বেশী আদিবাসী নারী ও শিশু যৌন ও শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছে।(সুত্রঃইনটারনেট)
এইভাবে চলতে থাকলে ২০১৫ সালে ধর্ষণের হার গত বছরের তুলনায় তিনগুন হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু হবে বলে মনে হয় না ।
ধর্ষণের অপরাধে বাংলাদেশের আইনে যে সকল শাস্তির বিধান রয়েছে তা হলো:
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)
(১) যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন৷
(২) যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তাহার নিষেধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন৷
(৩) যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহা হইলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন৷
(৪) যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে-
(ক) ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন
(খ) ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে ব্যক্তি অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যূন পাঁচ বত্সর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন৷
(৫) যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে নারী ধর্ষিতা হন, তাহা হইলে যাহাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্তরূপ ধর্ষণ সংঘটিত হইয়াছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তিনি বা তাহারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যূন পাঁচ বত্সরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন দশ হাজার টাকা অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন। (সুত্রঃইনটারনেট)
কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় এত সুন্দর আইন থাকা সত্ত্বেও ধর্ষণের কোন মামলার বিচার হইছে বলে আমি আজ পর্যন্ত শুনি নাই। অনেক ধর্ষকের গ্রেপ্তারের খবর শুনেছি। এমন কি দেখেছিও বটে । তবে তাদের বিচার .....!! নাহ বিচার হয় নি জামিনে ছাড়া পেয়ে হাওয়া খেতে চলে যেতে দেখেছি । ধর্ষণের খবর জাতীয় দৈনিক বা অনলাইন পোর্টালে আসে তবে বিচারের খবর আজ পর্যন্ত কেউ দেখেছে বলে মনে হয় না , আমি কোনোদিন দেখি নাই। এখন অধিকাংশ ধর্ষক আমাদের বিচার বিভাগ কে বুড়োআঙ্গুল দেখিয়ে চলে যাচ্ছে না বিচার বিভাগ এর কত্তারা বুড়োআঙ্গুল দেখে ছেড়ে দিচ্ছে সেটা কিন্তু ভাবার বিষয়।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন আমি আদিবাসী নিয়ে কেন লিখলাম ধর্ষন তো আহরহ হয় । কিন্তু লেখার কারণ আদিবাসীদের ধর্ষনের মামলায় বেশি বাঙ্গালী জড়িত আমরা পাকিস্তানী দের ঘৃনা করি পাকিস্তানীদের নাম শুনলে তাদের মুখে একদলা থু থু নিক্ষেপ করতে চাই কিংবা তাদের মুখে বায়ু দূষন করার ইচ্ছা পোষোণ করি। কিন্তু যখন ভবিষ্যতে পাহাড়ী শিশুরা বড় হবে তারা বাঙ্গালীকে ধর্ষক হিসেবে জানবে তারাও বাঙ্গালীদের মুখে থু থু নিক্ষেপ করতে দ্বিধা করবে না ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:০৫