শিক্ষার মুল কাজ কি শুধু বই মুখস্ত করা নাকি সামগ্রিক জীবনকে আলোয় আলোকিত করা!এক বাক্যে সকলেই বলবে আলোয় আলোকিত করা।কিন্তু আমরা কি আসলেই আলোয় আলোকিত করতে পারছি !
প্রতিনিয়ত শোনা যায় বাংলাদেশের মেধাবীদের অন্যতম সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে বললে বড় কোন বিষয় বাদ দিয়েই যদি বলি তবে দেখা যায় ছোট্ট বাসের ভাড়ার এক দুই টাকাকে কেন্দ্র করে তাদের আশপাশ কে রণক্ষেত্র করে।এছাড়া প্রতিদিন নানা অপকর্ম প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা হয়েই থাকে বলা যায়।তবে শিক্ষার আলোতে আলোকিত হওয়া আর কতটুকু হচ্ছে যখন যতবড় শিক্ষিত ততবড় অন্ধকারের কালিমা লেপটে থাকে তাদের গায়ে।
মূলত শিক্ষা বলি আর ধর্ম বলি আর নীতি বলি আমরা অন্যের জন্য এবং কিছু তত্ত্ব কথার মাধ্যমে চালিয়ে নেয়াতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি কারণ আমাদের শিক্ষা বা ধর্ম বা নীতি ভাবনা সবকিছু পুঁথিগত হয়ে গেছে।
এটি একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। মানুষ জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগ মূহুর্ত পর্যন্ত শেখে।শিক্ষার দুইটা ধারা আছে,
১। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা
২। অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা।
শিক্ষাই জাতির যে মেরুদণ্ড সে শিক্ষাকে যদি শুধুমাত্র পুঁথিগত শিক্ষাকে বুঝানো হয় তবে সেখান থেকে মেরুদণ্ড সম্পন্ন মানুষ আকৃতির একটি দেহ পাওয়া যাবে কিন্তু বিবেকের শিক্ষা শূন্য মানব থেকে মানবতা,নৈতিকতা বোধ সম্পন্ন পরিপূর্ণ মানব কখনোই পাওয়া যাবে না।
মূলত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দক্ষতার মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজন পাশাপাশি তার সাথে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার সমন্বয় সাধন করে তবে শিক্ষার মুল রূপ পাওয়া যাবে।সেখানে বাস্তব শিক্ষা থাকবে যার ধারা শুধু করো আর করতে হবে এমন কথায় সীমাবদ্ধ না থেকে এইভাবে করে আর এইভাবে করতে হবে এমন উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে চর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
আমরা অনেকেই অনেক কিছু জানি বা শিখেছি কিন্তু প্রয়োগের পন্থার অভাবে সকলেই হীনমন্যতায় ভুগতে ভুগতে শিক্ষিত এবং মূর্খের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না।
ইউরোপে বাচ্চাদের কথা বলা শিখানো হয়,চলা শিখানো হয়,নীতি নৈতিকতা (তাদের সামাজিক পন্থা অনুযায়ী) শিক্ষা দেয়া হয়।এখানে শিক্ষা দেয়া হয় মানে তাত্ত্বিক শিক্ষা না বাস্তবিক শিক্ষা দেয়া হয়।
যেমন একটি বাচ্চাকে কেউ কিছু দিলেই মা তাকে বলতে থাকে ধন্যবাদ বল,বা বাচ্চা কোন দোষ করে থাকলে বলা হয় সরি বল কিংবা লাইনে দাঁড়ানো থাকলে লাইন মেইন্তেন করার জন্য ধৈর্য শিক্ষার চর্চা প্যারেন্টস রা যেমন নিজেরা করে বা শিক্ষকগন নিজেরা করে তেমনি বাচ্চাদের ঠিক একইভাবে শিখানো হয়। উদাহরণ হিসেবে আরও অনেক বিষয়কে টানা যায়।তবে আশা দুই একটি দিয়ে সামগ্রিক অবস্থা বুঝানোর চেষ্টা করলাম।
আমরাও এসব জানি কিন্তু প্রয়োগ করতে জানি না বলে কেউ আর হীনমন্যতায় ভুগতে ভুগতে ভালো কাজ গুলো করা হয়ে উঠে না এবং খারাপ গুলো করতে আমাদের বিবেক ও বাঁধা দেয় না কারণ ভালো কাজের অভ্যাসগত চর্চা আমাদের নেই।
ঠিক ধর্ম যেভাবে তুমি করো ধরনের হয়ে যেতে যেতে ধর্মহীন সমাজ এসে গেছে তেমনি শিক্ষাও শুধু নৈতিক কথার ফুলঝুরি হতে হতে যতবড় শিক্ষিত ততবড় শয়তান হয়ে যাওয়াটা নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে।
পরিশেষে বলি,শিক্ষা শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত "সাস" ধাতু থেকে। সাধারণভাবে বলা যায় মানুষের আচরণের কাঙ্ক্ষিত, বাঞ্চিত এবং ইতিবাচক পরির্বতনই হলো শিক্ষা।এই ব্যাপারটি উপলব্ধি করতেই হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:৫২