somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপসংস্কৃতির আগ্রাসন নামক সন্ত্রাস কে প্রথম দূর করতে হবে

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্ব জুড়ে নানা অনাচার,বিশৃঙ্খলা এবং অস্থিরতার মূল খুঁজতে গেলে অস্ত্রের ঝঙ্কার বা ধর্মের কথা এগুলোর কোনটাই আসলে মূল নয়।বরং সাংস্কৃতিক আগ্রাসন হল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং প্রধান উপাদান।স্লো অথচ মূল ফ্যাক্ট হিসেবে এই ফ্যাক্টকে সমাজে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে মানুষের বিশ্বাস এবং চিন্তা চেতনাকে যখন গ্রাস করে ফেলেছে তখন নিজস্ব বিবেক সম্পন্ন চিন্তা চেতনার প্রয়োগের অবকাশ আর কোথাও নেই।ব্রেইন চলছে কম্পিউটারের সফটওয়্যারের মত।কেউ রিফ্রেশ দিয়ে দিচ্ছে,বা ভাইরাস ঢুকিয়ে দিচ্ছে বা রিপ্লেস করে দিচ্ছে এবং মানুষ তা নিয়েই ঘুরছে।
অপসংস্কৃতির থাবা যে ভয়ানক ভাবে মানুষকে পরিচালিত করছে এবং সকল অপকর্মের মূলে এই বিষয়গুলি কাজ করছে তা বোঝার এবং যে কোন উপায়ে তাকে প্রতিহত করার মধ্যেই আগামী দিনের জাতির সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
সমাজবিজ্ঞানী E. B. Taylor বলেন,
‘Cultural perversion might lead the youth generation to contamination and destruction'
সংস্কৃতি একটি সমাজের আয়না,কিন্তু সেই আয়নায় যদি সমাজের চিত্র না ফুটে,সমাজের বিপরীত কিছু ফুটে উঠে তবে সমাজের অসঙ্গতি দেখা দিবে।উনিশ শটকের শুরুর দিক থেকে এই অসঙ্গতি যখন শুরু হয় তখন থেকে একদল সচেতন ব্যাক্তি আজকের এই দিনটি সম্পর্কে ভেবেছিলেন এবং সতর্ক করেছিলেন।কিন্তু তখন থেকেই অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহকরা পৃথিবী কিনতে তারা এই বিষয়টিকে স্লো ভাবে সমাজে এটাকে ছড়িয়ে দেয় কারণ তারা জানে একদিন এঁর মাধ্যমেই তারা পৃথিবীকে একচ্ছত্রভাবে তাদের করে নিবে।
দার্শনিক কান্ট বলেছেন যে, সংস্কৃতি মানুষের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সুতরাং বিষয়টিকে বাইরে এনে উলঙ্গ করে স্বাদ নিলে এর মজা বা মহাত্ম থাকে না।এই মহাত্ন কে ধ্বংস করেই যে সমাজ এবং সংসারকে নিজদের হাতের মুঠোয় নিয়ে গেছে তারা।
একসময় উপমহাদেশের সংস্কৃতি ছিল পারস্পরিক বিশ্বাস আর বন্ধনের সংস্কৃতি।নিজের আবহমান ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটা নির্মল সংস্কৃতি।সংস্কৃতি বিষয়টি মাথায় আসলেই আমাদের মনে হয় শুধু নাটক সিনেমা।কিন্তু তা শুধু নাটক সিনেমাই না,একটা সামগ্রিক বিষয়ের সমন্বয় হল সংস্কৃতি।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘কমল হীরের পাথরটাকে বলে বিদ্যে আর তা থেকে যা ঠিকরে বেরোয়, তাকে বলি কালচার।’ অর্থাৎ সংস্কৃতি সেই আলো যা চেনায় স্বরূপকে।
মোতাহের হোসেন চৌধুরি বলেছেন, ‘সংস্কৃতি মানে বাঁচা, সুন্দরভাবে বাঁচা।’
আর ড. আহমদ শরীফ সংস্কৃতির সংঙ্গার্থ দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘পরিশীলিত ও পরিশ্রুতি জীবনচেতনাই সংস্কৃতি।’
সংস্কৃতিকে বিষদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন দু’জন নৃবিজ্ঞানী ক্লাইড ক্লাকহোন এবং উইলিয়াম কেলি। তাঁরা বলেছেন :
all those historically created designs for living, explicit and implicit, rational, irrational and non-rational which exit at any time as potential guides for the behaviour of men ।
লেখক পবিত্র সরকার সংস্কৃতিকে ব্যাখ্যা করেছেন দু’টি স্তরে বিন্যস্ত করে। তিনি বলেছেন, জীবনের অন্তর্গত সকল বিষয়-কর্ম-চর্চা-সাধনা প্রভৃতিই হচ্ছে সংস্কৃতি। সেটা হতে পারে বস্তুগত কিংবা অবস্তুগত। বস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে রয়েছে “আমাদের খাদ্যদ্রব্য ও তার উপাদান, আমাদের পোশাক-আশাক, আমাদের আবাস ও গৃহস্থালির নানা উপকরণ (চেয়ার-টেবিল, খাট, আলো, মাদুর, সোফা, বালতি-বাসন ইত্যাদি), আমাদের পথঘাট, যানবাহন চিকিৎসাব্যবস্থার উপকরণ (ঔষুধপত্র, এক্স-রে মেশিন, আলট্রা সোনোগ্রাফির যন্ত্র ইত্যাদি)।” অর্থাৎ যা প্রত্যক্ষ, যাকে স্পর্শ করা যায়, যার আকার-আকৃতি আছে, সেগুলোই বস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে। আর অবস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে রয়েছে নাচ, গান, অভিনয় প্রভৃতি। এগুলোকে দেখা যায়, শোনা যায় এবং অনুভব করা যায়।
সাংস্কৃতিক এই সমস্ত বিষয় যখন যেভাবে স্থান পায় সমাজের চিত্র তখন সেভাবে প্রতিফলিত হয়।
পশ্চিমা পোশাক আর ভাষার মাধ্যমে প্রথমে উপমহাদেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন শুরু হল।যার ফলে মানুষ দল উপদলে ভাগ হতে থাকলো।আর তখনই ধর্মের প্রশ্ন চলে আসলো।হিন্দু মুসলমান তো বটেই,হিন্দু মুসলমান নিজদের মধ্যেও অনেক ভাগে বিভক্ত হতে লাগলো।এই বিরোধ আস্তে আস্তে আরও বড় হতে থাকলো।হিন্দুরা যখন তাদের সমস্ত বিদ্যাকে উল্টে পাশ্চাত্যের বিদ্যায় দীক্ষিত হয়ে গেলো তখন আকাশ সংস্কৃতিতে তাদের দ্বারা ভিন্নধারা যুক্ত হতে হতে একসময় অচ্ছুত বাইজীদের শিল্পী ঘোষণা করা হল যা আবহমান উপমহাদেশের সংস্কৃতির গায়ে চাপিয়ে দেয়া শুরু হল।ক্রমান্বয়ে সিনেমায় অযাচিত ভালোবাসা আর শুত্রুতা এবং কুটনামি ঢুকিয়ে দেয়া হল।আস্তে আস্তে ধর্মীয় গোত্রীয় কলহ জুড়ে দেয়া হল।সংসার ভাঙ্গনের সুর ধরিয়ে দেয়া হল।
পাশ্চাত্যও থেমে নেই।কার্টুন এবং গেমসের নামে,ডিজে এবং নানা আধুনিকতার নামে নেশাকে এবং যুদ্ধ বিগ্রহ আর উন্মাদনাকে আরও শানিত করে বাচ্চাদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেয়া হল।
ভারতীয় আকাশ সংস্কৃতি উপমহাদেশের চিরায়ত পারিবারিক বন্ধন ভেঙ্গে খান খান করার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিতে মদদ দেয়া শুরু করলো।
বাংলাদেশের বিগত দিনগুলোর প্রত্যেকটা নাটক শুধুমাত্র ভালোবাসার নামের প্রেমের ছড়াছড়ি।বিষয়টা এতোই ভয়ঙ্কর যে জীবন মানেই প্রেম আর প্রেম মানেই জীবন এমনটাই যেন হয়ে গেছে পৃথিবী।
সমাজে এঁর প্রভাব পড়েছে ব্যাপক।ছেলে মেয়েরা প্রেমকে একমাত্র জীবনের লক্ষ্য স্থির করেছে আর এঁর জন্য প্রয়োজনীয় কর্মকে সম্পাদন করতে কেউ ধর্ষণ,কেউ খুন,কেউ ইভটিজিং,কেউ অপহরণ আর কেউ বা এঁর জন্যই চাকুরী খুঁজছে।
খবর এবং সাহিত্যে প্রতিদিন একজন মুসলিম নামধারীকে সন্ত্রাসী সাজিয়ে যখন উপস্থাপন করা হয় যে কেউ বিশেষ করে শিশুরা এই বিষয়কে মাথায় ঢুকিয়ে নেয় যার কারণে মুসলিম বিদ্বেষী মানুষের সংখ্যাও যেমন বাড়ছে তেমনি পালটাপালটি ধ্বংসের নামে উগ্রবাদিতা ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ানকভাবে।
পোশাক পরিচ্ছদ বা রূপ গুনে নগ্নতা এবং অশালীনতার ধারনাকে উন্নত ধারনা প্রমাণ করে যে ম্যাসেজ দেয়া হচ্ছে তাতে মানুষ সমাজে পশুর রূপ ধারণ করছে।যার প্রমাণ হিসেবে ধর্ষণ এবং শ্লীলতাহানিতার রেকর্ড শত গুন আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘুষ এবং দুর্নীতি করে মানুষ কত সুখে আছে,বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় ক্ষমতার যে মজা এসব জিনিষ সাহিত্যের পাতা থেকে খবরের পাতায় তুলে ধরে মানুষের মনের মধ্যে অন্যায়ের খায়েশ জাগিয়ে দিয়ে সমাজকে অস্থিতিশীল করে তুলা হচ্ছে।
নিউ ইয়ার,ভ্যালেন্টাইন ডে বা নববর্ষের নামে অশালীনতাকে বাধ্যতামূলক করে আদি আচার থেকে মানবজাতিকে বিমুখ করে ফেলা হচ্ছে।যার কারণে এসব দিনগুলোতে উদ্ভট পাগলামি করার জন্য যেনতেন অস্থিতিশীলতা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে যাচ্ছে।আত্মহত্যা বা খুন এরকম ঘটনা গুলোও ঘটছে।
সমাজের প্রতিটি ঘটনার সাথেই অপসংস্কৃতির আগ্রাসন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
যুদ্ধ বিগ্রহ বা অস্ত্রের ঝনঝনানি এসব নয় শুধুমাত্র সংস্কৃতিকেই সঠিক অবস্থানে আনার মাধ্যমে সমৃদ্ধি আর সুখের বিপ্লব করা সম্ভব।অন্যথায় নানা চুক্তি আর নানা পদক্ষেপ যতই নেয়া হউক না কেন অন্যের হাতে ব্রেইনের রিমোট রেখে তাকে দেশ ও জাতির কল্যাণে ব্যাবহার কোনভাবেই সম্ভব না।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×